Editorial

৩৭০-র খোয়াব

সম্পাদকীয় বিভাগ


আগামী বছর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ অর্থাৎ আরএসএস’র শতবর্ষ। ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদীদের বহুকালের স্বপ্ন ভারতকে  হিন্দুত্বরাষ্ট্র হিসাবে আগাগোড়া বদলে ফেলা। আগামী বছরটাই তাদের কাছে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। সেই স্বপ্নপূরণের অলিখিত দায় নরেন্দ্র মোদী স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন। মোদী নিজেও স্বপ্ন দেখেন তাঁর জমানাতেই তাঁর হাত ধরে ভারত হিন্দুত্ব রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর কীর্তি তিনিই অর্জন করবেন। হিন্দুত্ব ভারতের রূপকার হবেন তিনিই, আর কেউ নয়। এমন স্বপ্নে বিভোর মোদী একাই হয়ে উঠেছেন সবকিছু। দলে বা সরকারে আছেন একজনই,  তিনি নরেন্দ্র মোদী। দলের যত সাফল্য, সরকারের যা কিছু সবই মোদীর কীর্তি। মোদী আছেন  বলেই বিজেপি আছে, মোদী আছেন বলেই কেন্দ্রে বিজেপি’র সরকার আছে। অর্থাৎ সবকিছুই মোদীময়।
ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করার মহান কীর্তি স্থাপনের জন্য  সবার আগে জরুরি দেশের বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সংবিধানকে বাতিল করে হিন্দুত্ববাদী ভারতের নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা। ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্ববাদী ভারতের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক  ব্যবস্থাকে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করা। এরজন্য দরকার সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ  সংখ্যা গ‍‌রিষ্ঠতা। বর্তমা‍‌নে লোকসভায় সাধারণ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই। তারজন্য একাই ৩৭০  আসনে জেতার জন্য বেপরোয়া হ‍‌য়ে উঠেছে। এনডিএ গত ভাবে ৩৭০ আসনে জিতে  দুই-তৃতীয়াংশ  সংখ্যাগরিষ্ঠতা পে‍‌লেও  তাতে শরিকরা সকলে হিন্দুত্ববাদী  সংবিধানে সায় নাও দিতে পারে। তাই  মোদীর দল একাই  ৩৭০ আসন চায়। জোটগতভাবে চায়  ৪০০ আসন। অর্থ ‍ মোদীর  দল কোনও অবস্থাতেই  শরিক নির্ভরতা  চায় না। শরিকদের  ব্যবহার করে ক্ষমতার কেন্দ্রে যেতে চায়। তারপর  সময় বু‍‌ঝে শরিকদের  মুছে ফেলাই লক্ষ্য। আরএসএস-বিজেপি বহুদলীয় গণতন্ত্র সহ্য করে না। তারা চায় একদলীয়  স্বৈরতন্ত্র। সমস্ত রকমের  বিরোধীমুক্ত হিন্দুত্ববাদী স্বৈরশাসন।
রাজ্যসভায় এখনও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। তারজন্য রাজ্যগুলিকে দখলে আনা জরুরি। মানুষের ভোটে সেটা আদৌ সম্ভব নয় বুঝে টাকা দিয়ে   বিরোধী বিধায়ক  কিনে রাজ্যে রাজ্যে দখলদারি কায়েম করতে চায়। আর এই বিধায়ক কেনার টাকার জন্যই নির্বাচনী‍‌ বন্ড। কর্পোরেটের টাকায় বিরোধী দলের বিধায়ক-সাংসদ কিনে দেশকে বিরোধী মুক্ত করা।
কিন্তু চাইলেই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা মিলে যাবে বিষয়টা তত সহজ নয়। সোজা আঙুলে ঘি উঠবে  না বুঝেই  বেপরোয়া ও মরিয়া হয়ে উঠেছে। একের পর এক ঘুঁটি সাজিয়ে‍‌ছে, মোদীকে অতিমানব বানিয়ে  সমগ্র দেশবাসীকে তাঁর পদতলে হাজির করানোর। কাশ্মীরের মানুষের অধিকার কেড়ে গোটা দেশে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দুত্বের জাগরণ ঘটাতে। একইভাবে হাতিয়ার করা হয়েছে  অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, সিএএ-এনআরসি-কে।  রামমন্দির উদ্বোধন করে ধর্মোন্মাদনার জোয়ারে মেরুকরণ করতে চেয়েছে। কিন্তু কোনও  কিছুতেই চিঁড়ে ভেজানো  যাচ্ছে না। উলটে নির্বাচনী বন্ডের আড়ালে গড়ে তোলা কর্পোরেট   রাজনীতিক অশুভ আঁতাতের মাধ্যমে গড়ে  ওঠা দেশের বৃহত্তম  দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসে গেছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে দলীয়  রাজনৈতিক স্বার্থে  ব্যবহার করে বিরোধীদলের নেতাদের কোণঠাসা করে, অপদস্থ, অপমানিত করে,  ভাবমূর্তি নষ্ট করে, তাদের  জেলে   বন্দি করে খোলা মাঠে একা গোল দিতে চাইছে।  কিন্তু ধর্মান্ধ  হিন্দুত্বের কুয়োর ব্যাঙরা  জানে না  ভারত ভাবনার গভীরে প্রোথিত আছে ধর্মীয় উদারতা, সহনশীলতা, গণতান্ত্রিক চেতনা, যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান চেতনা। তাকে এত সহজে উপড়ে ফেলা যাবে না।

Comments :0

Login to leave a comment