মণিপুরকে বিভাজন আর অশান্তির আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে, দাঙ্গাবিধ্বস্ত রাজ্যে শত শত মানুষের মৃত্যু, হাজার হাজার পরিবারের ভিটেমাটি হারা হবার, সীমাহীন সম্পদ ধ্বংসের মূল কান্ডারি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং-কে শেষ পর্যন্ত অপসারণ করতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। অমিত শাহের অতি কাছের মানুষ হয়েও গদি বাঁচাতে পারলেন না। শেষ মুহূর্তে দিল্লি ছুটে গিয়ে অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মণিপুরে সরকার হাতে রাখার স্বার্থে বীরেনকে না ছেঁটে আর উপায় ছিল না।
সমস্ত বিরোধী দল, এমনকি রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষ অনেকদিন ধরে টানা বীরেনের অপসারণের দাবি করে গেলেও তাতে কর্ণপাত করেননি মোদী-শাহরা। আসলে বীরেনের হাতে পড়ে মণিপুরের হাল এতটাই শোচনীয় হয়েছে যে বীরেনকে সরিয়ে অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করলে সরকার বাঁচানো যাবে না। তাই বীরেন সর্বোচ্চ ব্যর্থতা ও অপদার্থতার পরিচয় দিলেও এবং রাজ্যকে সর্বনাশের শেষ সীমায় পৌঁছে দিলেও মোদী-শাহরা বীরেনেই আস্থার রেখেছেন। কিন্তু এখন বীরেনকে ঘিরে বিজেপি’র অভ্যন্তরেই বিদ্রোহ দেখা দেওয়ায় আর ঝুঁকি না নিয়ে বীরেনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি কতটা সঙ্গিন হলে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেরদিন সন্ধ্যায় একজন মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয় বীরেন তারই শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
আসলে বিধানসভা শুরুর প্রথমদিনেই বিরোধী কংগ্রেস অনাস্থা প্রস্তাবের প্রস্তুতি নেওয়া এবং বিক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়করা তাতে যোগ দেবার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় বীরেন তড়িঘড়ি দলীয় ও শরিক বিধায়কদের বৈঠক ডাকেন। কিন্তু তাতে অনেকেই যোগ দেননি। তখন পদত্যাগ না করলেও সরকারেরই পতন ঘটে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই অবস্থায় বীরেনকে সরিয়ে, বিধানসভার অধিবেশন বন্ধ করে এবং বিধানসভা বাঁচিয়ে রেখে সরকার বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করলেন মোদী-শাহরা।
মণিপুরে সবচেয়ে সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসবাদী বাহিনী আরাম্বাই টেঙ্গলের অতি ঘনিষ্ঠ বীরেনের এক ভাইরাল অডিও টেপও তাঁর পতন অনিবার্য করে দিয়েছে। সেই অডিও টেপে বীরেন সরকারি উচ্চপদের আধিকারিক ও পুলিশ কর্তাদের নির্দেশ দিচ্ছে কুকিদের উপর হামলা চালাতে। সেই টেপ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পরীক্ষা করে সত্যতার প্রমাণ মিলেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ায় বীরেনকে আর কোনও অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী রাখা যাচ্ছিল না।
বীরেন পদত্যাগে আপদ বিদেয় হয়েছে বলে ইম্ফলের মানুষ আনন্দে মেতেছেন ঠিকই কিন্তু রাজ্যের ও রাজ্যবাসীর যন্ত্রণা কমেনি। সবটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাজেট অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। নতুন কে কবে মুখ্যমন্ত্রী হবেন কেউ জানে না। আদৌ হবে কিনা সেটাও স্পষ্ট নয়। তবে কি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি সরাসরি কেন্দ্র থেকে মণিপুরকে চালানো হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজনের রাজনীতির কুৎসিত প্রয়োগে মণিপুরের মানুষের মধ্যে যে পারস্পরিক বিদ্বেষের ও শত্রুতার এবং হিংসার বীজ বপন করেছে তাকে আরও জটিল করবে কেন্দ্রীয় শাসন। তাই অবিলম্বে বিধানসভা ভেঙে নতুন করে নির্বাচন জরুরি। রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজ্যের মানুষরে হাতেই ছেড়ে দেওয়া দরকার।
BJP must be removed
শুধু বীরেন নয়, সরাতে হবে বিজেপি-কেই
![](https://ganashakti-new-website.s3.ap-south-1.amazonaws.com/24041/67aa50fcc1251_IMG_20240717_012013.jpg)
×
Comments :0