SBI Electoral Bonds

বন্ড গোপন! তথ্য প্রকাশে সুপ্রিম কোর্টে ফের আরজি

জাতীয়

নির্বাচন কমিশন স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে প্রাপ্ত বন্ড-তথ্য প্রকাশ করার পর রবিবার রাজনৈতিক দলগুলির তরফে প্রাপ্ত বন্ড ভাঙানোর হিসাব বের করার পরও দেখা গেল, বিপুল অঙ্কের বন্ড—তথ্য গোপন থেকে গিয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এই তথ্য কি ইচ্ছা করে গোপন করা হচ্ছে ? 
এবারে গোপন করা সমস্ত বন্ড-তথ্য প্রকাশ করার আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের হলো সুপ্রিম কোর্টে। সিটিজেন রাইট ট্রাস্ট নামে একটি সংগঠন এই মামলা দায়ের করে জানিয়েছে, এখনও দেশে ৯ হাজার ১৫৯টি বন্ড, যা টাকার অঙ্কে ৪ হাজার ২ কোটি, তার তথ্য প্রকাশ করেনি নির্বাচন কমিশন। দ্রুত তা প্রকাশের আবেদন জানানো হয়েছে। এদিকে বন্ড-তথ্য কে গোপন করছে, তা নিয়ে অভিযোগ ও পালটা অভিযোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্কের (এসবিআই) উপর দোষ চেপেছে বেশি। কারণ, এসবিআই বন্ডের আলফা নিউম্যারিক সংখ্যা রবিবার পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে জমা দেয়নি, যার মাধ্যমে কোন বন্ড কে কাকে দিয়েছে, তা শনাক্ত করা সহজ হবে। নির্বাচন কমিশন এর দায় চাপাচ্ছে এসবিআই’র উপর। অন্যদিকে, এদিন নির্বাচন কমিশন যে নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে, তা রাজনৈতিক দলগুলির বন্ড ভাঙিয়ে অর্থ তোলার হিসাব। রাজনৈতিক দলগুলিই এই হিসাব জমা দিয়েছিল কমিশনের কাছে। রাজনৈতিক দলগুলি তাদের বন্ড ভাঙানার পুরো তথ্য না দেওয়ায় তা প্রকাশ করা যায়নি বলে কমিশন দায় এড়াচ্ছে। বন্ড-তথ্য গোপন করা নিয়ে তাই ফের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। 
এদিকে যেটুকু বন্ড-তথ্য প্রকাশ হয়েছে, তা নিয়ে নাজেহাল বিজেপি। বন্ডের মাধ্যমে তোলাবাজির অপরাধ গোপনে স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বন্ড বিক্রির যে অঙ্ক  প্রকাশ করেছেন, তাতে বন্ডের অঙ্ক নিয়ে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। শাহ ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভে গিয়ে জানিয়েছেন, ২০ হাজার কোটি টাকার বন্ড বিক্রি হয়েছে এবং তাতে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকা। তা বন্ডে জমা পড়া মোট অর্থের মাত্র ৩০ শতাংশ। শাহর হিসাব ঠিক নয়। কারণ, নির্বাচন কমিশন এসবিআই থেকে বন্ড-তথ্য পেয়ে তা প্রকাশ করে জানিয়েছিল, মোট ১২ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকার বন্ড বিক্রি হয়েছে। বন্ডের এই  অর্থের ৪৭.৪৬ শতাংশ পেয়েছে বিজেপি। স্বভাবতই শাহর বন্ড নিয়ে তথ্যে বিভ্রান্তি বেড়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন ও অমিত শাহর তরফে বন্ড নিয়ে যে সময়ের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেই সময়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে বন্ড নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে— অমিত শাহ বা নির্বাচন কমিশন কারও বন্ড তথ্য ঠিক নয়। আরটিআই’র তথ্য জানাচ্ছে, মোট বন্ড বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার ৩০টি, যার আর্থিক পরিমাণ ১৬ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এদিন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বন্ড নিয়ে  প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বন্ড হলো মোদী-শাহর কালো টাকা তোলার হাতিয়ার। মোদী বলেছিলেন, বিদেশে যে কালো টাকা পাচার হয়েছে, তা উদ্ধার করে প্রতি ভারতবাসীর অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়া হবে। তা একটু বদল হয়ে বন্ডের মাধ্যমে সব কালো টাকা এখন বিজেপি’র অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কালো টাকার তথ্য গোপনে মোদীর দল মরিয়া। তাই দেখা যাচ্ছে, বন্ড নিয়ে বড় অংশের তথ্য আজও গোপন করার তৎপরতা চলছে।
এদিন সুপ্রিম কোর্টে সব বন্ড-তথ্য প্রকাশ করার আবেদনের প্রসঙ্গে সিটিজেন রাইট ট্রাস্ট জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন রবিবার পর্যন্ত যে বন্ড-তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে মোট বন্ডের ৭৬ শতাংশ তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। বন্ড নিয়ে ২৪ শতাংশ তথ্য আজও প্রকাশ করা হয়নি। ট্রাস্ট আরও জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলি ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর থেকে যে বন্ড পেয়েছে এবং তার যতটা ভাঙিয়েছে, প্রাপক দলগুলির কাছ থেকে তার তথ্য পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। কারণ, এই নিয়ে আদালতে মামলা চলায় পুরো তথ্য জমা হয়নি। এবারে যেহেতু তথ্য প্রকাশে কোনও বাধা নেই, তাই তাদের উচিত সব তথ্য প্রকাশ করা। সেই কারণে ২০১৮ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত যে বন্ড কেনা হয়েছে, তার তথ্য প্রকাশ করতে হবে। তা তারা প্রকাশ করছে না। ট্রাস্টের অনুমান, এই সময়কালে মোট ৯ হাজার ১৫৯টি বন্ড বিক্রি হয়েছে, তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। এর পরিমাণ যা টাকার অঙ্কে হবে ৪ হাজার ৯ কোটি টাকা।
এদিকে বন্ড-তথ্য গোপনে মোদী সরকারের প্রথম থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানান কংগ্রেস মুখপাত্র রমেশ। সুপ্রিম কোর্ট এই বন্ডকে অসাংবিধানিক জানিয়ে তা বাতিল করে দেয়। এরপরেই বন্ডের সমস্ত তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। এসবিআই-কে সব তথ্য নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন কমিশনকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। মোদীর চাপে নির্বাচনের আগে তা প্রকাশ করতে চায়নি এসবিআই। ফের সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে তা জমা দিতে বলে। তখন এসবিআই তথ্য জমা দিলেও তার আলফানিউম্যারিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি। তাতে কোন বন্ড কাকে দেওয়া হয়েছে, তার তথ্য আড়ালে থেকে যায়। তারপরে ফের সুপ্রিম কোর্ট এসবিআই-কে সেই নম্বর প্রকাশের নির্দেশ দেয়। শনিবার তা জমার দেওয়ার কথা থাকলেও তা জমা পড়েনি। এদিন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলির থেকে প্রাপ্ত বন্ড ও তাতে পাওয়া অর্থের হিসাব প্রকাশ করেছে।
এদিন রমেশ বলেন, বন্ড হলো মোদীর কালো টাকা তোলার চক্র। তার তথ্য যেনতেনপ্রকারেণ গোপন করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বন্ড নিয়ে যা তথ্য প্রকাশ হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, বন্ডের ক্রেতা ১৯টি কোম্পানির মধ্যে ১৮টি কোম্পানির বিরুদ্ধে বেআইনি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্ত চলার সময়ে তারা মোট ২ হাজার ৭১৭ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। তারা বন্ড কেনার কয়েক মাস পরেই তাদের বিরুদ্ধে ইডির সব তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। এই টাকার পুরোটাই তোলাবাজির কালো টাকা। মোদীর বাহিনী দেশ জুড়ে এভাবেই বন্ডের মাধ্যমে কালো টাকা তুলে দলের তহবিলে জমা করেছে। তিনি তথ্য উল্লেখ করে বলেন, দেশ ৪৩টি কোম্পানির নাম রয়েছে, যারা ৩৮৪ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। ২০১৯ সালে বন্ড চালু হলেই এই ৪৩টি কোম্পানি গজিয়ে ওঠে। সবগুলোই শেল কোম্পানি বা শিখন্ডী কোম্পানি। তারা নামেই কোম্পানি। তাদের ব্যালেন্স শিটে এক টাকা মুনাফা দেখা যায়নি। এই পুরো টাকাটা হলো কালো টাকা, এটাও শাসক দলেই জমা পড়েছে। তিনি বলেন, এই কালো টাকা কাদের তহবিলে ঢুকেছে, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্তের আবেদন জানাবে কংগ্রেস।

Comments :0

Login to leave a comment