Maharashtra Journalist

শিন্ডের সমালোচনা করায় মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত সাংবাদিক

জাতীয়

Maharashtra Journalist

নাবালিকার ধর্ষণ ও খুনের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন। নির্যাতিতার পরিবার যেন সুবিচার পায়, সেই লড়াইয়েও নামেন তিনি। নিজের কলমকেই হাতিয়ার বানান। ফলে প্রশ্ন উঠে যায় মহারাষ্ট্রের বিজেপি-শিবসেনা (শিন্ডে) জোট সরকারের বিরুদ্ধে। সরাসরি প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের অপশাসন নিয়ে। সেই ‘অপরাধে’ই মহারাষ্ট্রে মার খেতে হলো সাংবাদিককে। জলগাঁওয়ে সম্প্রতি এমনই নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বিধায়ক শিবসেনা নেতা কিশোর পাতিলের গুন্ডাবাহিনীই ওই সাংবাদিককে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন তাঁরা। বলেছেন, মহারাষ্ট্রের মণিপুর হতে আর বেশি দেরি নেই।

এক আঞ্চলিক সংবাদপত্রে কাজ করেন আক্রান্ত সাংবাদিক সন্দীপ মহাজন। কয়েকদিন আগে পাচোরায় আট বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করেছে ধর্ষকরা। সেই বিষয়েই খবর লেখেন ওই সাংবাদিক। মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন কড়া ভাষায়। সেই লেখা ছেপে বেরতেই গুন্ডাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়েন তিনি। শুধু মারধরই নয়। বিধায়কের অশ্রাব্য গালিগালাজও শুনতে হয়েছে তাঁকে। সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি অডিওতে শোনা যাচ্ছে, বিধায়ক পাতিল অশালীন ভাষায় কথা বলছেন ওই সাংবাদিকের সঙ্গে। তা আবার স্বীকারও করেছেন বিধায়ক। সংবাদসংস্থা পিটিআই বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করে নেন, তিনি সাংবাদিককে অশালীন কথা বলেছেন। জোরের সঙ্গে বলেন, ‘‘কারণ ছিল তাই বলেছি।’’ তবে স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় তিনি যুক্ত নন বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি কখনোই এই হামলাকে সমর্থন করি না। যখন আক্রমণ হয় তখন আমি মুম্বাইয়ে। এসব কিছু জানি না।’’

রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ার এবং শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ সঞ্জয় রাউত এই হামলার নিন্দা করে অভিযোগ করেন বিধায়কের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ার বলেন, ‘‘একজন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করে আক্রান্ত হচ্ছেন বিধায়কের গুন্ডাদের মারে। বিধায়ক এবং তাঁর সরকারের ঔদ্ধত্যের জবাব দেবে জনতাই। একজন সাংবাদিকের কন্ঠরোধ করতে যদি মারধর করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী এই রাজ্যের?’’ কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাহস আছে পাতিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার? সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রও ধীরে ধীরে মণিপুরের দিকে এগচ্ছে। রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ অবস্থায়।’’ এনসিপি নেত্রী লোকসভা সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কতটা অগণতান্ত্রিক পরিবেশ না হলে একজন বিধায়ক গুন্ডা পাঠান সাংবাদিককে মারধর করতে? প্রশ্ন করার অধিকার আছে সাংবাদিকের। সেই অধিকার ছিনিয়ে নিতে এভাবে আক্রমণ করা হবে? অত্যন্ত দুঃখজনক এবং গুরুতর ঘটনা এটি। এমন আক্রমণের পরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী চুপ করে বসে আছেন কী করে? এই গুন্ডাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে সরকার? প্রসঙ্গত, সাংবাদিকের অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের হয়েছে তিন-চারজনের বিরুদ্ধে। কিন্তু অভিযুক্তদের এখনই যাতে গ্রেপ্তার না করা হয়, তেমন ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। 
শিবসেনা ভেঙে একনাথ শিন্ডের গোষ্ঠীকে নিয়ে বিজেপি জোট সরকার গঠন করে মহারাষ্ট্রে। তারপর থেকে ধর্ষণ, পিটিয়ে খুনের ঘটনা একের পর এক হয়েই চলেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার উপযুক্ত কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। উলটে প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রীর কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মার খেতে হলো সাংবাদিককে।

Comments :0

Login to leave a comment