Sikkim Flash Floods

বিপর্যস্ত সিকিমে পর্যটকদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি

জাতীয় রাজ্য

Sikkim Flash Floods

অনিন্দিতা দত্ত


আবহাওয়ার খানিকটা উন্নতি ঘটেছে শুক্রবার। অনুকূল আবহাওয়ায় সিকিমের প্রাকৃতিক দূর্যোগে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধারের কাজ চলছে। জানা গেছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আটকে পড়া পর্যটকদের ইতোমধ্যেই কপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে। বাগডোগরা থেকে লাচুং যাবার জন্য হেলিকপ্টার যাত্রা শুরু করেছে। খরস্রোতা তিস্তার তান্ডবে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখনও বহু মানুষের কোন খোঁজ নেই। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকদের জন্য সিকিমে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতের পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সিকিমের বিভিন্ন এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থাতেই রয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। সিকিমে বেড়াতে আসাটা এই সময়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। উৎসবের মরশুমে সিকিমে বেড়াতে আসার জন্য দেশ বিদেশের বহু পর্যটকরা বুকিং করে রেখেছিলেন। সিকিম সরকারের পক্ষ থেকে পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বুকিং বাতিল করার কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাঙ্গু ও নাথুলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিকিম পর্যটন দপ্তরের তরফেও এই বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। 


সিকিমে হড়পা বানে বানভাসি হয়েছেন সেনা জওয়ান থেকে শুরু করে পর্যটক সহ বহু সাধারণ মানুষ। নিখোঁজ সেনা জওয়ানদের খোঁজ চালানোর পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে উদ্ধারকার্য চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী, তিরঙ্গা মাউন্টেন রেসকিউ টিম, এনডিআরএফও। মাউন্টেন ডগ নামিয়ে তল্লাশি চলছে। আশ্রয়হীন মানুষের জন্য থাকা, খাওয়া সহ প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। 
সিংটামের বারদাংঙে খননকার্যের বদলে কাদার স্তূপ থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে গাড়ি। জানা গেছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ত্রিশক্তি কোরের ইতোমধ্যেই লাচেন, লাচুঙ, চাট্টেন, চুংথাঙ এলাকায় আটকে থাকা সহস্রাধিক পর্যটককে উদ্ধার করেছে। এছাড়াও সিকিমে আটকে রয়েছে হাজার হাজার পর্যটক ছাড়াও নিত্য কাজে যাওয়া অফিসযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এদিন পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক থাকায় হেলিকপ্টারে করে পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। সিকিমের বিরাট প্রাকৃতিক দূর্যোগকে ঘিরে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থা সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। জানা যাচ্ছে, ছোট গাড়ি চলাচলের জন্য সিংটাম ও বারদাংঙের মধ্যবর্তী একটি রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিন সকালে সিংটাম—রংপো রাস্তাটিও চালু হয়েছে। ত্রিবেনীতে তিস্তার চরের রিভার সাইড ক্যাম্পগুলিতে দূরদূরান্তের পর্যটকদের সমাগম লেগেই থেকে। হড়পাবানে বিধ্বংসী তিস্তার জলের তোড়ে ভেসে গেছে ত্রিবেনী রিভার সাইড ক্যাম্পগুলি। ক্যাম্পগুলির কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।


সিকিমের মুখ্যসচিব ভিবি পাঠক জানিয়েছেন, মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফার্মেসি অ্যাসোসিয়েশন সহ অন্যান্য বেশ কিছু সংস্থাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই সিকিম রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। ভারতীয় সেনার কর্নেল অঞ্জন কুমার বাসুমাতারি বলেন, স্যাটেলাইন ফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে করে উদ্ধার হওয়া পর্যটকেরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির ও হেল্প ডেস্কও চালু করা হয়েছে। 
বাংলা সিকিম লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্পূর্ণভাবে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তিস্তা। মঙ্গলবার রাত থেকে সিকিম ও বাংলা যোগাযোগ রক্ষাকারী জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ থাকার কারণে এদিন বিকল্প পথে পর্যটকদের ফেরানো হচ্ছে। গ্যাঙটক, থেকে পেডং, আলগাড়া, লাভা, গোরুবাথান, ডামডিম, সেবক ঘুরে বিকল্প পথে শিলিগুড়িতে যাতায়াত করেছে গাড়িগুলি। গ্যাঙটক থেকে রানিপুল, সিংটাম, রংপো, নামথাঙ, নামচি, জোরথাং, সিংলা হয়েও আরো একটি রূটে এদিন যোগাযোগ রক্ষা করা গেছে। তাতে আট নয় ঘন্টারও অনেকটাই বেশী সময় লাগছে। কিন্তু আটকে থাকা পর্যটকরা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নামতে শুরু করেছেন। ঘুরপথে নেমে আসা আতঙ্কিত পর্যটকরা প্রাণে বেঁচে নিরাপদে ফিরতে পেরে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। প্রশাসনের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবারও ঘুরপথে বেশ কিছু পর্যটক সমতলের শিলিগুড়িতে নেমেছেন। এদিন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সকলেই নিজে নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে ব্যস্ত। 
শিলিগুড়ি থেকে রঙপো পর্যন্ত বেশ কয়েক জায়গায় রাস্তা পুরোপুরিভাবে ধসে গেছে। শিলিগুড়ির অদূরে সেবক থেকে কালিঝোরার মাঝখানে জাতীয় সড়কের একটি বড় অংশ তিস্তার জলে ধসে গেছে। অন্যদিকে কালিম্পঙের মাল্লি থেকে শুরু করে রঙপো পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত রাস্তাতেও একাধিক জায়গায় ধস নেমেছে। একমুখী যান চলাচল শুরু করার লক্ষ্যে ১০ নং জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। তবুও কমপক্ষে ১০/১২দিনের আগে একমুখী যান চলাচলের উপযোগী করে তুলতে কোনভাবেই জাতীয় সড়ক মেরামত করা সম্ভব নয় বলেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি শিলিগুড়ি থেকে লাভা এবং পেডং হয়ে ছোট গাড়ি গ্যাঙটক পর্যন্ত চলাচল শুরু করেছে।


 

Comments :0

Login to leave a comment