EDITORIAL

কেন্দ্রের অনুকরণেই রাজ্যের শিক্ষানীতি

রাজ্য

রাজ্যে শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য একাধিক কমিটি গঠিত হলো। কোনও কমিটির সুপারিশই সামনে এল না। তা নিয়ে কোনও আলোচনা হলো না। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলের কোনও অভিমত নেওয়া হলো না। কিন্তু রাজ্যের শিক্ষানীতি মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হয়ে গেল। এখন দেখা যাচ্ছে, এই শিক্ষানীতি কেন্দ্রীয় সরকারের বহুবিতর্কিত জাতীয় শিক্ষানীতিরই অনুরূপ। একই ধাঁচে, একই কায়দায় রাজ্যের শিক্ষা কাঠামো বদলের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। 
জাতীয় শিক্ষানীতির অনুকরণেই মাধ্যমিক স্তরে চালু হচ্ছে সেমিস্টার পদ্ধতি। উচ্চমাধ্যমিকেও তাই। সেমিস্টার পদ্ধতি হিসাবে খারাপ নয়, কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাবে কিনা তা নিয়ে শিক্ষা মহলের প্রশ্ন রয়েছে। এর ফলে উলটে সাধারণ ঘরের ও কম বিত্তের ছাত্রদের ঘাড়ে বোঝা চাপবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ছাত্রদের পড়াশোনা এগিয়ে নেওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। রাজ্যের নতুন শিক্ষানীতিতে বাচ্চাদের প্রি-প্রাইমারি পড়তে হবে ১ বছরের আর চার বছরের প্রাইমারি ক্লাস হবে। ভাষা সূত্র কী হবে, তা নিয়ে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত নেওয়া হয়নি। বিতর্ক তৈরি হবে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কাঠামো পালটাচ্ছে। সেমিস্টার পদ্ধতি এবং এমসিকিউ ধাঁচে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। এই পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি আগেই মেনে নিয়ে তিন বছরের পরিবর্তে চার বছরের স্নাতক অনার্স চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ছাত্র-ছাত্রীরা স্নাতকে কিছু বিষয়কে ‘মেজর’ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর ৩ বছরে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এলে মিলবে ‘মেজর গ্র্যাজুয়েট’ ডিগ্রি। যদি ৪ বছরে এই কোর্স শেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন, তাহলে মিলবে ‘অনার্স গ্র্যাজুয়েট’ ডিগ্রি। অর্থাৎ চার বছরের পরেই কেবলমাত্র সাম্মানিক নিয়ে স্নাতক হওয়া যাবে। রাজ্যের শিক্ষানীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক বেসরকারিকরণের রাস্তা প্রশস্ত করা। সরকার-পোষিত স্কুলগুলিও বেসরকারি হাতে চলে যেতে পারে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে এই বেসরকারিকরণের রাস্তা উন্মুক্ত করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই রাজ্যও বেসরকারিকরণের রাস্তা খুলে দিচ্ছে। এই শিক্ষানীতিতে গরিব-বিত্তবানের ফারাক বাড়বে। সঙ্কুচিত হবে শিক্ষার সুযোগ। 
এমন এক সময়ে এই শিক্ষানীতি চালু হচ্ছে যখন রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ ডামাডোল চলছে। হাজার হাজার স্কুল বন্ধ হবার মুখে। ছাত্র সংখ্যা ক্রমশ কমছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে শিক্ষকের সঙ্কট চলছে। উচ্চশিক্ষায় নৈরাজ্যের অন্ধকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই। কে উপাচার্য নিয়োগ করবেন তা নিয়ে দড়ি টানাটানির খেলা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। ছাত্র ও অধ্যাপকরা অসহায় বোধ করছেন। স্কুল প্রশাসনের শীর্ষকর্তারাও কেউ জেলে, কেউ অভিযুক্ত, কেউ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। 
এই শিক্ষানীতি নিয়ে গণতান্ত্রিক সকল অংশের মানুষের আলোচনা ও সমবেত প্রতিবাদ গড়ে তোলা প্রয়োজন।

Comments :0

Login to leave a comment