চিন্ময় কর: ঘাটাল
সামনের বছর বিধানসভা ভোট। তহবিল ভরাট করতে দেদার মাটি লুট করার অভিযোগ তৃণমূলের মদতপুষ্ট মাটি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। চার দিনে কম করেও পৌনে ১ কোটি টাকার মাটি লুটের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল ব্লকের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুনাথকুন্ডু এলাকার ঘটনা। অভিযোগ ৪-৫ দিন ধরে ১২টি জেসিপি ও ৩০ টির উপর ট্রাক্টর দিয়ে প্রায় ২ কিমি দীর্ঘ সরকারী নিকাশী খালের মাটি লুট সহ দেদার পাচার চলছে। দিন রাত পালা করে মাটি লুঠ চলছে।
মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য এমনই যে বন্দুক সমেত পাহারা বসিয়ে চাষের জমির জল নিকাশির সরকারি খাল কেটে মাটি চুরি হচ্ছে দেদার। নীরব প্রশাসন।
চাষের জমির পাশে ৮-৯ ফুট গভীর করে জেসিবি মেশিন দিয়ে মাটি লুট চলছে। এমন গভীর করে কেটে মাটি তোলায় বর্ষার সময় চাষের জমি নিকাশী খালে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। জমিতে জল ধরে রাখারও সমস্যা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
কৃষকরা রাস্তায় মাটি ভর্তি ট্রাক্টর ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। ঘটনাস্থলে সংবাদমাধ্যম পৌঁছায়। ক্যামেরা দেখে ট্রাক্টর ছেড়ে চালক, কর্মীরা মাঠ দিয়ে ছুটে পালায়।
জেসিবি চালক সৌমেন মুর্মু, অমিত চালক, মাটি ব্যবসায়ী মিসবাবুল ইসলাম,
ইয়াজদানি আলি খানের মতো কয়েকজন ঘেরাটোপে পড়ে গিয়ে বলেন যে ভূমি দপ্তরের অনুমতি আছে। কিন্তু কাগজ নেই। সবই মৌখিক চুক্তিতে হয়। তাঁরাই জানান যে গাড়ি পিছু থানায় মাসিক টাকা দেওয়া হয়।
মাটি মাফিয়াদের সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন ও ভূমি দপ্তরের যোগসাজশের অভিযোগ ফের সামনে এসেছে। অভিযোগ, তৃণমূলের নেতারাই এই যোগসাজশ নিয়ন্ত্রণ করছেন। অভিযোগ, এই মাটি লুটের টাকার অংশ সরাসরি কলকাতা পৌঁছে দেয় মাটি মাফিয়াদের চক্র।
মাটি কাটায় যুক্ত ওই মিসবাবুল ইসলাম স্পষ্ট জানান যে বিএলআরও’র অনুমতি রয়েছে।
এদিকে পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রামের রাস্তার ওপর দিয়ে মাটি বোঝাই গাড়ির দাপাদাপিতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমুল পরিচালিত বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান।প্রধান প্রশান্ত রায় জানান,গ্রাম পঞ্চায়েতের কোন অনুমতি না নিয়েই চলছে মাটির ব্যবসা।
এবিষয়ে স্থানীয় এক কৃষক সাদ্দাম আলি খাঁ বলেন, "ভূমি দপ্তরে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। আগেও একাধিক বার ভূমি দপ্তরে জানিয়েছিলাম।’’
তবে এবার ঘাটালের মাটি চুরির খবর প্রকাশ্যে আসতেই প্রশাসনকে নড়ে বসতে হয়। আধিকারিকরা পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। দু’টি জেসিবি ও চারটি ট্রাক্টর আটক করে জনরোষ সামাল দেন। তবে এসব ‘লোক দেখানো’, বলছেন স্থানীয়রাই।
ঘটনাস্থলে যান ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস, ঘাটাল মহকুমা ভূমি আধিকারিক ও ঘাটাল ব্লক ভূমি অধিকারিক।
ভূমি দপ্তরের আধিকারিকদের দাবি, অবৈধভাবেই এই মাটির কারবার চলছে। একাধিক গাড়ি আটক করা হয়েছে।
Comments :0