Left front

প্রশাসন দায়িত্ব না নিলে মানুষই নেবে, জানিয়ে দিল বামফ্রন্ট

রাজ্য

পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্বে পুলিশ প্রশাসনের মদতে শাসক দলের হিংসাত্মক হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ আছড়ে পড়ল কলকাতায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের সামনে। এদিন বিকালে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বামফ্রন্ট কর্মীরা কয়েক ঘণ্টা ধরে তীব্র বিক্ষোভ দেখান কমিশনের দপ্তরের গেটে। বামফ্রন্টের সভাপতি বিমান বসু নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়ে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশনারকে বলে এসেছি, চোখে ঠুলি আর কানে তুলো গুঁজে বসে থাকবেন না। সাংবিধানিক চেয়ারের মর্যাদা রক্ষা করুন।
বিক্ষোভ জমায়েতে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মানুষ জাগছে দেখে চোরেদের বুক ধুকপুক করছে। তাই পুলিশের কাছে নির্দেশ গেছে যে কোনোভাবে বিরোধীদের রুখতে হবে। একদিকে ছাদের ওপর থেকে, কালভার্টের নিচ থেকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা গুলি চলাচ্ছে, আর একদিকে পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে আর কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছে বিরোধীদের লক্ষ্য করে। হাইকোর্টের নির্দেশেও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। পুলিশের সামনেই চোপড়া, ভাঙড়, ক্যানিং সহ আরও কিছু জায়গায় হিংসাত্মক হামলা হয়েছে মনোনয়নপত্র জমায় বাধা দিতে। আমরা শাসক দলকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই, গ্রাম কিন্তু জাগছে। মানুষ চুপ করে থাকবে না। এখনও সময় আছে আইন মেনে চলুন। নাহলে আমরা এই শাসনের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকব। 
সেলিম বলেছেন, কাঠের পুতুলকে বসানো হয়েছে কমিশনের মাথায়, যাঁর কাছ থেকে কোনও সুবিচারের আশা বৃথা। এখন যে সমস্ত অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, তার সব দায় প্রশাসন এবং কমিশনের। মাঠে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ লড়াই কিন্তু  ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। রেহাই পাবে না নবান্ন। 
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা ঠেকাতে তৃণমূলের হামলা, গুলি চালিয়ে বিরোধীদের খুন করা এবং পুলিশের নিস্ক্রিয়তার প্রতিবাদে এদিন বামফ্রন্টের ডাকে কলকাতার নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের সামনে জমায়েত করে নির্বাচন দপ্তর ঘেরাও করেন বামপন্থী কর্মীরা। জমায়েত স্থলে ব্যাপক সংখ্যায় পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করতে দেখা যায় প্রশাসনকে। প্রথমে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে স্রোতের মতো বিক্ষোভকারীদের আসা ঠেকানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু ব্যারিকেড ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বিক্ষোভকারীরা কমিশনের দপ্তরের গেটের সামনে জমায়েত করেন। এই সময় পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে ব্যাপক ধাক্কাধাক্কিও হয় বিক্ষোভকারীদের। পুলিশ প্রিজন ভ্যান আনার চেষ্টা করলে সেটাকেও হঠিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ শেষপর্যন্ত বিক্ষোভ চলতে দিলে পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হয়। বামফ্রন্টের বিক্ষোভসভা চলাকালীন সেখানে পৌঁছন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। ছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্বও।
সভায় আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী বলেন, পুলিশ প্রশাসন মুখে অনেক কথাই বলছে কিন্তু কাজে তৃণমূলের দলদাসের মতো আচরণ করছে রহস্যজনক কারণে। সেই রহস্য যে কী তা এতদিনে বুঝে ফেলেছেন গ্রামের মানুষ। ভাঙড়ে গুলিবৃষ্টি হয়েছে, আমাদের কর্মী খুন হয়েছেন। চোপড়ায় গুলি, বোমা চলেছে, ক্যানিং-এও একই অবস্থা। নির্বাচন কমিশন কী করছে? আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাই, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। একথাই বলতে আজকে এখানে এসেছি। 
সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে দুষ্কৃতীদের শাসন চলছে। তৃণমূল যেখানে জিততে পারবে না সেখানে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দিচ্ছে না, সন্ত্রাস করছে। অনেক জায়গায় দলীয় কোন্দলে তৃণমূলই প্রার্থীর নাম ঘোষণা পর্যন্ত করতে পারেনি, এখন গোপনে নাম পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কমিশনে। এসবের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আরও জোরদার লড়াই চলবে। এদিন নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভসভা পরিচালনা করেন সংগ্রাম চ্যাটার্জি। বক্তব্য রাখেন সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, আরএসপি নেতা তপন হোড় প্রমুখ। 
বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে কমিশনকে স্মারকলিপি দেওয়ার পরে সাংবাদিকরা বিমান বসুকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন, পরপর কয়েকদিন ধরে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে, নির্বাচন কমিশন চুপ করে বসে আছে। কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমরা বলে এসেছি, সাংবিধানিক পদে বসেও আপনার হাত পা বাঁধা কেন? চেয়ারের মর্যাদা রাখুন। বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমায় বাধা দিতে বোমা গুলি চলছে, মানুষ খুন হয়েছেন। এরপর তো মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর্ব রয়েছে, প্রচার এবং ভোটগ্রহণ এবং গণনার পর্ব রয়েছে। জোর করে ভয় ভীতি দেখিয়ে প্রার্থী প্রত্যাহার করায় তৃণমূল। কমিশন এরকম নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকলে তাতে তো অশান্তি আরও বাড়বে। আমরা কমিশনারকে বলেছি, নির্বাচন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ করার জন্য আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? অশান্তি হলে আমরা আবারও আসবো। শাসক দলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে হইচই হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনার যেন চোখে ঠুলি আর কানে তুলো গুঁজে বসে না থাকে। 
বিমান বসু মানুষের কাছে আবেদন করেছেন, জনগণকেই দায়িত্ব নিতে হবে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই দুষ্কৃতীদের হাত থেকে গ্রাম বাংলার গণতন্ত্রকে পুণরুদ্ধার করতে। এদিন বামফ্রন্টের প্রতিনিধিদলে বিমান বসু ছাড়াও ছিলেন সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, সিপিআই(এম) নেতা সুখেন্দু পানিগ্রাহী, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, আরএসপি’র রাজ্য সম্পাদক তপন হোড়, আরসিপিআই নেতা সুভাষ রায়, এমএফবি নেতা আশিস চক্রবর্তী, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা শিবনাথ সিনহা, বলশেভিক পার্টির নেতা প্রবীর ঘোষ। 
বামফ্রন্টের স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, শাসক দলকে সুবিধা দিতে গিয়ে গণতন্ত্রকে সঙ্কুচিত করেছে কমিশন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে পঞ্চায়েতের তিন স্তরে ৭৩৮৮৭ আসনে মনোনয়নের সূচি লক্ষাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। প্রথম দু’দিন প্রায় সর্বত্র প্রশাসনিক প্রস্তুতিহীনতা, তারপরে পুলিশের নাকের ডগায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে দুষ্কৃতী জমায়েত করে বিডিও এবং এসডিও অফিসের বাইরে হামলা, গুলি বোমার ব্যবহার এবং প্রাণহানিও ঘটেছে। বামফ্রন্টের দাবি, বিডিও অফিসে যেতে না পারা প্রার্থীরা যাতে এসডিও অফিসে এবং প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনে সরাসরি মনোনয়ন জমা দিতে পারেন তার বিকল্প ব্যবস্থার দাবি আরও যুক্তিসঙ্গত হয়ে উঠেছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারে ভয় ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে কমিশনের উপযুক্ত পদক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। সমস্ত মনোনয়ন কেন্দ্রের ভিডিও রেকর্ডিং নির্বাচন কমিশন দপ্তরে জমা করার, ভোটদাতা ও ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রতিটি বুথে ওয়েব ক্যাম চালু করা ইত্যাদির দাবি করে বামফ্রন্ট বলেছে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

Comments :0

Login to leave a comment