রামশংকর চক্রবর্তী (তমলুক) রাধাগোবিন্দ মান্না (কাঁথি)
"এই নির্বাচনে সিপিআই(এম) কংগ্রেসের যারা প্রার্থী হয়েছেন কোনও গোডাউন থেকে নয়। তৃণমূল বিজেপির প্রার্থীরা আরএসএস ভাড়া করা গোডাউন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে। নিজেদের মধ্যে প্রার্থী আদান প্রদান করেছে এরা" মঙ্গলবার তমলুকের নন্দকুমারের একটি সভা থেকে একথা বলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন তমলুক কেন্দ্রের বামফ্রন্ট প্রার্থী সায়ন ব্যানার্জির সমর্থনে জনসভা হয় নন্দকুমার হাইস্কুল মাঠে। সেলিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই'র শ্রীকুমার মুখার্জী, আরএসপি'র রাজীব ব্যানার্জী, কংগ্রেসের সৌম আইচ, প্রার্থী সায়ন ব্যানার্জী, অভিনেতা বাদশা মৈত্র। সভাপতিত্ব করেন নিরঞ্জন সিহি। ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা অনাদি সাহু, ইব্রাহিম আলি সহ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ। বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘বুথে লড়াই করতে হবে। ভোট লুট করতে এলেই পাল্টা দিতে হবে বুক চিতিয়ে। মুর্শিদাবাদ লড়াই দেখিয়েছে সারা বাংলা সেই পথেই এগোবে। কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই নয়। স্বৈরাচার ফ্যাসিষ্টদের বিরুদ্ধে এই লড়াই। তৃণমূল বিজেপি বিরোধী সব দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি’র দল আর তার সহযোগি বিজেপিকে হঠাতেই হবে’’।
তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতির চিত্র দেখেছে বাংলার মানুষ। এঘাট ওঘাট করে যত টাকা তোলাবাজি করা হয়েছে সব কালীঘাটে জমা পড়েছে। নিয়োগ, একশ দিনের কাজ, বালি কয়লা সব কিছুর তোলাবাজির টাকা অভিষেক ব্যানার্জি নিয়েছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্যরা জেলে যেতে পারে। এত দুর্নীতি সত্ত্বেও কিন্তু অভিষেক ব্যানার্জি তার পিসি গ্রেপ্তার হচ্ছেনা। এরা কালীঘাটে না গিয়ে কুতুবমিনারে গিয়ে খোঁজাখুজি করতে চাইছে। বিদেশী বান্ধবীদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করেছে অভিষেক ব্যানার্জি। কেন সে এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যখনই ভোটে আসে মমতা মোদী ঠোকাঠুকি হয়। এই নাটক আর চলবেনা। মানুষ বুঝেছে। বামপন্থীরা যখন রুটি রুজির কথা বলে আর তৃণমূল বিজেপি ধর্মের কথা বলছে। এরা কোনওমতে একটি দাঙ্গা লাগাতে চাইছে। বামফ্রন্ট কংগ্রেসের তা প্রতিহত করছে। আমরা বলছি চোর ধরো জেল ভরো বিজেপি কথা শুনেছে, তৃণমূলের চোরদের নিজের দলেই ভরেছে। এখানকার শুভেন্দু অধিকারী বলেছিল লাল ঝান্ডা রাখতে দেবনা। আগে তৃণমূলের ঝান্ডা তার হাতে থাকতো। শুভেন্দু অধিকারী সেই তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে বিজেপির অফিসে গিয়ে জমা দিয়েছে। লাল ঝাণ্ডা কোনও চুরির টাকায় নয়। মেহনতি মানুষের রক্ত ঘামের এই ঝান্ডা’’।
মহম্মদ সেলিম বলেন "এই দেশ থেকে ফ্যাসিষ্টদের উৎখাত করতে হবে। আগামী কয়েকদিন পাড়ায় পাড়ায় সায়ন ব্যানার্জীর কথা বলতে হবে যাতে আগামী পাঁচবছর মানুষ সুরক্ষিত থাকে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল বামফ্রন্ট সরকার গড়ে তুলেছিল শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের ঝান্ডা ধরে তোলাবাজি করে ধ্বংস করেছে। আবারও হলদিয়া পুনরুজ্জীবন করবে বামপন্থীরাই। পাঁচ দফার নির্বাচন হয়েছে বিজেপির অবস্থা শোচনীয় হয়েছে ইতিমধ্যেই।
