Tea Workers Convention

মজুরি বৃদ্ধির দাবি সহ চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে কনভেনশন

রাজ্য

Tea Workers Convention



জমির অধিকার প্রদান, চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবি সহ বাগিচা শ্রমিকদের নানা ইস্যুতে বাগিচা এলাকায় শ্রমিকদের আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার আহ্বান জানালেন চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের নেতৃবৃন্দ। বন্ধ চা বাগান খোলা ও কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক বিরোধী বাজেটের বিরুদ্ধে শনিবার চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়াকে সামনে রেখে জয়েন্ট ফোরামের ডাকে বাগডোগরাতে চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের দপ্তরে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকাশ সেন রায়, বিজয় প্রকাশ কুজুর, মকলেশ্বর রহমান, পবিত্র সিং, স্বপন গুহ নিয়োগীকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমন্ডলী কনভেনশনের কাজ পরিচালনা করেন। 


কনভেনশনের মূল প্রস্তাব উত্তরবঙ্গের বিস্তৃত চা বাগিচার জমি ট্যুরিজম ও অন্যান্য ব্যবসার জন্য নেবার রাজ্য সরকারের নতুন জমি নীতির তীব্র সমালোচনা করে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন জয়েন্ট ফোরামের আহ্বায়ক জিয়াউল আমল। বলেন, চা শ্রমিকদের বাসস্থানের অধিকার ও জমি উদ্ধারের প্রশ্নে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলে জমি রক্ষা করা হবে। আজও চা বাগিচা এলাকায় বসবাসকারী সাধারন মানুষ জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই চা বাগান এলাকায় বসবাসকারী শ্রমিক পরিবারগুলি ও বাগিচা শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সোসাইটিগুলিকে কোনভাবেই জয়েন্ট ফোরাম উচ্ছেদ হতে দেবে না। জমি দখলের প্রশ্নে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এই জমি দখলের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে। শুধু তাই নয়, চা বাগিচা শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমজীবি মানুষের ন্যূনতম মজুরির স্বীকৃতি, তাদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা, উচ্ছেদ ও সরকারী জমি নীতির বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন তিনি। 

 


তিনি আরো বলেন, সরকারী জমি নীতির কারনে একটু একটু করে প্রতিদিন চা শিল্পকে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চা শ্রমিকদের উন্নয়নের টাকার নয়ছয় হয়েছে। কোন উন্নয়ন হয়নি চা শ্রমিক পরিবারগুলোর। কেন্দ্রের বাজেটেও চা শিল্প তথা চা শ্রমিকদের জন্য কোন দিশা দেখা যায়নি। ২০১৪সালে ন্যূনতম মজুরি ঘোষনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো রাজ্য সরকার। কিন্তু আট বছর পরে ২০২৩সালেও ন্যূনতম মজুরি উপেক্ষিত। দ্রব্যমূল্য দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি এক টাকাও বাড়ানো হয়নি। যা অত্যন্ত হতাশাজনক। শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা, রুটিরুজি, চিকিৎসা, জীবন জীবিকার স্বার্থে অবিলম্বে রাজ্য সরকারের তরফে চা শ্রমিক পরিবারগুলির স্বার্থে ন্যূনতম মজুরি ঘোষনা করার দাবি জানাব তিনি।  
কনভেনশনের শুরুতে চা শ্রমিকদের দাবিদাওয়া বিষয়ে দাবি প্রস্তাব পেশ করে চা শ্রমিকদের বসবাসের জন্য জমির অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে শ্রমিক নেতা সমন পাঠক বলেন, জমির অধিকার অন্যতম আমাদের দাবি। শ্রমিকদের অধিকার হরন করা হচ্ছে। ১৫শতাংশ জমি ট্যুরিজম জন্য নেবার সরকারী জমি নীতির বিরুদ্ধে চা বাগানের জমি গ্রাস করা হচ্ছে। দালাল ও পূঁজিপতিদের হাতে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না। চা বাগানের শ্রমিকদের নানা সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করে বাগিচা শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য জমি দখলের তৃণমূল সরকারের ও কর্পোরেট সংস্থাগুলির নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তিনি। 


কর্পোরেট পূঁজিপতিদের দৃষ্টি পড়েছে চা বলয়ের জমির ওপর। তরাই অঞ্চলের বিভিন্ন বাগানে ট্যুরিজমের নাম করে যেভাবে জমি নেওয়া হচ্ছে তাতে আগামী দিনে চা বাগানগুলির অস্তিত্ব নিয়ে সংকট দেখা দেবে। ঘোষপুকুরে কমলা বাগানের সামনে নির্মীয়মান বড় বড় বিল্ডিং, হাঁসখোয়া চা বাগানের জমি নিয়ে প্রমোটারি ব্যবসা চলছে। নিউ চামটা বাগানের ৩০জমির ওপর পাঁচতারা হোটেল নির্মান এই সমস্ত ঘটনার পাশাপাশি তরাই অঞ্চলে চা বাগানের জমিকে কেন্দ্র করে বহু বেআইনী নির্মান ও জমি লুটের ঘটনা প্রসঙ্গ তুলে ধরে কনভেনশনে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে বক্তব্য রাখেন চা শ্রমিক নেতা গৌতম ঘোষ। 


কোনরকম উদ্‌বৃত্ত জমি বা পরিত্যক্ত জমিকে অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা চলবে না এই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এদিনের কনভেনশন থেকে। এছাড়াও বাগিচা শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে এলাকা ভিত্তিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত করা, স্থানীয় দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে বাগানগুলিতে দাবিসনদ পেশ করা সহ বেশ কিছু পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়াও কনভেনশনে অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহন করেন প্রতাপ কুজুর, বাবলু রবি দাস, পিন্টু শর্মা প্রমুখ।
 

Comments :0

Login to leave a comment