Palki Ambulance

বক্সা পাহাড়ে বন্ধ পালকি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা

জেলা

আলিপুরদুয়ার জেলার প্রত্যন্ত বক্সা পাহাড় এলাকা। যেখানে গড়ে উঠেছে ১৪ টি গ্রাম। সেখানে গর্ভবতী মায়েদের সমতলের হাসপাতালে আনতে এতদিন বাঁশের মাঁচা ব্যবহার করতেন পাহাড়ের মানুষজন। রোগীদের সমতলে নামিয়ে আনতে চালু হয়েছিলো পালকি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা। কিন্তু, প্রশাসনের চালু করা সেই পালকি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা বন্ধ। যার ফলে বিপাকে পড়েছে সমতল থেকে ২৯০০ ফুট উচ্চতায় থাকা বক্সা পাহাড়ের ১৪ টি পাহাড়ি গ্রামের ডুকপা জাতির মানুষ। আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের প্রত্যন্ত দুর্গম বক্সা পাহাড়ের এই গ্রামগুলিতে কেউ অসুস্থ হলে, মুমুর্ষ রোগী, গর্ভবতী মায়েদের কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কার্যত কাঁধে করেই নামিয়ে আনতে হতো এতদিন। মূলত বাঁশের মাঁচায় নিয়ে আসতে তাঁদের। এর থেকেই পালকি অ্যাম্বুলেন্সের ভাবনা আসে। অবশেষে আলিপুরদুয়ার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও ফ্যামিলি প্লানিং অফ ইণ্ডিয়ার যৌথ উদ্যোগে পালকি আম্বুলেন্স পরিষেবা চালু হয়েছিলো। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকঢোল পিটিয়ে বক্সার দুর্গম পাহাড়ে এই পালকি আ্যম্বুল্যান্সের শুভ সূচনা করেন আলিপুরদুয়ার জেলা শাসক। উদ্বোধনের দিনই জিরো পয়েন্ট থেকে সেই কাঠের তৈরি প্রায় ১৪০ কেজির পালকি আ্যম্বুল্যান্স কোনও মতে চার যুবক বক্সা ফোর্টে তুলে নিয়ে যায়। প্রথম ধাপে বক্সা পাহাড়ে পালকি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা চালু হয়েছিলো। ব্লক প্রশাসনের ওই পালকি অ্যাম্বুলেন্সকে স্বাগত জানিয়েছিল বক্সা পাহাড়ের মানুষ। এরপর ধাপে ধাপে ল্যাপচাখা, তাসিগাঁও এলাকাতেও পালকি অ্যাম্বুলেন্স চালু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু যেটা চালু হয়েছিলো। সেটাই বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। বাকিটা বিশ বাও জলে।
বক্সা পাহাড়ের গ্রামগুলি থেকে সমতল সান্তলাবাড়ির দূরত্ব গড়ে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। বক্সা পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ এই পথ কোথাও চওড়া, কোথাও অপরিসর। রোগীদের সুবিধার্থে এখানে প্রশাসনের উদ্যোগে পালকি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু, একবছর ধরে বন্ধ পালকি অ্যাম্বুলেন্স। উপায় না থাকায় পাহাড়ের বাসিন্দারা অসুস্থ রোগীদের বাঁশের মাচায় করে সমতলে নামিয়ে আনছেন। যদিও ব্লক প্রশাসনের দাবি, একবছর নয়, মেরামতের জন্য একমাস ধরে বন্ধ ওই পালকি অ্যাম্বুলেন্স।  
জানা গিয়েছে, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ওই পালকি অ্যাম্বুলেন্স বহন করার জন্য চারজন লোকের প্রয়োজন হয়।  স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্রবাহাদুর থাপা বলেন, অপরিসর রাস্তায় চারজন লোকের পক্ষে পালকি বহন করা সম্ভব হয় না। অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ওই পালকি ওজনেও খুব ভারী। ফলে বহন করতেও সমস্যা। তাছাড়া পালকি বহনের জন্য স্থায়ী লোকের দরকার। সেই ব্যবস্থাও নেই। ফলে বন্ধ হয়ে আছে পালকি অ্যাম্বুলেন্স। 
ওই অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে তাসিগাঁও, চুনাভাটি, লেপচাখা, ওসলুং, আদমা, সদর বাজার সহ বক্সা পাহাড়ের ১৪ টি পাহাড়ি গ্রামের রোগীদের সমতলের সান্তলাবাড়িতে নামিয়ে আনা হতো একসময়। পরে সান্তলাবাড়ি থেকে গাড়িতে করে রোগীদের কালচিনির লতাবাড়ি গ্রামীণ বা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো। 
বক্সা পাহাড়ের বাসিন্দা রাজাভাতখাওয়া পঞ্চায়েতের প্রধান সোনম ডুকপা বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসনের ওই পালকি অ্যাম্বুলেন্স কেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলতে পারব না। তবে পালকি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ থাকায় পাহাড়ের মানুষের তো অসুবিধা হচ্ছে।   পাহাড়ের একাংশ বলছে বক্সা পাহাড়ের ওই রাস্তা চওড়া না করলে পালকি তো বন্ধ হবেই। 

Comments :0

Login to leave a comment