এখানে সায়ন ব্যানার্জি প্রার্থী হয়েছে কোনও গুদাম থেকে আনতে হয়নি একদম ফ্রেশ। তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থী আদান প্রদান করেছে। এবার কালবৈশাখী হয়নি। জুন মাসে লাল বৈশাখী হবে। সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বামপন্থীরা ফিরছেই।"
কংগ্রেসের সৌম আইচ বলেন "যারা সকালে তৃণমূল আর বিকালে বিজেপি তাদের ভোট দিলে দলবদল দেখতে হবে। মানুষ হয়ে কথা বলার জন্য সায়ন ব্যানার্জিকে নির্বাচিত করতে হবে।"
এদিন কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী উর্বশী ব্যানার্জির সমর্থনে মিছিল হয়। বামফ্রন্ট কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বরা অংশগ্রহণ করেন মিছিলে। বিকেলে কাঁথি রুপশ্রী বাইপাস থেকে শুরু হয় রোড শো। অংশগ্রহণ করেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, প্রার্থী ঊর্বশী ব্যানার্জি ভট্টাচার্য, সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মন্ডলী সদস্য অনাদি সাহু, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব সৌম্য আইচ রায় ,সিপিআই রাজ্য নেতৃত্ব শ্রীকুমার মুখার্জি সহ অন্যান্য বাম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। কাঁথি শহরের বুক চিরে হাজার হাজার মানুষ লাল ঝান্ডা, তেরঙ্গা ঝান্ডা, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মিছিল প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে। মিছিল পৌঁছায় কাঁথি সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ডে। সেখানে জনসভায় মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি এবং তৃণমূল এই দুই লুটেরার বিরুদ্ধে আমাদের একত্রিত হতে হবে। দুর্নীতি এবং ভাঁওতাবাজদের পরাস্ত করে কেন্দ্রের এক শক্তিশালী সরকার গঠন করতে হবে। বিজেপির জনবিরোধী নীতির কারণে দেশ এবং রাজ্যের বেকারত্ব বাড়ছে ,বছরে দু কোটি বেকারের চাকরির ভাঁওতা দিয়ে, দেশের জল, আকাশ পথ ,কলকারখানা বিক্রি করে দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি সৃষ্টি করছে। মোদী গ্যারান্টির গ্যারেন্টি নেই। বেকারের চাকরি নেই, আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ,মানুষ এখন দৈন্যতায় ভুগছে। গ্যারান্টি দিয়েছিল কালো টাকা ফিরিয়ে আনবে’’।
তিনি বলেন,‘‘একদিকে আরএসএস ধর্মের নামে হিন্দু মনে বিষ ঢোকাচ্ছে, অপরদিকে মমতা ব্যানার্জি মুসলমানদের বলছেন ৯৯ শতাংশ কাজ করে দিয়েছি। এরা দুজনেই সাধুবেশে শয়তান হয়ে এসে মানুষের ক্ষতি করছে। এই শয়তানদের বিরুদ্ধে গ্রাম শহর জেগেছে। চোরেদের তাড়াতে তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষ। আরএসএস কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল তৈরি করেছে। শুভেন্দু কে দিয়ে সমস্ত কাজ করিয়ে নিচ্ছে। মানুষের সর্বস্ব লুট করেছে এই দুই দল। এদের বিরুদ্ধে বাম কংগ্রেসের ঐক্য কে মজবুত করতে হবে।
Comments :0