ভোট মোটেই ইন্ডিয়া মঞ্চ বনাম মোদীর হচ্ছে না। এবারের ভোট হচ্ছে মোদী বনাম জনগণের। আর একারণেই দফায় দফায় ফিকে হয়ে যাচ্ছেন মোদী। সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এখনও পর্যন্ত পাঁচ দফার ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কীভাবে দেশবাসীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, তা সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। তাঁর অভিমত, ‘বিশ সাল বাদ’ ২০০৪ সালের সেই ‘লহর’ দেখা যাচ্ছে। ৪ জুন জনগণের সুস্পষ্ট রায় প্রত্যক্ষ করা যাবে ইন্ডিয়া মঞ্চের পক্ষেই। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও জোর গলায় জানিয়েছেন, বিজেপি’র ফের ক্ষমতায় আসার আর সম্ভাবনা নেই। মোদী যে আর ফিরছেন না একথা জোর গলায় বলেছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। রমেশ, খাড়গের মতো এই দুজনের বক্তব্যেরও নির্যাস, মোদীর চলে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
দেশের সমস্ত অংশের মানুষে কীভাবে প্রতিটি ভোটেগ্রহণে প্রত্যাখ্যান করছেন মোদীকে তা বোঝাতে গিয়ে রমেশ বলেছেন, ‘দেশের জনগণই ইন্ডিয়া মঞ্চকে ভোট দেওয়া চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এটা মোদী বনাম জনগণের ভোট হচ্ছে। এটা কৃষক বনাম মোদী, মহিলা বনাম মোদী, শ্রমিক বনাম মোদী, যুব সম্প্রদায় বনাম মোদী, এসসি-এসটি-ওবিসি বনাম মোদীর ভোট হচ্ছে। আসলে জনগণ ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে মোদীর বিরুদ্ধে। সঙ্গে এই বার্তাই পৌঁছে দিয়েছে যে, আপনি একজন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী এবং ৪ জুন আপনার বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যাবে।’ তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, দক্ষিণে ‘সাফ’, উত্তর-পশ্চিম-পূর্বে ‘হাফ’ হয়ে যাবে বিজেপি। শ্রমিক এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবার্তা থেকেই একথা বলছি।
‘৪০০ পারের’ হুঙ্কার দিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন মোদী সহ বিজেপি নেতারা। ভোট গ্রহণ শুরু হতেই ‘বিকশিত ভারত’ কিংবা ‘৪০০ পারের’ স্লোগান থেকে বহু হস্ত দূরে সরে গিয়ে ‘হিন্দু-মুসলমান’, ‘পাকিস্তান’র মতো প্রিয় বিষয়কেই আঁকড়ে ধরে ভোট বৈতরণী পেরনোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন এখন মোদীরা। বস্তুত, বিজেপি’র তৈরি করা দেওয়া এজেন্ডা নয়, উলটে মোদী এখন ছুটছেন বিরোধীদের ভাষ্য খণ্ডনের পিছনে। একথারই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রমেশ বলেছেন, ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটের পর থেকেই প্রচারের ঢঙ বদলে ফেলেন মোদী। তিনি ‘বিকশিত ভারত’ স্লোগান থেকে সরে গিয়ে হিন্দু-মুসলমান, মঙ্গলসূত্র, ধর্মভিত্তিক-সংরক্ষণ, মোষ—এসব বলতে শুরু করেন একটা ‘সাম্প্রদায়িক পিচ’ তৈরির লক্ষ্যে। একথা বলতে গিয়ে রমেশ বেশকিছু ক্রিকেটীয় শব্দ ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, মোদী ‘সাম্প্রদায়িক পিচে’ আমাদের খেলতে পাঠিয়েছিলেন। সেই পিচে উনি একটার পর একটা গুগলি, বাউন্সার দিলেও ইন্ডিয়া মঞ্চের নেতারা সেগুলি আগাম আঁচ করেই খেলে গিয়েছেন। তবে আমরা সেই মাঠ থেকে থেকে সরে না গিয়ে এর পালটা গুগলি দিয়েছি ‘পাঁচ ন্যায়, পঁচিশ গ্যারান্টি’ দিয়ে। রমেশের মতে, পাঁচ দফাতেই দেওয়াল লিখন পড়তে পেরেছেন মোদী। তিনি ৪০০ পার, বিকশিত ভারত স্লোগান সব ভুলে গিয়েছেন। এখন তাঁর যাওয়ার সময়, ক্ষমতায় আসছে ইন্ডিয়া মঞ্চই।
