Lightning Strikes Malda

মালদহে বাজ পড়ে মৃত ১২, মুর্শিদাবাদে ১

রাজ্য জেলা

উৎপল মজুমদার: মালদা

মালদায় মর্মান্তিক ঘটনা। একজন দুজন নয়, একেবারে ১৩ জনের মৃত্যু বাজ পড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ ঝড় বৃষ্টিতে মালদা ও মুর্শিদাবাদে। মালদার পৃথক কয়েকটি থানা এলাকায় বাজ পড়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছে দুইজন। মুর্শিদাবাদে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। মালদায় মৃতদের মধ্যে দুইজন স্কুল ছাত্র রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাদের বাড়ি মানিকচক থানা এলাকায়। মৃতদের মধ্যে রয়েছে ৮ এবং ১১ বছর বয়সী দুইজন নাবালকও। মৃতদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর এলাকায়। দুইজনের বাড়ি গাজোল থানার আদিনা এবং রতুয়া থানার বালুপুর এলাকায়। দুই জনের বাড়ি ইংলিশ বাজার এলাকায়। মানিকচক এলাকার বাসিন্দা ৩ জন। হরিশ্চন্দ্রপুর একালার বাসিন্দা ছিলেন একজন। ময়না তদন্তের জন্য দেহগুলি মালদা মেডিকেল কলেজের মর্গে আনার ব্যবস্থা করে পুলিশ। এদিন বাজ পড়ে ইংরেজবাজারের শোভানগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাঁ এক যুবক ও এক মহিলার মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছে পুরাতন মালদা ও মানিকচকে ৩ জন করে। এছাড়াও ইংরেজবাজার ও হরিশ্চন্দ্রপুরে মৃত্যু হয়েছে ২ জন করে। গাজোল ও রতুয়ায় মারা গিয়েছেন ১ জন করে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম চন্দন সাহানি(৪০), রাজ মৃধা (১৬), মনোজিৎ মণ্ডল (২১), অসিত সাহা (১৯) এবং সুমিত্রা মন্ডল (৪৬), পঙ্কজ মণ্ডল (২৩), নয়ন রায় (২৩), প্রিয়াঙ্কা সিংহ রায় (২০), রানা শেখ (৮), অতুল মণ্ডল (৬৫) এবং সাবরুল শেখ (১১)। প্রথম তিনজনের বাড়ি পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর এলাকায়। পরের দুইজনের বাড়ি গাজোল থানার আদিনা এবং রতুয়া থানার বালুপুর এলাকায়। হরিশ্চন্দ্রপুরের নয়ন রায় প্রিয়াঙ্কা রায় এই দম্পতি জমিতে পাটের চাষ করার সময় বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন। চন্দন, রাজ এবং মনোজিৎ আম বাগানে আম কুড়োতে গিয়েছিলেন। অতুল মণ্ডল আম বাগান দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। বাজ পড়ে আহত হয়েছেন ফাতেমা বিবি (৩৫) এবং দুলু মণ্ডল (৪৫)। এদের বাড়ি ইংরেজবাজার থানার বুধিয়া এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত অসিত সাহা এবং রাজ মৃধা দুজনেই দশম এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্র। একজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
মৃত মনোজিৎ মন্ডলের দাদা সঞ্জীব মন্ডল জানিয়েছেন, ‘‘এদিন দুপুরে তাঁর ভাইসহ তিনজন ভাটরা এলাকার ধানের জমিতে কাজ করছিলেন। বৃষ্টির জন্য তাঁরা একটি গাছের তলায় আশ্রয় নেয়। সেই সময় ঝড় বৃষ্টির মধ্যে আচমকা বাজ পড়লে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তার ভাই সহ তিনজনের। 
গাজোলের আদিনা এলাকায় আম বাগান দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে একাদশ শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া অসিত সাহার। জমিতে ধান কাটার সময় আচমকায় ঝড় বৃষ্টিতে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়, রতুয়া থানার বালুপুর এলাকার গৃহবধূ সুমিত্রা মন্ডলের। আহতদের চিকিৎসা চলছে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সকাল থেকে প্রচন্ড গরমের পর দুপুরে হঠাৎই আকাশ কালো করে ঝড় বৃষ্টি নামে। তখনই বাজ পড়ে ঘটে মৃত্যুর ঘটনা। 
এদিন মুর্শিদাবাদের পাঁচগ্রামে বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। আহত হয়েছেন ৩ জন। মৃত ব্যক্তির নাম শ্রীমন্ত ঘোষ। পাঁচগ্রাম ঘোষপাড়ার বাসিন্দা। এদিন অন্যদের সঙ্গে মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফিরছিলেন। সেই সময় বসিয়ার বিল সংলগ্ন এলাকায় ব্রজপাত হয়। একসঙ্গে ছিলেন ৪ জন। চার জনই জ্ঞান হারান। আহত চিন্ময় ঘোষ বলেন, আকাশে মেঘ দেখে গ্রামে ফিরছিলাম। ছাতা খুলে এক যায়গায় ৪ জন ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। সকলেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। বাকিদের জ্ঞান ফিরতে দেখেন, মৃত্যু হয়েছে শ্রীমন্ত ঘোষের। আহতের চিকিৎসা চলছে পাঁচগ্রাম সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
এদিন বিকেলে মালদার জেলাশাসক নিতীন সিংহানিয়া জানান, ‘প্রতিটি ব্লকে থেকে খোঁজ নেওয়ার কাজ চলছে। মৃত্যুর সংখ্যা এখনই সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। এখনও খোঁজ আসছে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে রাতেই আমরা মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করছি। প্রত্যেক ব্লকের বিডিওরা পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করছেন। আদর্শ আচরণ বিধি লাগু থাকলেও বিপর্যয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়। মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। 

Comments :0

Login to leave a comment