TMC Leader Arrested

প্রতিরোধী মানুষের বিরুদ্ধেই কড়া মামলা, গ্রেপ্তার ৫

রাজ্য

TMC Leader Arrested


অনির্বাণ দে: ডোমকল


কোমরে পিস্তল গুঁজে ব্লক অফিসে গিয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন বানচাল করতে গিয়েছিল নেতার বেশে তৃণমূলী দুষ্কৃতী বাসির মোল্লা। পরে ক্ষিপ্ত জণেনের প্রতিরোধী মেজাজের চেহারা দেখে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হলেও ধৃত নেতার বিরুদ্ধে লঘু ধারাতেই মামলা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আদালতে পুলিশ ধৃতকে জেরা করার জন্য নিজেদের হেপাজতেও চায়নি। 
অন্যদিকে, শনিবার শাসক তৃণমূলী দুষ্কৃতী বাহিনীর হামলা ঠেকিয়েই মনোনয়ন তোলা ও জমা দেওয়ার ঘটনার পরেই ডোমকল থানায় পালটা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে। সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস যৌথভাবে সন্ত্রাস, খুনের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। জনৈক তৃণমূল কর্মী মোমিন মণ্ডলকে দিয়ে এফআইআর করানো হয়েছে। 
পুলিশও যেন বসে ছিল এমন এফআইআর’র অপেক্ষায়। সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসের ৫২ জন কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফআইআর। পাঁচটি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। অধিকাংশই জামিন অযোগ্য ধারা। রয়েছে অবৈধ জমায়েত, মারধর, অস্ত্র দিয়ে আঘাত, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি খুনের চেষ্টার অভিযোগও।


আর সেই তৃণমূলের সাজানো এফআইআর’র ভিত্তিতেই পাঁচজন সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস কর্মীকে তড়িঘড়ি গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবারের প্রতিরোধ করে মনোনয়নের ঘটনাকে ‘খুনের চেষ্টার ’ অভিযোগের ধারা সহ তাঁদের জামিন অযোগ্য ধারা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার বহরমপুরে আদালতে তোলা হয়। পাঁচজনকেই ১৯ জুন পর্যন্ত জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে ধৃত তৃণমূল নেতা, অথচ তার বিরুদ্ধে সাধারণ মামলা। এমনকি সেই ঘটনার ভিডিও দেখেছে সারা রাজ্য। আর, আক্রান্ত হয়ে প্রতিরোধে শামিল হওয়া সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস কর্মীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা ও গ্রেপ্তার। কার্যত তৃণমূল কর্মীদের ভূমিকাতেই যেন এখন অভিনয় করছে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ। 
বাসির মোল্লা ডোমকলের সারাংপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি। এলাকায় দুষ্কৃতী হিসাবেই পরিচিত মুখ। এর আগেও অপরাধের ঘটনায় জেল খেটেছে। বিপুল টাকার মালিক বর্তমানে। যদিও শনিবার ডোমকলে তীব্র প্রতিরোধের ঘটনার পরেই শাসক তৃণমূলের নেতারা অস্বীকার করতে শুরু করেন যে বাসির মোল্লা তাদের দলের অঞ্চল সভাপতি। গ্রেপ্তার করলেও এরপর পুলিশের কাছে বার্তা যায়। কারণ এই বাসির মোল্লার মতো নেতারাই তৃণমূলের আসল ভোট মেশিনারি, ফলে লঘু মামলা দিয়ে দ্রুত তাঁকে জামিন করে বাইরে আনার পরিকল্পনা শাসক তৃণমূলের।


মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অশান্তি করতে গিয়েছিল কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র গুঁজে। ধরা পড়ে হাসপাতাল চত্বর থেকে। প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী পরিচয় দিয়ে পালাতে চায়, পরে পরিচয় দেয় তৃণমূল নেতার। সেই সময়েই কোমর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এতদসত্ত্বেও বাসির মোল্লাকে আদালতে নিজেদের হেপাজতে এদিন চাইল না পুলিশ। সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য জনবহুল স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে হলো না খুনের চেষ্টার ধারায় কোনও মামলা। বাসির মোল্লার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি।  
পুলিশের অভিযোগে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল বাসির মোল্লা। তাকে আটক করে পুলিশ। সেই সময়েই নজর যায় কোমরে থাকা বন্দুকের দিকে। বন্দুকের কোনও লাইসেন্স দেখাতে পারেনি বাসির মোল্লা। পুলিশকে জানিয়েছে, অবৈধ কাজের জন্য অস্ত্র সঙ্গে রেখেছিল বাসির। কিন্তু কী সেই অবৈধ কাজ ? তাও স্পষ্ট নয় পুলিশের লিখিত অভিযোগে। তার বিরুদ্ধে কেবল অস্ত্র আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে।


পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরি। বহরমপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে অধীর চৌধুরি বলেন, ‘ রিভলভার নিয়ে যে তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে একটিমাত্র মামলা হয়েছে। যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের নামে খুনের চেষ্টার ধারা দিয়ে মামলা হয়েছে। অফিসাররা ডিনার করিয়েছেন তৃণমূল নেতাকে। বিরোধীরা যাতে নমিনেশন না করতে পারে তার চেষ্টা পুলিশ প্রশাসন করছে।’
যদিও তারপরেও মনোবল অটুট রয়েছে সিপিআই(এম) কর্মীদের। যে মেজাজে শনিবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সিপিআই(এম), কংগ্রেস কর্মীরা সেই লড়াকু মেজাজ ধরে রেখেই গ্রামে গ্রামে শুরু হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারও। 
রবিবার ডোমকলের ঘোড়ামারায় কর্মীসভা সিপিআই(এম) করে। তৃণমূল ছেড়ে লাল ঝান্ডা কাঁধে তুলে নেন ঘোড়ামাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এক পঞ্চায়েত সদস্য সহ বহু তৃণমূল কর্মী। তারা জানান, তৃণমূলের লুট, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেই  এই সিদ্ধান্ত। গ্রামবাসীদের আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন। সিপিআই(এম) ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,‘ গ্রামে জনভিত্তি হারিয়ে তৃণমূলের নেতারা পুলিশ, প্রশাসনের আড়াল খুঁজছে। সিপিআই(এম) কর্মীদের মিথ্যা মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েই এর মোকাবিলা করবেন।’

Comments :0

Login to leave a comment