Ration scam

বাকিবুরের জেল হেপাজত, বালুর খবর নিতে আজ হাসপাতালে ইডি

রাজ্য

 চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘ম্যানগ্রোভ।’ ২০১৪-র জুনে এই সিনেমাটি রিলিজ করে। সেই সিনেমার প্রযোজক ছিল বাকিবুর রহমান। আর সেই ‘ম্যানগ্রোভ’-এ নায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের স্বপ্নপূরণ হয় অর্পিতা মুখার্জির।
এই অর্পিতা মুখার্জি ঘনিষ্ঠ ছিলেন পার্থ চ্যাটার্জির। বাকিবুরের ছাতা বালু, অর্থাৎ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শনিবার ইডি’র এক অফিসার জানিয়েছেন, ‘‘সিনেমায় যে কেউ অভিনয় করতে পারেন। ওই সিনেমায় মুম্বাইয়ের এক শিল্পীও ছিলেন। ছিলেন বাংলার বেশ কয়েকজন নামী শিল্পী। অর্থাৎ বাকিবুর চাইলেই কোনও পরিচিত অভিনেত্রীকে নায়িকার ভূমিকায় নিতে পারতেন। আমাদের সন্দেহ অর্পিতা মুখার্জিকে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন প্রভাবশালী কেউ। সেটি পার্থ চ্যাটার্জি নাকি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তা তদন্ত আর একটু এগোলে বোঝা যাবে।’’
‘বোঝা যাবে’ আরও একটি বিষয়। ওই সিনেমায় রেশনে আটা, চাল চুরির টাকা খেটেছে, নাকি চাকরি প্রার্থীদের বঞ্চনা করে অযোগ্যদের ঘুষের বিনিময়ে আদায় করা টাকা?
‘ম্যানগ্রোভ’ তাই রেশন এবং নিয়োগ দুর্নীতির একটি যোগাযোগ প্রান্ত, সন্দেহ এমনই। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে পার্থ এবং অর্পিতা এখন জেল হেপাজতে। অন্যদিকে রাজ্যে পৌরসভাগুলির নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের সময়েই রেশন দুর্নীতির হদিশ পায় এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। অর্থাৎ এই দুর্নীতিগুলি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আগামী দিনে ইডি’র তদন্ত সেই পথেই এগোবে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
শনিবার জ্যোতিপ্রিয়র আপ্ত সহায়ক অমিত দেকে সিরিজ কমপ্লেক্সে প্রায় দশ ঘন্টা জেরা করা হয়। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অমিত বলেন, "বাকিবুরকে  চিনতাম। অফিসে আসতেন।"
শনিবার রেশন দুর্নীতিতে ধৃত বাকিবুর রহমানের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাকে শনিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করা হলে বিচারপতি আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন। তাহলে ধৃত জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বাকিবুরকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার সম্ভাবনা কি আর থাকছে? ইডি’র এক অফিসার বলেছেন, ‘‘জেলে গিয়ে বাকিবুরকে জেরা করার আবেদন আমরা করেছিলাম। আদালত তা মঞ্জুর করেছে। যেহেতু জেল হেপাজতে গিয়ে বাকিবুরকে জেরা করতে হবে তাই বয়ান রেকর্ড করারও প্রয়োজন আছে। বয়ান রেকর্ড করতে গেলে ল্যাপটপ সহ ডিজিটাল ডিভাইসের প্রয়োজন। এই সকল ডিজিটাল ডিভাইস ও প্রয়োজনীয় ল্যাপটপ জেলে নিয়ে যেতে পারব আমরা। আদালত তারও অনুমতি দিয়েছেন।’’
সেই বয়ানের ভিত্তিতে ধৃত জ্যোতিপ্রিয়কে জেরা করবে ইডি, অন্তত এটিই তাদের এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা। অন্যদিকে সোমবারই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক অবস্থা সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে ইডি’কে। সে ক্ষেত্রে রবিবার ইডি’র তদন্তকারীদের একটি দল হাসপাতালে বালুর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে যেতে পারে। জ্যোতিপ্রিয় ভর্তি আছেন ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে শনিবার মেডিক্যাল বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে। বুলেটিনে জানানো হয়েছে, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাইপারগ্লাইকেমিয়া (রক্তে অতিরিক্ত শর্করা), রেনাল ইমপিয়ারমেন্ট (কিডনির অসুখ), ডাইসিলেক্‌ট্রোলিটেমিয়া, প্রি-সিঙ্কোপ (জ্ঞান হারানোর অনুভূতি) প্রভৃতি রোগ ধরা আছে। সেই অনুসারে চলছে চিকিৎসা। বুলেটিনে জানানো হয়েছে, জ্যোতিপ্রিয়র হাইপারটেনশনও আছে। এদিন ধৃত মন্ত্রীর হৃদযন্ত্র এবং স্নায়ু বিষয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। মেরুদণ্ডের পরীক্ষা হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়কে আধা তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বনমন্ত্রীর ‘হল্টার মনিটরিং’ও শুরু করা হয়েছে— হৃদযন্ত্রের উপর নজর রাখতে। শুক্রবার আদালতেই জ্যোতিপ্রিয় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বিচারপতি তার নির্দেশ শোনানোর ঠিক আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রেশন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত জ্যোতিপ্রিয়। 
এদিন আদালতে হাজির হয় কমান্ড হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। বিচারপতি শুক্রবার ইডি’কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে এবং তদন্তকারী অফিসাররা চাইলে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে কমান্ড হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো যাবে। সেই নির্দেশ পরিবর্তন করার আরজি জানিয়েই এদিন আদালতের শরণাপন্ন হয় কমান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য, এখনই হাসপাতালের উপর বেশ চাপ রয়েছে। তাছাড়া হাসপাতালে সেনাকর্মী, সামরিক বিভাগের আধিকারিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা হয়। যাঁরা যুদ্ধে যান, দেশের জন্য লড়াই করেন, প্রধানত তাঁদের জন্যই কমান্ড হাসপাতাল। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনও রোগীকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয় বলে আদালতে জানায় কর্তৃপক্ষ।  
তবে বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেন, “এই চেয়ার থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটা বদল করতে চাওয়া হচ্ছে কেন?” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, “আপনারা দেশকে সেবা করেন বলছেন। হাসপাতাল তো মানুষের জন্যই।” জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে কমান্ড হাসপাতাল উচ্চ আদালতে যেতে পারে।
 

Comments :0

Login to leave a comment