দিল্লি সীমান্তে আন্দোলনরত কৃষকদের রাজধানীতে ঢুকতে দেয়নি মোদী সরকার। কিন্তু কৃষকদের প্রতিনিধিদের সংসদে প্রবেশ আটকাতে পারেনি তারা। শুক্রবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছেন সিপিআই(এম) সাংসদ অমরা রাম। একই সঙ্গে কৃষি সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশনের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন। তিনি ১৮তম লোকসভায় কৃষকদের সমস্যা নিয়ে আরও জোরালোভাবে উত্থাপন করা হবে।
রাজস্থানের শিকর কেন্দ্র থেকে জয়ী কৃষক আন্দোলনের নেতা এদিন জানিয়েছেন, গোটা দেশে কৃষি ব্যবস্থার প্রবল সঙ্কট এবং কৃষকদের লাগাতার আন্দোলন, অগ্নিবীর প্রকল্পের মতো ইস্যুগুলি লোকসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর জেরেই সংসদে বিজেপি’র শক্তি এবার কমেছে। এই নির্বাচনে এর মধ্য দিয়ে বিজেপি নেতৃত্বকে শিক্ষা দিতে চেয়েছে ভোটাররা।
ইন্ডিয়া মঞ্চের প্রার্থী হয়ে জয়ী হয়ে আসা অমরা রাম ট্রাক্টর করে প্রথম দিন সংসদ ভবনে ঢুকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে সংসদ ভবনের সামনে আটকে দেওয়া হয়েছিল। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাম বলেন, ২০২০-২১ সালে আন্দোলনের সময় কৃষকদের দেশের রাজাধানীতে প্রবেশ করতে দেয়নি মোদী সরকার। কিন্তু কৃষকরা তাঁদের প্রতিনিধি হিসাবে তাঁকে সংসদে পাঠিয়েছেন। সংসদে তাঁর প্রবেশ আটকতে পারেননি, সেই বার্তা পৌঁছে দিতেই রাজস্থান থেকে ট্রাক্টর চালিয়ে দিল্লিতে এসেছিলেন। এই সরকারের পুলিশ কৃষকদের ট্রাক্টর দিল্লিতে প্রবেশ করতে দেয় না। ট্রাক্টর কোনও ফাইটার জেট বা ট্যাঙ্ক নয় যা সংসদকে উড়িয়ে দেবে। এখানে বড় বড় যন্ত্র আসে, প্রধানমন্ত্রী কোটি টাকার গাড়ি চড়েন। শ্রমিক- কৃষকরা, যাঁরা দেশের জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ, তাঁরা দেশের রাজধানীতে আসতে পারবেন না?
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচন নিয়ে অমরা রাম বলেন, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে গত দশ বছর ধরে দেশজুড়ে শ্রমিক-কৃষকরা ছাড়াও তরুণ সমাজ যে টানা লড়াই সংগ্রাম চালিয়েছে তারই প্রতিফলন ঘটেছে এবারের ভোটে। এই কারণে এবারে বিজেপি’র শক্তি হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালে বিজেপি’র সাংসদ ছিল ৩০৩ জন। কিন্তু সেখান থেকে কমে এবার ২৪০-এ দাঁড়িয়েছে। ১৩ মাস ধরে যে সমস্ত রাজ্যে টানা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন কৃষকরা, সেই পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রেই বিজেপি আসন হারিয়েছে। অগ্নিবীর এবং কৃষকদের ক্ষোভ বিজেপি-কে শিক্ষা দিয়েছে। একথা উল্লেখ করে অমরা রাম বলেছেন, এর থেকে বিজেপি শিক্ষা না নিলে মানুষ ফের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হবেন। এই ইস্যুগুলি নিয়ে সংসদের ভিতরে জোরালোভাবে উত্থাপন করা হবে।
দেশের কৃষি সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অমরা রাম বলেছেন, কৃষকরা ফসলের সঠিক দাম পাচ্ছেন না। অথচ সাধারণ মানুষকে কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে কৃষিপণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি কাউকেই সাহায্য করছে না। এই বিষয়ে এনডিএ সরকারের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে কৃষকদের সস্তা শ্রমিকে পরিণত করার অপচেষ্টা চালচ্ছে তারা। মোদী সরকারের নীতি এবং তাদের মনোভাবের কারণেই এই সমস্যা গুরুতর আকার নিয়েছে। কৃষকরা যাতে বড় বড় কর্পোরেটদের সামনে ভিক্ষার থালা নিয়ে দাঁড়াতে বাধ্য হন সেই উদ্দেশ্য নিয়ে মোদী সরকার নীতি গ্রহণ করছে। কৃষি সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশনের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছেন অমরা রাম। অবিলম্বে এই বিষয়ে অধিবেশন ডাকতে, বিরোধীরা সরকারের উপর চাপ তৈরি করবে। তিনি বলেন, কৃষি সঙ্কটের কারণে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু কৃষকই নন, শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কী ভাবে এর সমাধান করা উচিত তা খুঁজে বের করতে একটি বিশেষ অধিবেশন হওয়া প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
Comments :0