Salim

লুটতন্ত্র ভেঙে মানুষের হাতে পঞ্চায়েত ফেরান : সেলিম

রাজ্য

পার্থপ্রতিম কোঙার : বর্ধমান
 

এজেন্সি দিয়ে কোটি কোটি টাকায় যাঁরা নিজেদের কৃত্রিম ভাবমূর্তি তৈরি করে নেতা হয়েছিলেন, তাঁরা মানুষকে জীবন-জীবিকার যন্ত্রণা থেকে স্বস্তি দেবেন কী করে! ওঁরা তো নিজেরাই আইনের হাত থেকে বাঁচতে কোটি টাকা খরচে উকিল লাগিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন এবং প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন।
প্রয়াত সিপিআই(এম) নেতা মদন ঘোষ স্মরণে শুক্রবার বর্ধমান শহরে আয়োজিত এক সভায় একথা বলেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘কমরেড মদন ঘোষের মতো যে কমিউনিস্টরা সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে সারা জীবন মানুষকে সংগঠিত করতে সচেষ্ট ছিলেন, আমরা তাঁদের স্মরণ করেই মানুষের সংগ্রামকে শানিত করার শপথ নিই। আর যারা বিলাসবহুল তাঁবু খাটিয়ে এজেন্সিকে দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে ইমেজ বিল্ডিং করে লুট চালায়, তাঁরা কোটি কোটি টাকার উকিল লাগিয়ে আইনের পথে, নাহলে নাগপুরের সঙ্গে লাইনের পথে স্বস্তি খুঁজছে।’’
ইডি এবং সিবিআই’র জেরা ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির আবেদন খারিজ হয়েছে এদিন। সেলিম বলেছেন, একজন ব্যক্তিকে জেরা করা ঠেকাতে রাজ্য সরকারের টাকায় নিযুক্ত উকিল আদালতে কেন গিয়েছিল? বিচারপতিরা অবশ্য তাঁকে চুপ করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা জানি, সিবিআই বা ইডি সব চোরকে ধরবে না। আমরা বলছি, দুর্নীতির তন্ত্র ফাঁস করতে হবে। বিচারের বাণী যাতে নীরবে নিভৃতে না কাঁদে, তার জন্য এক কোটি মানুষের সই সংগ্রহ করে আমরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে যাবো। বামপন্থী কর্মীরা যেখানেই মানুষের কাছে যাচ্ছেন, সেখানেই সাড়া পাচ্ছেন। হাল ফেরাতে হলে লাল ফেরাতে হবে, এটা মানুষ বুঝতে পারছেন।
কমরেড মদন ঘোষের স্মরণসভায় এদিন বর্ধমানের 'সংস্কৃতি' প্রেক্ষাগৃহ উপচে পড়েছিলো ভিড়ে। প্রয়াত নেতার প্রতিকৃতিতে সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ, বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ, তাঁর স্ত্রী সোমা ঘোষ ও পরিবারের সদস্যরা মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। সভাপতিত্ব করে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সিপিআই(এম) নেতা অমল হালদার। মহম্মদ সেলিম ছাড়াও পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী ও অঞ্জু কর প্রয়াত মদন ঘোষের স্মৃতিচারণা করেন। মহারানী কোঙার, অচিন্ত্য মল্লিক সহ পার্টির নেতৃবৃন্দও সভায় উপস্থিত ছিলেন। 
এদিন সেলিম বলেছেন, কমরেড মদন ঘোষ সারা জীবন মাটিতে পা দিয়ে থেকেছেন। কৃষক আন্দোলন থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে থেকেছেন। আজকের দিনে গ্রামসভা থেকে বিধানসভা, লোকসভার মতো মানুষের প্রতিনিধিত্বমূলক সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধংস করা হচ্ছে। ‘নবান্ন’ থেকে ‘ছাপ্পান্ন’কে আলাদা বলে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু মানুষ দেখছেন, কোন ফারাক নেই। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করেন না, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন না, সংসদে প্রশ্নের উত্তর দেন না।  প্রশ্নে ভয় পান। এখানকার মুখ্যমন্ত্রীও প্রশ্ন সহ্য করেন না। কলেজ ছাত্রীর প্রশ্ন শুনেও তিনি উঠে চলে গিয়েছিলেন। এটাই তো স্বৈরতন্ত্র। মোদী সংসদ ধ্বংস করছেন। মমতা এরাজ্যে গণতন্ত্র কাড়ছেন। বিধানসভায় কে তৃণমূল, কে বিজেপি তার ঠিক নেই। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসেই বাস্তুঘুঘুর বাসা ভাঙতে পঞ্চায়েতী ব্যবস্থায় গ্রামসভা করে ছিল, তৃণমূল সেটাও তুলে দিয়েছে। আজ লুটতন্ত্র কায়েম হয়েছে পঞ্চায়েতে। এই লুটতন্ত্র ভেঙে মানুষের হাতে পঞ্চায়েতকে ফেরাতে হবে।
আভাস রায়চৌধুরী বলেন, জীবন-জীবিকার প্রশ্নে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ প্রতিবাদ করছেন। কমরেড মদন ঘোষের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে সেই স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভকে সংগঠিত করার কাজ করতে হবে আমাদের বামপন্থী কর্মীদের। তবেই কেন্দ্র এবং রাজ্যে লুটেরা রাজত্বের পরিবর্তন করা যাবে। অঞ্জু কর বলেন, পঞ্চায়েত স্তরে মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত হলে অসংখ্য প্রান্তিক শ্রমজীবী মহিলাকে নেতৃত্বদানের জন্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমরেড মদন ঘোষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ৭৮ সালের বিধ্বংসী বন্যায় দুর্গত মানুষের জন্য বামপন্থী কর্মীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে বর্ধমান জেলা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সাক্ষর জেলা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।
এদিনের সভায় কমরেড মদন ঘোষের ভাই কল্লোল ঘোষের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা দান করা হয় গণশক্তির তহবিলে, মদন ঘোষের স্ত্রী সোমা ঘোষ তা তুলে দেন মহম্মদ সেলিমের হাতে।
এদিন অভিষেক ব্যানার্জিকে জেরা নিয়ে আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, আমরা প্রথম থেকেই বলছি দুর্নীতির তদন্ত করে শেষ দেখে ছাড়তে হবে। কিন্তু কারা প্রতি পদে তদন্তে বাধা দিচ্ছে সেটা মানুষ দেখতে পাচ্ছেন। এটা ভালো যে, সুপ্রিম কোর্ট সেই বাধা মানেনি।
মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লিতে না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিকল্পনা কমিশন তুলে দেওয়া হয়েছে, এখন উন্নয়নের কোন পরিকল্পনা হয় না। নীতি আয়োগের বৈঠকেরও কোন মানে নেই, তাও মুখ্যমন্ত্রী যাবেন বলেছিলেন কেন? দুর্নীতি ঢাকা দেওয়ার জন্য? এখন সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি না পেয়ে আর যেতে চাইছেন না?
রাজ্যের মানুষের নিরাপত্তাহীনতা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশকে আইনের রক্ষক হতে হবে, ভক্ষক হলে মানুষের রোষ থেকে তারাও রেহাই পাবে না। এরাজ্যের পুলিশকে দিয়ে কেবল তৃণমূল-বিজেপি নেতাদের নিরাপত্তা দেওয়ানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কোন নিরাপত্তা নেই। আগে শুনতাম ‘বুড়ি মা’র বাজি ফাটছে, এখন পিসিমার বোমা ফাটছে, তাতে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment