LPG KYC

সিলিন্ডার পেতে হলে কেওয়াইসি দিতে হবে, বলেছেন ডিলাররা

রাজ্য

 রান্নার গ্যাসের ডিলারদের দোকানগু‍‌লিতে সকাল থেকেই লম্বা লাইন। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া ফতোয়ার ফলে গ্যাস সিলিন্ডার গ্রাহকদের ডিলারের কাছে গিয়ে আধার তথ্য এবং বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হচ্ছে ভরতুকি চালু রাখার জন্য। এর ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা। ইন্ডিয়ান ওয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম, এই তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন কোম্পানি এক‍‌যোগে ডিলারদের মাধ্যমে এই কাজ শুরু করে দিয়েছে গোটা দেশে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। কাজটি করার জন্য এই তিনটি কোম্পানি নিজস্ব সার্ভার এবং সফটওয়ার তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে ডিলাররা কাজটি করছেন।
ডিলারদের বক্তব্য, কাজটি অনেকটা পেনশনভোগীদের ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ জমা দেওয়ার মতো। একজন পেনশনভোগীকে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে তিনি জীবিত আছেন কিনা এটা প্রমাণ করার জন্য ব্যাঙ্কে বা পোস্ট অফিসে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। তবেই সংশ্লিষ্ট পেনশনভোগী নিয়মিত পেনশনের টাকা পেতে থাকেন। গ্যাস সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেও অনেকটা সেইরকমই ব্যবস্থা চালু করল কেন্দ্রীয় সরকার। ভরতুকির টাকা পেতে গেলে গ্রাহককে তাঁর নিজের আধার কার্ড, গ্যাসের বই নিয়ে ডিলারের কাছে আসতে হবে। শুধু আধার কার্ড দিলেই হবে না, আধারের মধ্যে থাকা বায়োমেট্রিক তথ্যের যাচাই হবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকের আঙুলের ছাপ দিয়ে। যদি মিলে যায়, তাহলেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহক গ্যাসের ভরতুকি পাবেন। ডোমেস্টিক গ্যাসের জন্য এখন ভরতুকি দেওয়া হয় ১৯ টাকা ৫৭ পয়সা, আর ‘উজ্জ্বলা’ গ্যাসের ক্ষেত্রে সিলিন্ডার প্রতি ৩০০ টাকা। ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার লিমিটেড (ডিবিটিএল) নামে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা এই ভরতুকির বিষয়টি দেখে। আশ্চর্যের বিষয় হলো ডিপিটিএল’র ওয়েবসাইটে গেলে কোনও যোগাযোগের নম্বরও নেই, নেই কোনও আধিকারিকের নাম।
সামগ্রিক এই প্রক্রিয়ার মধ্যে গ্রাহকদের মধ্যে মূলত দুটি প্রশ্ন গুরুতরভাবে উঠতে শুরু করেছে। আধার এবং বায়োমেট্রিক তথ্য, যা ডিলারদের কাছে গ্রাহকরা দিচ্ছেন তা কতটা নিরাপদ। দ্বিতীয়ত, কোনও গ্রাহক যদি গ্যাসে ভরতুকি না চান এবং সেই কারণে আধার ও বায়োমেট্রিক তথ্য ডিলারের কাছে না  জমা দেন সেক্ষেত্রে কি সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের গ্যাস সিলিন্ডারটি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে? উত্তর কলকাতার আহিরীটোলার একজন ডিলার এই প্রশ্নে জানালেন, গ্রাহকের দেওয়া তথ্যগুলি নিরাপদে রাখার দায়িত্ব কোম্পানিগুলির। আমরা কাজটি করার জন্য ওদের সার্ভার এবং সফটওয়ার ব্যবহার করছি মাত্র। দ্বিতীয়ত, রান্নার গ্যাস এখন মানুষের দৈনিক জীবনে অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে পড়ে। তার সরবরাহ কিভাবে বন্ধ করা যাবে! বড়জোর সাময়িক সরবরাহ বন্ধ করে গ্রাহককে বলা হবে, ‘কেওয়াইসি’ জমা দিতে। কেওয়াইসি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নামেই গ্যাসের কানেকশন এবং তিনি জীবিত রয়েছে। যদি তা প্রমাণিত না হয়, তাহলে পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের নামে সংযোগটি পরিবর্তন করতে হবে অথবা নতুন করে গ্যাসের কানেকশন নি‍‌তে হবে।
ডিলারদের বক্তব্য, আধার কার্ড এবং বায়োমেট্রিক তথ্য দেওয়ার প্রশ্নে বয়স্ক এবং অতিবয়স্ক গ্রাহক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বাড়ি বাড়ি গি‍‌য়ে কাজটি করার একটা আলোচনা চলছে। যদিও লিখিত নির্দেশ আকারে কিছু এখনও আসেনি। এই কাজটি করতে গেলে ডেলিভারি ম্যানদের সাহায্য নেওয়া হতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো তাঁদের সকলের কাছে উন্নতমানের অ্যানড্রয়েড ফোন নেই, যাতে এই সফটও‌য়ারটি আপলোড করা যেতে পারে। ডেলিভারি ম্যান বা লাইনম্যানরা সাধারণভাবে কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করেন। এই কাজটি করার জন্য তাঁরা কোনও অতিরিক্ত টাকা পয়সাও পাবেন না, ফলে অনেকেই এই কাজটি করতে চাইছেন না। আবার অনেকের যুক্তি, কাজটি করতে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগবে। রাস্তায় সিলিন্ডার ভর্তি ভ্যান রেখে  দোতলা বা তিনতলায় উঠে কাজটি করতে গেলে গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার চুরির ভয় পাচ্ছেন অনেকে।
ডিলারদের আরও বক্তব্য, বহু গ্রাহক এখনও বিষয়টি জানেন-ই না। গ্যাসের কানেকশন আছে, কিন্তু গ্রাহক দূরে থাকেন বা অন্যত্র চলে গেছেন। অনেকে আছেন খুব অসুস্থ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আধার লিঙ্ক করতে না পারলে তাঁদেরও ভরতুকি বন্ধ হয়ে যাবে। আবার অনেক গ্রাহক আছেন যাঁদের আধার কার্ডের ঠিকানা এক জায়গায়, গ্যাসের সংযোগ রয়েছে অন্য একটি ঠিকানায়। এই ধরনের গ্রাহকরা যখনই ডিলারের কাছে এসে আধার কার্ড এবং বায়োমেট্রিক তথ্য লিঙ্ক করাবেন তখনই আধার কার্ডেরই ঠিকানা নথিভুক্ত হয়ে যাবে। এরপর থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক যখনই গ্যাস বুক করবেন, তার পক্ষে গ্যাস সিলিন্ডার এতদিন যে ঠিকানায় পেতেন সেখানে পেতে অসুবিধা হবে।

Comments :0

Login to leave a comment