Palestine Israel war

যোগাযোগ বন্ধ করে গাজায় ভয়াবহ হামলা

আন্তর্জাতিক

রাষ্ট্রসঙ্ঘের সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব ও কাতারে শান্তির লক্ষ্যে আলোচনাকে নস্যাৎ করে শুক্রবার রাত থেকে ইজরায়েল আক্রমণ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এযাবৎ সবেচেয়ে বেশি বিমান হানা, বোমাবর্ষণ, নতুন ধরনের বোমায় গাজার বিপুল অংশকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইজরায়েলী সেনারা গাজার ভূখণ্ডেও ঢুকেছে। ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণ চলছে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানিয়েছেন, ‘যুদ্ধ পরবর্তী স্তরে প্রবেশ করেছে। ইজরায়েলের সেনারা উত্তর গাজায় রয়েছে। গাজায় ভূমিকম্প হচ্ছে। মাটির ওপরে ও মাটির নিচে আমরা আক্রমণ করছি। এই আক্রমণ চলতে থাকবে।’ হামাস জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারাও জবাব দিচ্ছে। ইজরায়েলী আগ্রাসনের মোকাবিলায় তারা তৈরি। 
শুক্রবার রাতে ইজরায়েল গাজার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রায় পুরোই ধ্বংস করে দিয়েছে। অন্ধকারে ডুবে যায় গাজা। টেলিফোন, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। ইজরায়েলী বোমায় হতাহতদের সন্ধান মিলছে না। হাসপাতাল বা অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। শুক্রবার গোটা রাত ধরেই ইজরায়েলের তরফে একটানা বোমাবর্ষণ হয়েছে। অন্ধকার ও যোগাযোগহীন করায় ইজরায়েলের আক্রমণের বিশদ সংবাদও বিশ্ববাসী জানতে পারছেন না। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র দাবি করেছেন, যুদ্ধের জন্য তা প্রয়োজন ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থার তরফেও জানানো হয়েছে, গাজায় তাদের কর্মীদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই। ইতিমধ্যে শরণার্থী সংস্থার ৫৩জন কর্মী নিহত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গাজার হাসপাতাল সামর্থ্যের বাইরে কাজ করছে। এখন আর নতুন রোগীর চিকিৎসা করার মতো জায়গাতেও তারা নেই। হাজার হাজার মানুষ হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই আশ্রয় নিয়েছেন। শুক্রবার বিকাল পর্যন্তই ৬লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্কুলগুলিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই সংখ্যা শনিবার আরও বেড়েছে। 
গাজায় মৃতের সংখ্যার সঠিক হিসাব পাওয়া এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৭৭০০ জনের নাম পাওয়া গেলেও প্যালেস্তাইন সূত্রের খবর, অন্তত ১৬০০ মানুষ ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে রয়েছেন। 
বিশ্ব জুড়ে ইজরায়েলী আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরালো হয়েছে। গাজায় শুক্রবার রাতে হামলার খবর পেয়ে রামাল্লা ও নাবুলাসে রাতেই বিশাল মিছিল বের হয়। অধিকৃত এলাকায় কয়েকশত লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কে ইহুদিরা যুদ্ধের বিরুদ্ধে বড় আকারে বিক্ষোভ দেখান। ‘নট ইন মাই নেম’ স্লোগান দিয়ে তাঁরা ইজরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩০০-র বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার লন্ডনে ৫ লক্ষ মানুষের মিছিল হয়েছে। রোমেও বিরাট মিছিল বেরোয়। তুরস্কে তীব্র ইজরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। দেশের রাষ্ট্রপতি রেসিপ এরদোগান এদিন সরাসরি বলেছেন, ইজরায়েল উন্মাদের মতো আচরণ করছে। হামাস কোনও সন্ত্রাসবাদী শক্তি নয়। এই মন্তব্যের পরে ইজরায়েল তুরস্ক থেকে তাদের কূনীতিকদের তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 
অন্যদিকে, ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি সাংবাদিক সম্মেলনেই জানিয়ে দেন, ইজরায়েলের জন্য কোনও লক্ষণরেখা টেনে দেয়নি আমেরিকা। প্রথম দিন থেকেই আমেরিকা তাদের সঙ্গে রয়েছে, সেই সমর্থন বহাল থাকবে।

Comments :0

Login to leave a comment