শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের বোর্ডসভাতে আশাকর্মীদের স্বার্থে বাম মহিলা কাউন্সিলারের আনা রেজুলেশন ‘কর্পোরেশনের বিষয়’ নয় বলে অগ্রাহ্য করলেন চেয়ারম্যান। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিয়ম না মেনে অগণতান্ত্রিকভাবে বোর্ড পরিচালনার অভিযোগ তুলে বোর্ডসভা থেকে ওয়াকআউট করলেন বামপন্থী কাউন্সিলাররা। বুধবার শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের ১৭তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সভা চলাকালীন পৌর কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ডের সিপিআই(এম)’র মহিলা কাউন্সিলার মৌসুমী হাজরা শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের কর্মরত আশাকর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয় নিয়ে রেজুলেশন আনেন। কিন্তু রেজুলেশন আনা মাত্রই তা গৃহীত হয়নি বলে চেয়ারম্যান জানান। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বামপন্থী কাউন্সিলাররা। সভার মাঝেই সভা থেকে ওয়াকআউট করেন তারা।
শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনে তিন শতাধিক আশাকর্মী কর্মরত আছেন। কর্মরত আশাকর্মীরা মা ও বাচ্চাদের জন্য ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছেন। কিন্তু সেই আশাকর্মীরা যখন গর্ভবতী হচ্ছেন সেই সময়ে তারা কোন ছুটি পাচ্ছেন না। গর্ভবতী অবস্থাতেও আশাকর্মীদের কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। আশাকর্মীরা যাতে অন্য কর্মীদের মতোই মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতে পারেন সেই বিষয়ে বোর্ড সভাতে দলমত নির্বিশেষে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে রাজ্য সরকারের অনুমোদনের জন্য বোর্ড সভাতে সিদ্ধান্ত নেবার লক্ষ্যে রেজুলেশন এনেছিলেন সিপিআই(এম) কাউন্সিলার মৌসুমী হাজরা। সময় অনুযায়ী ৪৮ঘন্টা আগেই গত ২৬জুন রেজুলেশন জমা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু কোন কারন যুক্তি দিয়ে লিখিতভাবে না জানিয়েই চেয়ারম্যান বোর্ডসভাতে রেজুলেশনকে অগ্রাহ্য করেন।
অগণতান্ত্রিকভাবে গায়ের ও মেজরিটির জোর খাটিয়ে আইন না মেনে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বোর্ড সভা পরিচালনার অভিযোগ তুলে এদিন সিপিআই(এম) কাউন্সিলার নুরুল ইসলাম এদিন বলেন, যারা মানুষকে সচেতন করছেন তারাই মাতৃত্বকালীন ছুটি পাচ্ছেন না। বোর্ড সভাতে সর্বসম্মতিক্রমে আশাকর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটির আওতাভুক্ত করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানোর জন্য রেজুলেশন আনা হয়েছিলো। চেয়ারম্যানের বক্তব্য এটা কর্পোরেশন রিলেটেড নয়। আশাকর্মীরাও কর্মচারী। কর্পোরেশনে কাজ করছে। তিন শতাধিক আশাকর্মী রয়েছে। কর্পোরেশন থেকে তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। এই আবেদন রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হলেও কি অপরাধ হত। রাজ্য সরকার অনুমোদন করবে কিনা সেটা সরকারের বিষয়। কিন্তু রেজুলেশনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াই যেত। শুধু তাই নয়, চেয়ারম্যান বোর্ডসভার লিস্টে রেজুলেশনের কোন উল্লেখই করেননি। চেয়ারম্যানের জানানো উচিৎ ছিলো কেন রেজুলেশন গৃহীত হয়নি। আর রেজুলেশন গৃহীত না হওয়ার পেছনে বোর্ডসভাতেও চেয়ারম্যান কোন সঠিক যুক্তি দিতে পারেননি। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান পদ নিরপেক্ষ হওয়া উচিৎ। কিন্তু বর্তমান কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের কোন নিরপেক্ষতা নেই। চেয়ারম্যান তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা হিসেবে বোর্ড পরিচালনা করছেন।
মৌসুমী হাজরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বোর্ড সভা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ম রয়েছে। বামপন্থী কাউন্সিলারদের কন্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরাও থামব না। শিলিগুড়িবাসীর স্বার্থে আমরা কথা বলবই। এছাড়াও এদিন শহরের পানীয় সমস্যার সমাধানে নতুন জল প্রকল্প, অবৈধ নির্মান প্রসঙ্গেও এদিন সরব হন বাম কাউন্সিলাররা। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম)’র আরো দুই কাউন্সিলার জয় চক্রবর্তী ও দীপ্ত কর্মকার।
Comments :0