Manipur

মণি‍‌পুরে দায় প্রধানমন্ত্রীর

সম্পাদকীয় বিভাগ

 গত দেড় বছর ধরে জাতি সংঘর্ষে মণিপুর যখন বিভাজিত ও দ্বিখণ্ডিত, জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা যখন বিপন্ন, যখন চলছে খুন-সন্ত্রাস-ধ্বংসের অভিযান তখন দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে মণিপুর সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে উন্নয়নের জোয়ারের গল্প শোনালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।  দাবি করেছেন তাঁর আমলে অপ্রীতিকর ঘটনা, জঙ্গি কার্যকলাপ কমে গেছে। শান্তিচুক্তি করে ও সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটিয়ে তিনি নাকি সেভেন সিস্টারের দুয়ারে নতুন প্রভাত এনে দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রভাতের এতই মহিমা যে গত দেড় বছরে একটি বারের জন্যও মণিপুরে পা রাখার সাহস হয়নি। দিল্লিতে বসে লম্বা-চওড়া ভাষণ দেওয়া যায় কিন্তু মণিপুরের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়ানো যায় না।
সাফল্যের যত গল্পই তিনি শোনান না কেন, যত অলীক স্বপ্নই দেখান না কেন মণিপুরের আবালবৃদ্ধ বনিতা জানেন মণিপুরের আজকের সর্বনাশা পরিণতির জন্য দায়ী তাঁর দল। শুধুমাত্র ক্ষমতার সুতীব্র আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করতে হেন অনৈতিক অপকর্ম নেই যা মণিপুরে বিজেপি করেনি। তাদের হিন্দুত্ববাদী সংখ্যাগুরু যাদের রাজনীতির প্রধান অভিমুখই হলো বিভাজন। ধর্মীয় বিভাজন, জাত-পাত-বর্ণের বিভাজন, ভাষা-সংস্কৃতির বিভাজন ইত্যাদি যখন যেখানে যেটা উপযোগী সেটাকেই তারা কাজে লাগায়। আর এই বিভাজনের জমি আগে থেকেই উর্বর করে দেয় আরএসএস। মণিপুরে হিন্দু মেইতেইর সঙ্গে কুকি খ্রিস্টানের বিভাজন, অপেক্ষাকৃত উঁচু জাতের মেইতেইদের সঙ্গে আদিবাসী কুকিদের বিভাজন। যেহেতু মণিপুরে হিন্দু মেইতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই কুকিদের বিরুদ্ধে নানা অছিলায় মেইতেইদের লেলিয়ে দিলে এবং দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধী-বিদ্বেষকে হিংসায় রূপান্তরিত করতে পারলে একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে এবং মেইতেইরা জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপি’র ভোট বাক্স ভরিয়ে দিয়ে ক্ষমতার আসন পাকা করে দেবে। মণিপুরে এমন ধ্বংসাত্মক ফরমুলা প্রয়োগ করে সর্বনাশ ডেকে আনা হয়েছে।
মেইতেইদের মধ্যে উপজাতি বিদ্বেষ দীর্ঘদিন ধরে ছড়িয়েছে আরএসএস। এরাই আবার মুখোশ বদলিয়ে মেইতেইদের বিরুদ্ধে উপজাতিদের মধ্যে বিদ্রেষ ছড়িয়েছে। বিজেপি’র মদতে গডে উঠেছে একাধিক উগ্রপন্থী সংগঠন। সেই সব উগ্রপন্থী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের এতটাই ঘনিষ্ঠতা যে তাদের পরিবারের লোকদের বিধায়ক বানিয়েছে। উগ্রপন্থী নেতাদের পরিবারের লোকজনরাই বিজেপি’র বড় বড় নেতা। এই উগ্রপন্থীরা থানা দখল করে অস্ত্র লুট করলেও পুলিশ বাধা দেয় না। একই ভূমিকা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর। রাজ্যজুড়ে চোরাচালান, মাদক চাষের সঙ্গে জড়িয়ে বিজেপি’র লোকজন। এমন জঘন্য অপরাধের পর কোন মুখে মণিপুরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।

Comments :0

Login to leave a comment