অভিষেক ব্যানার্জির রাজনৈতিক সমাবেশেরও এখন খরচ করছে রাজ্য সরকার!
গত ২৯ মার্চ শহীদ মিনারে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র ও যুব সংগঠনের সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। পুরোদস্তুর রাজনৈতিক এই কর্মসূচির জন্য শহীদ মিনারকে সাজিয়ে তোলার খরচ এসেছে সরকারের কাছ থেকে। পূর্ত দপ্তরের তরফ থেকে রীতিমতো টেন্ডার করে শহীদ মিনার ময়দানকে সমাবেশের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। পূর্ত দপ্তর সূত্রের খবর, ২৯ মার্চ শহীদ মিনার ময়দানে তৃণমূল সাংসদের সভার জন্য ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়েছে।
২৯ মার্চ শহীদ মিনার লাগোয়া রেড রোডে ধরনায় বসেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ধরনায় বসার শুরুতে দাবি করেছিলেন। কিন্তু ধরনা শুরুর ঘন্টা দুয়েক পরেও সুর বদলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই ধরনা কর্মসূচি দলের। কিন্তু তার আগেই পূর্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে রেড রোডে মমতা ব্যানার্জির ধরনার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। পরে সরকার থেকে দলের কর্মসূচিতে ধরনা বদলে গেলেও রেড রোডের ধরনার সব খরচ রাজ্য সরকারকেই জোগাতে হয়েছে। কিন্তু ওই দিনই শহীদ মিনারে অভিষেক ব্যানার্জির সমাবেশ আগাম রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসাবেই ঘোষণা করা হয়েছিল। তৃণমূল যুব কংগ্রেস ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আহ্বানে কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশের মূল বক্তা হিসাবে ছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি। রাজনৈতিক এই সমাবেশের খরচ কীভাবে সরকারি টাকায় সম্পন্ন করা হয়েছে তা নিয়েই প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। পূর্ত দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা এই নিয়ে কেউই মুখ খুলতে চাননি। বিষয়টি খোঁজ নিতে হবে বলে এড়িয়ে গেছেন রাজ্যের পূর্ত মন্ত্রী পুলক রায়ও।
অভিষেক ব্যানার্জির সভার জন্য গত ২৫ মার্চ টেন্ডার আহ্বান করেছিল পূর্ত দপ্তর। তিনটি ধাপে শহীদ মিনার ময়দানকে সাজিয়ে তোলার জন্য ডাকা হয়েছিল টেন্ডার। কী কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল? দরপত্রে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, শহীদ মিনার ময়দানে বসাতে হবে শক্তপোক্ত ‘ভিউ কার্টার’। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দৃশ্য যাতে আড়ালের মধ্যে রাখা যায় তারজন্যই এই কাজের টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে শহীদ মিনার ময়দানে ওয়াচ টাওয়ার ও ‘বাফার ব্যারিকেড’ দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কাজেরও বরাত দেওয়া হয়েছিল।
দ্বিতীয় কাজের জন্য টেন্ডারে বলা হয়েছিল, সমাবেশের জন্য শহীদ মিনার ময়দানকে পরিষ্কার পরিচ্ছন করে দেওয়া। ময়দান থেকে সমস্ত আবর্জনা, বর্জ্য পদার্থ ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাবিশ পরিষ্কার করে ময়দানের মাঠকে সমাবেশে আসা মানুষের কাছে উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এরইসঙ্গে রেড রোড এলাকায় অস্থায়ী প্যান্ডেল ও ব্যারিকেড তৈরি করে রাখার জন্যও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। সাধারণভাবে পূর্ত দপ্তরের কোনো কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করলে দপ্তরের ওয়েবসাইটে তার বিবরণ থাকে। কিন্তু অভিষেক ব্যানার্জির সভার প্রস্তুতি পর্বের জন্য এই টেন্ডার কার্যত লোকচক্ষুর আড়ালেই রাখা হয়েছিল।
২৭ মার্চ দুপুর ১২টায় দরপত্র জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। দুপুর ২টার মধ্যে সেই পর্ব শেষ করে দ্রুততার সঙ্গে ‘স্পট বিড’র মাধ্যমে কাজের বরাত তুলে দেওয়া হয়েছিল ঠিকাদার সংস্থাকে। কাজের শর্ত হিসাবে সমাবেশের আগের দিন অর্থাৎ ২৮ মার্চ বিকাল ৫টার মধ্যে শহীদ মিনার ময়দানকে সমাবেশের উপযোগী করে সাজিয়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল।
শহীদ মিনার ময়দানে তৃণমূল কংগ্রেসের পুরোপুরি রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে শুরু থেকেই টানাপোড়েন চলছিল। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে শহীদ মিনার ময়দানের একাংশে ডিএ’র দাবিতে, শূন্যপদে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের দাবিতে আগে থেকেই অবস্থান চালাচ্ছিলেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। তৃণমূলের সভার জন্য প্রথমে ডিএ আন্দোলনকারীদের ২৯ মার্চ উঠে যাওয়ার কথা বলেছিলেন কলকাতা পুলিশ। কিন্তু নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ফলে বিপুল টাকা খরচ করে সাংসদের সভার জন্য প্রস্তুতি করতে হলো সরকারকে।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক সভারও খরচ এখন বহন করছে রাজ্য সরকার। যে সভা থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সমাবেশ করছে রাজ্যের শাসকদল, সেই সভার খরচ জোগাচ্ছে রাজ্য সরকার। ঘটনা হলো, রাজ্য প্রশাসনের কোনো পদে না থাকলেও সরকারি কাজে সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির হস্তক্ষেপ নতুন কোনো ঘটনা নয়। এর আগে গত জানুয়ারি মাসের তাঁর ডায়মন্ডহারবার সাংসদ এলাকার জন প্রতিনিধি ও আধিকারিক নিয়ে ৩২১ জনকে নিয়ে বজবজে সভা করেছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রীর মতো প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকের কায়দায় সাংসদের ওই সভার জন্য সরকারি নির্দেশিকা জারি করেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা। কিন্তু এবার সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে সাংসদের রাজনৈতিক সমাবেশের প্রস্তুতি খরচ হলো সরকারি টাকায়।
Comments :0