ছিল ৮৩। হয়ে গেছে ১৭৭। মমতা ব্যানার্জির শাসনে রাজ্যে বড় ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়েছে ৯৪টি।
অন্তত রাজ্য সরকারের শ্রম দপ্তর তাই জানাচ্ছে। জানিয়েছে বিধানসভায়। গত ২৯ নভেম্বর এই সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের শ্রম মন্ত্রী জানিয়েছেন যে, রাজ্যে বন্ধ কারখানার সংখ্যা ১৭৭। তার জন্য ২৯,০৮৪জন শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। তবে যে কারখানার শ্রমিকরা ফাউলাই প্রকল্পের আওতায় আছেন এবং ভাতা পান, তার ভিত্তিতেই সরকার বন্ধ কারখানার সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। সেই হিসাবেই রাজ্যে বড় ও মাঝারি ১৭৭টি কারখানা বন্ধ।
২০১১-১২-এ কত ছিল?
তারও জবাব তৃণমূলের সরকার দিয়েছিল বিধানসভায়। তখন সবে মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। সেই সময়কালে, ২০১১-র ২৩ ডিসেম্বর বিধানসভায় এক বিধায়ক জানতে চেয়েছিলেন যে, রাজ্যে বন্ধ বড় ও মাঝারি কারখানা কত? সেদিন মমতা ব্যানার্জির সরকারের শ্রম মন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে, ২০১১-র ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যে বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৮৩। তার মধ্যে ২৫টি বড় কারখানা।
অর্থাৎ গত ১১ বছরে বন্ধ কারখানার সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। অথচ বহু আকাঙ্ক্ষিত মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে পৌঁছানোর জন্য মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর দল কী প্রচার করেছিল? তৃণমূলের ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের ইশ্তেহারের ২৫নং পাতায় লেখা হয়েছিল, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ৫৬ হাজার কারখানা বন্ধ। তার জমির পরিমাণ ৪৪ হাজার একর।’’ এখন দেখা যাচ্ছে পুরোটাই ছিল বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। ৫৬হাজার বন্ধ কারখানা নয়। কখনও ছিল না। অন্তত বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে তো নয়ই। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, ১৯৭৭-র আগে রাজ্যে একটি কারখানাও বন্ধ ছিল না, তাহলে বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরে ৮৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মমতা ব্যানার্জি আদৌ বন্ধ কারখানার সংখ্যা কমাতে পারেননি। বরং তাঁর আমলে বন্ধ কারখানার সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
অর্থাৎ ৩৪ বছরে বন্ধ কারখানা ৮৩টি। আর ১১বছরে ৯৩টি। মমতা ব্যানার্জি ডাহা ফেল করেছেন কারখানা পুনরুজ্জীবনে। ঠিক যেভাবে রাজ্যের ধার বেড়েছে, সেই ভাবেই বেড়েছে বন্ধ কারখানা।
গত এগারো বছরে রাজ্যে অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। মমতা ব্যানার্জিই বারবার দাবি করেছেন, রাজ্যে ধর্মঘট হয় না। ধর্মঘট অবশ্য হয়। শ্রমিকরা আন্দোলন করেন— মজুরি সহ অন্যান্য দাবিতে। কিন্তু কারখানা বন্ধ করেন না। কারখানা বন্ধ করে মালিক। রাজ্যে গত ১১বছরে যা কারখানা বন্ধ হয়েছে, তার প্রতিটি বন্ধ করেছেন মালিকরা। তবে কিছু ক্ষেত্রে তৃণমূলের তোলা আদায়ে বিধ্বস্ত হয়ে কারখানা বন্ধ করেছেন মালিকরা। এমন উদাহরণ প্রতিটি শিল্পনগরীতেই আছে। যেমন হলদিয়া। সেখানে ২০০৮ সালে উদ্বোধন হয়েছিল রোহিত ফেরোটেক আয়রন কারখানা। সেটি বন্ধ। বন্ধ হয়েছে মডার্ন কনকাস্ট। বন্ধের তালিকায় আছে জেভিএল, উড়াল সহ আরও অনেক কারখানা। বন্ধ কারখানাগুলির কয়েকশো কোটি টাকার যন্ত্রাংশ লোহাও চুরি হয়ে গেছে। আরও উদাহরণ আছে। হুগলী জেলাতেও অন্তত ৫টি চটকল বন্ধ। এছাড়া অন্য কারখানাও সেই অঞ্চলে বন্ধ হয়েছে। অনেক কারখানা বন্ধ বারাকপুরেও— তৃণমূলের ‘খাসতালুকেও।’
তবে বন্ধ কারখানার যে হিসাব শ্রম দপ্তর পেশ করেছে, তা মূলত শ্রমিকদের ফাউলাই ভাতা দেওয়ার ভিত্তিতে। সেই ভাতা বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে শুরু। এখন অনেক জায়গাতেই অনিয়মিত। তবে এর বাইরেও অনেক কারখানা বন্ধ আছে। যেমন ২০২১-এ রাজ্যের পরিবেশ দপ্তরের তৈরি রিপোর্ট জানিয়েছে, ২০১৬ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে রাজ্যে বন্ধ হয়েছে ২১, ৫২১টি কারখানা। সেই রিপোর্ট অনুসারে রাজ্যে ২০১৬-তে বড় শিল্প ছিল ১৩৩৭টি। ২০২১-এ তা দাঁড়িয়েছে ১০৬৬-তে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে বন্ধ হয়েছে প্রায় ২৭১টি। মাঝারি শিল্প এই পাঁচ বছরে ৯৯৬ থেকে হয়েছে ৬০৮।
রাজ্যের শ্রম দপ্তরের হিসাবে, ৫০০ কিংবা তার বেশি শ্রমিক কাজ করেন, এমন কারখানাকে বড় ধরা হয়। আর ১০০ থেকে ৪৯৯ পর্যন্ত শ্রমিক থাকলে তাকে মাঝারি কারখানা ধরা হয়। সেই হিসাবে গত ১১বছরে রাজ্যে ৯৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে।
Factory closed TMC regime
মমতা-শাসনে রাজ্যে বন্ধ কারখানা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি
×
Comments :0