SITARAM YECHURY

জনতার সংগ্রামের ধার বাড়িয়ে মোকাবিলা বিজেপি’র: ইয়েচুরি

জাতীয় রাজ্য

SITARAM YECHURY ৫ এপ্রিল দিল্লিতে মজদুর কিষান অভিযানের ছবি।

লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে। বিজেপি-ও মেরুকরণের অস্ত্রগুলি তত ধারালো করছে। রামনবমী, গোরক্ষা, লাভ জিহাদের স্লোগানে জোর দিচ্ছে। নিজেদের রাজনৈতিক ফয়দার জন্য দেশের স্বার্থ বিপন্ন করছে। ঝলমলে ভারত আর মলিন ভারতের ফারাক আরও বাড়ছে। দেশকে এই বিপদের থেকে রক্ষা করতে হবে। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সেই প্রয়াসই চালাচ্ছে সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা। 

বুধবার কলকাতায় মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে এই লক্ষ্য জানিয়েছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গেই ছিলেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ইয়েচুরি বলেন, জনতার সংগ্রামের ধার বাড়িয়ে জীবিকার ওপর আক্রমণ এবং মেরুকরণের মোকাবিলা করার ওপর জোর দিচ্ছে বামপন্থীরা। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে এমন সংগ্রামের ধার বাড়ানো হবে। 

ইয়েচুরি বলেন, বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা জারি রয়েছে। বিজেপি বিরোধী মতদান সর্বোচ্চ করার চেষ্টা চলছে। রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি আলাদা। রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তিনি মনে করিয়েছেন যে ২০০৪’এ অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের পরাজয়ের সময়ও কেন্দ্রে সমঝোতা হয়েছিল নির্বাচনের পর। 

তৃণমূল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে ইয়েচুরি বলেন, পশ্চিমবঙ্গেই প্রশ্নের মুখে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজেপি বিরোধী অবস্থান। অতীতে এই দল বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ’র শরিক থেকেছে দীর্ঘদিন। সরকারে থেকেছে। আজকে রামনবমীর মতো কর্মসূচি ঘিরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে তৃণমূল সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকারও উল্লেখ করেছেন তিনি। 

 

ইয়েচুরি বলেছেন, ৫ এপ্রিল দিল্লিতে শ্রমজীবীর ব্যাপক জমায়েত হয়েছে। এমন গণসংগ্রামকে আরও ধারালো করার লক্ষ্য নিয়ে চলছে সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা। এই রকমের সংগ্রামই বিজেপি সরকারকে বিভিন্ন সময়ে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। নতুন শ্রম কোড বা কৃষি আইনের ক্ষেত্রে তা দেখা গিয়েছে। 

এক প্রশ্নে, তৃণমূলকে হারাতে বিজেপিকে অথবা বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলকে ব্যবহারের প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, আমরা ওদের মতো দল বদলে যাতায়াতে বিশ্বাস করি না। বিজেপি এবং তৃণমূলে যাতায়াতের মাঝে পাঁচিল কী আছে? কেবল দন্ডি? সেটাও তো আদিবাসী তফসিলী জাতির প্রান্তিকদের জন্য প্রযোজ্য। ওরা জাতিভেদে বিশ্বাসী। আদিবাসী মহিলাদের দন্ডি কাটিয়ে তৃণমূলে ঢোকায়, কিন্তু কিন্তু অর্জুন সিং বাবুল সুপ্রিয়দের বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফেরানোর সময়ে দন্ডি কাটিয়েছিল

পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্তদের মনোনয়ন দেবে না বলে অভিষেক ব্যানার্জি যে মন্তব্য মিডিয়ার সাহায্যে প্রচার করেছেন তাকে হাস্যকর বলে অগ্রাহ্য করেছেন সেলিম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতির শিখড়ে বসে আছেন পিসি ভাইপো। তারা দুর্নীতিগ্রস্তদের বাদ দেবেন? দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়বেন? সারদা নারদায় দুর্নীতিগ্রস্তদের কাদের বিরুদ্ধে কবে কোন ব্যবস্থা ওরা নিয়েছে? জেলে ঢোকার পরেও তাদের সম্পদ কিংবা বাঘ বলে প্রশংসা করেছে। 

তৃণমূলের মুখে বামফ্রন্ট সরকারের সময়কার নেতাদের অত্যাচারের অভিযোগ সম্পর্কে সেলিম বলেছেন, আমরা যখন বাংলার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কথা বলছি ওরা তখন অতীতে ফিরে যাচ্ছে। ওদের ভিত্তিহীন অভিযোগগুলির সত্যতা যাচাই না করে মিডিয়া এত প্রচার করছে কেন

তিনি বলেন, তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষকে এককাট্টা করে ওদের হারানো যায় এটা সাগরদিঘি দেখিয়ে দিয়েছে। এখন বিপাকে পড়ে তৃণমূল এবং বিজেপির সঙ্গে মিডিয়াও যুক্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করতে। কিন্তু দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীমুক্ত বাংলা গড়ে তুলতে পারে কেবলমাত্র উজ্জীবিত বামপন্থীরাই। বামফ্রন্টই এরাজ্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে গরিবের মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেছিল, মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করেছিল। আজ সারা দেশে লোকসভা থেকে গ্রামসভা আক্রান্ত। ফ্যাসিবাদী প্রবণতায় শ্রমিক, কৃষক, কর্মচারী সবার অধিকার আক্রান্ত। মানুষের হাতে কাজ নেই, কৃষকের ফসলের দাম নেই। এই অবস্থায় রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠকে বর্তমান সময়ের আন্দোলন সংগ্রাম এবং সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে তীব্রতর করতে আমাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment