প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসন খুইয়ে শরিকদের কাঁধে ভর দিয়ে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি ভবনে সাড়ম্বর অনুষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠের কিছুক্ষণ আগে জম্মু ও কাশ্মীরে বড় ধরনের হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসবাদীরা জানান দিয়েছে স্বৈরাচারী কায়দায় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার তথা মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে সেনা-পুলিশ-কমান্ডার মুড়িয়ে দিলেও সন্ত্রাসবাদীরা বহাল তবিয়তে মোদী-শাহদের নাকের ডগায় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। তার জেরে সেনা-পুলিশের পাশাপাশি প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষের। গত পাঁচ বছর ধরে কাশ্মীর সন্ত্রাসমুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে বলে মোদী-শাহরা বারবার দাবি করলেও কাশ্মীরের জীবনযন্ত্রণা যে এতটুকুও কমেনি মোদীর শপথের ঠিক আগে সেটা গোটা দেশকে জানিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসবাদীরা। কাশ্মীরকে জেলখানা বানিয়ে সমস্ত কাশ্মীরবাসীকে নজরবন্দি করে মোদীরা গোটা দেশে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছেন বটে কিন্তু তাতে কাশ্মীরের কোনও উপকার হয়নি।
মোদীর শপথ গ্রহণের আগের দিন দেশের একেবারে পূর্বপ্রান্তে ছোট রাজ্য মণিপুর ফের হিংসাদীর্ণ হয়ে জানান দিয়েছে মণিপুরও ভালো নেই। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতি দাঙ্গা ও গোষ্ঠী সংঘর্ষে জ্বলছে মণিপুর। ডাবল ইঞ্জিন শাসিত মণিপুরের ইতিহাস হলো শত সহস্র মানুষের মৃত্যু, হতাহত-জখম এবং নিখোঁজ হবার ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানগম্ভীর নীরবতায় এক বছর ধরে ভিটেমাটি হারিয়েছে হাজার হাজার পরিবার, পুড়িয়ে এবং ভেঙেচুরে ধ্বংস করা হয়েছে নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি। বাঁচার শেষ সম্বল হারিয়ে তারা এখন আশ্রয় শিবিরের স্থায়ী বাসিন্দা। গোটা রাজ্যটি পাহাড়-সমতল এবং মেইতেই-কুকিতে বিভাজিত হয়ে গেছে। এক গোষ্ঠীকে অন্য গোষ্ঠীর ঘোরতর শত্রুতে পরিণত করা হয়েছে বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতির অঙ্গ হিসাবে। গাঁয় মানে না আপনি মোড়লের মতো মোদীর আশীর্বাদ নিয়ে ইম্ফলে বসে মুখ্যমন্ত্রিত্ব করছেন বীরেন্দ্র সিং। রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলে তাঁর কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই। এবারের নির্বাচনেও দু’টি আসনের দু’টিতেই বিজেপি-কে পরাজিত করে রাজ্যের মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা এমন এক অপদার্থ সরকারের বোঝা বইতে পারছেন না। অবিলম্বে এই সরকার বিদেয় হোক।
মোদী যেদিন শপথ নেবেন তার আগেরদিন আসাম সীমান্তে দুই জেলায় গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। তাতে শতাধিক বাড়ি, দু’টি থানা, দুটি গির্জা বন দপ্তরের অফিস, বহু দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বহু মানুষ পালিয়ে আশ্রয় নেন আসামের কাছাড়ে। রাজ্যে যখন দাঙ্গার আগুন জ্বলছে, মানুষ যখন বিপন্ন তখন মেদীভক্ত মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে খোশমেজাজে সময় কাটাচ্ছেন। আর তাঁর গুরু মোদীজী এক বছরে উপদ্রুত মণিপুরের মানুষের পাশে একবারের জন্যও যাননি। মণিপুর নিয়ে মুখে শোনা যায় না একটি কথাও। একদিকে কাশ্মীর এবং অন্যদিকে মণিপুরকে ধ্বংসের কিনারায় ঠেলে দিয়ে মহানন্দে শপথ অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন মোদী-শাহরা।
Comments :0