বহরমপুরে কলেজ ছাত্রী সুতপা চৌধুরী খুনে ধৃত সুশান্ত চৌধুরীর ফাঁসির সাজা দিল আদালত। বৃহস্পতিবার বহরমপুরের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের অতিরিক্ত ও জেলা দায়রা বিচারক সন্তোষ কুমার পাঠক সুশান্ত চৌধুরীর ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন।
২০২২ সালের ২ মে, সোমবার সন্ধ্যায় ৬ টা ৩৫ মিনিটে বহরমপুরের গোরাবাজারে খুন হন বহরমপুর গার্লস কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী সুতপা চৌধুরী। মালদার বাড়ি থেকে বহরমপুরে পড়তে এসেছিলেন তিনি। থাকতেন কলেজের কাছেই একটি মেসে। ঘটনার দিন এক বন্ধুর সাথে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন সুতপা। সিনেমা দেখে ফেরার সময় সুতপার পিছু নেয় সুতপারই প্রাক্তন প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরী। মেসের সামনে আসতেই হামলা করে সে। খুনের ছবি ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরাতেও। পরপর সুপতাকে কোপাতে থাকে সুশান্ত। প্রত্যক্ষদর্শীরা সুতপাকে বাঁচাতে গেলে তাদের একটি বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়। দেওয়া হয় খুনের হুমকি। পরে পুলিশ জানায়, ভয় দেখানোরত জন্যি নকল বন্দুক কিনেছিল সুশান্ত। খুনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শামসেরগঞ্জের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে সুশান্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার ৭৫ দিনের মাথায় বহরমপুর আদালতে সুতপা হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। অভিযুক্ত সুশান্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় (খুন), ২০১ ধারায়( প্রমাণ লোপাট) এবং অস্ত্রআইনে চার্জশিট দাখিল করা হয়। আদালতে জমা পড়ে ৩৮৩ পাতার চার্জশিট। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, পুর্বপরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয় কলেজ ছাত্রীকে।
জানা গিয়েছে, কলেজ পড়ুয়া সুতপার দেহে ছিল ৪২ টি আঘাত। আঘাত গুরুতর হওয়াতে ঘটনাস্থলেই হয় মৃত্যু। এতবার আঘাতে প্রমাণিত হয়েছে খুনীর নৃশংসতা।
সুতপা চৌধুরীর পরিবারের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকেই একাধিকবার অশান্তি সৃষ্টি করেছিল সুশান্ত। তদন্তে উঠে এসেছে, সুতপা চৌধুরীর উপর রাগ ও হতাশা থেকেই এই খুন। পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা বয়ান দেওয়ারও চেষ্টা করে সুশান্ত। তবে রক্ষা হয় নি। শুনানি চলাকালীন ৩৪ জনের সাক্ষী গ্রহণ করেছে আদালত। এদিন বহরমপুরে কলেজ ছাত্রী সুতপা চৌধুরী হত্যায় অবশেষে অপরাধীকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত।
এদিন সরকারি আইনজীবি জানাচ্ছেন, আক্রমণের ধরণের দিক থেকেও এই খুন নৃশংস। এদিন রায়ের পর আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে সরকারি আইনজীবি বিভাস চ্যাটার্জি বলেন, এই অপরাধ ব্যতিক্রমী ও নৃশংস তাই ফাসি চাওয়া হয়েছিল। ৪২ বার কোপানো হয়েছিল ওই ছাত্রীকে। তিনি জানান, মৃত্ত্যু নিশ্চিত হওয়া অবধি আঘাত করেছিল খুনী। বলেছিল একটি খুন করলেও দশটা খুন করলেও তাই। তিনি বলেন, অপরাধের প্রমাণ থেকে কোন ভাবেই মনে হয় না হত্যাকারীর সংশোধন সম্ভব। এই অপরাধ ব্যতিক্রমী। এই অপরাধ সমাজকে শিহরিত করেছিল।
রায়ের পর সুতপা চৌধুরীর বাবা স্বাধীন চৌধুরী বলেন, এই রায়ের পর আর কেউ দ্বিতীয়বার এই রকম ঘটনা ঘটানোর আগে ভাববে।
Comments :0