রমেশের মতোই খাড়গে গোটা দেশে প্রচার করে তাঁর যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেকথা বলেছেন পিটিআই-কে। খাড়গে বলেছেন, ‘সারা দেশ ঘুরে তিনি অনুভব করেছেন যে একটা শক্তিশালী চোরাস্রোত বইছে ইন্ডিয়া মঞ্চের পক্ষে। এবার বহু আসন পাবে কংগ্রেস সহ ইন্ডিয়া মঞ্চের দলগুলি। আমরা বিজেপি’র ক্ষমতায় আসার প্রয়োজনীয় আসন আটকে দিতে পারব। আমার ধারণা, বিজেপি আর ক্ষমতায় আসছে না।’
আবার ইয়েচুরি মোদীর পরাজয় আড়ালে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে কটাক্ষ করতে গিয়ে বিজেপি সরকারের পতন যে আসন্ন সেকথা তুলে ধরেছেন এক্স হ্যান্ডেলে। তিনি বলেছেন, মোদীর প্রতি অসন্তোষের প্রতিফলন ঘটছে ভোটের হার কমায়। অথচ নির্বাচন কমিশন রাজার থেকেও বেশি অনুগত প্রকাশে এতটাই মরিয়া যে যাবতীয় কারিকুরি করে এনডিএ’র অবশ্যম্ভাবী হারের মুখোশ পরাতে চাইছে। আবার কেজরিওয়াল এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে জোরের সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, প্রতিটি ভোটের পর আরও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে মোদীর চলে যাওয়া আর দেরি নেই। ৪ জুন ইন্ডিয়া মঞ্চই জয়ী হবে এবং দেশকে একটি স্থায়ী সরকার উপহার দিতে সক্ষম হবে।
উত্তর প্রদেশ দিয়ে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ যাওয়ার সময় প্রতিটি শহর-গ্রামে যে বিপুল উৎসাহ লক্ষ্য করা গিয়েছিল, তার ভিত্তিতেই ওই রাজ্যে এবার ‘নাটকীয় পরিবর্তনের’ সম্ভাবনা দেখছেন কংগ্রেস সহ ইন্ডিয়া নেতৃত্ব। এমনকি অতি সম্প্রতি রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কিংবা সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ সিং যাদবের সমাবেশগুলিতে মানুষের বিপুল সাড়া দেখা যাচ্ছে। ফুলপুরে অথবা এলাহাবাদে গত রবিবার রাহুল গান্ধী-অখিলেশের যৌথ সমাবেশ ভিড়ের চাপে করা যায়নি। পদপিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। একারণেই রমেশ ২০০৪ সালে যেমন অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারকে হটাতে দেশজুড়ে ঝড় উঠেছিল সেই ‘লহর’ এবার আবার দেখা যাচ্ছে বলে জানান সাক্ষাৎকারে। এপ্রসঙ্গে ১৯৬২ সালে মুক্তি পাওয়া জনপ্রিয় হিন্দি ছায়াছবি ‘বিশ সাল বাদ’-এর কথা টেনে বলে দেন, কুড়ি বছর বাদে আবার সেই ‘মুহূর্ত’ উপস্থিত বলে জানান রমেশ। তাঁর বক্তব্য, মোদী সম্পর্কে অসন্তোষ বেড়েছে এবং মোহও কেটে গেছে। জনগণ তাঁকে নিয়ে বিরক্ত। তিনি ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছেন।
INDIA Bloc's
দফায় দফায় ফিকে হয়ে যাচ্ছেন মোদী স্পষ্ট অভিমত ‘ইন্ডিয়া’ নেতৃত্বের
×
Comments :0