Mamata fearing Left

ভয় চেপে ধরেছে

সম্পাদকীয় বিভাগ


এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাস করেন আদি গঙ্গার পাড়ে কালীঘাটের পটুয়া পাড়ায়। ক্ষমতায় আসার আগে সেখানে বহুল প্রচারিত টালির বাড়িতে থাকতো তাঁর পরিবার। ক্ষমতায় আসার পর সেসব ইতিহাস হয়ে গেছে। গত দেড় দশকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নতুন ইতিহাস লেখা হয়েছে। একদা টালির বাড়িটি ছিল যাদের একমাত্র ঠিকানা এখন গোটা পাড়াটাই তাদের দখলে। রাস্তার দু’পাশে ৩৫টিরও বেশি প্লটের মালিক এখন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার। বড় বড় অট্টালিকা-প্রাসাদ তৈরি হয়েছে সেখানে। যাদের নাকি এক সময় দু’বেলা ঠিকঠাক খাওয়াও জুটত না। কেউ কেউ শুধু সমাজসেবা করেই পাঁচ-সাত কোটি টাকার সম্পদ করে ফেলেছেন। ক্ষমতার জাদুকাঠিতে কি না হয়। খানিকটা দূরে তো ভাইপো বানিয়ে ফেলেছেন ফাইভ স্টার হোটেলের থেকেও রাজকীয় বিলাসবহুল বাসস্থান। মা-মাটি-মানুষের দৌলতে ব্যানার্জি পরিবারের কপাল খুলে গেছে। একটা প্লট থেকে ৩৫টা প্লট। গোটা পাড়াটাই পিসি-ভাইপোর জমিদারি। সেই পাড়া নিশিদিন পাহারা দেয় কয়েকশো পুলিশ। পিসি-ভাইপোর বাড়িকে ঘিরে গোটা পাড়াটাই স্থায়ীভাবে ১৪৪ ধারা জারি করা আছে। কিন্তু কেন তার ব্যাখ্যা নেই। এখানে পুলিশ অথবা ব্যানার্জি পরিবারের অনুমতি ছাড়া স্বাধীন ভারতের কোনও নাগরিকের প্রবেশের অধিকার নেই। পুলিশ কোনও অবস্থাতেই কাউকে সেই পাড়ায় ঢুকতে দেবে না।
এহেন পাড়ায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনও কাজ পুলিশ করতে দেয় না। জনসভায় গিয়ে গণতন্ত্রের ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু নিজের পাড়ায় গণতন্ত্র নিষিদ্ধ। বিরোধী দলের কোনও সভা, মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হয় না। প্রথমত পুলিশ অনুমতি দেয় না। দ্বিতীয়ত অনেক দূরে অনুমতি মিললেও শাসকদলের গুন্ডা-মস্তানরা পুলিশের মদতে তা করতে দেবে না উপরওয়ালার হুকুম মুখ্যমন্ত্রীর এলকায় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলা যাবে না। এমনকি এই গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা নির্বাচনের সময়ও কোনও বিরোধী প্রার্থীকে বিশেষ করে বামপ্রার্থী পিসি-ভাইপোর পাড়ায় প্রচার করতে দেয়নি পুলিশ। প্রার্থীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের কর্মসূচি থাকলেও দলদাস পুলিশ ১৪৪ ধারার অজুহাত তাদের পথ আটকায়। প্রার্থী জানান আইন মেনে পাঁচজনের কম তারা যাবেন। তাতেও ওপরওয়ালার হুকুম নেই বলে যেতে দেওয়া হয় না।
মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত নিজের পাড়াটাকে পারিবারিক জমিদারি বানাতে চাইছেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে। তিনি যদি সত্যি সত্যি গণতন্ত্র মানেন তবে তো সবার আগে নিজের পাড়ায় সকলকে স্বাগত জানাবেন। বিরোধীদের বেশি স্বাগত জানাবেন যাতে তারা সমালোচনার সুযোগ না পায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী উলটোটাই করছেন। আসলে তিনি ভয় পাচ্ছেন। যাদের এতকাল দূরবিন দিয়ে‍‌ও দেখতে পেতেন না তারা এখন তাঁর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। জেতার ঔদ্ধত্য ক্রমে হারে আতঙ্কে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাই কলকাতায় শুধু নয়, যাদবপুর, ডায়মন্ডহারবার সহ বেশিরভাগ কেন্দ্রেই পদে পদে বাধা দিয়ে চলেছে বাম-কংগ্রেস প্রার্থীদের প্রচারে। দেওয়াল লিখতে, পোস্টার মারতে  দেওয়া হচ্ছে না। লিখলে মুছে দেওয়া হচ্ছে। ঝান্ডা, পোস্টার খুলে দেওয়া হচ্ছে। সভা, মিছিলে বাধা দিচ্ছে। বহু এলাকায় প্রার্থীকেও ঢুকতে দিচ্ছে না। আতঙ্ক এমন জায়গায় গেছে যে বুঝে গেছে বামেরা যদি ঠিকঠাক প্রচার করতে পারে, সব জায়গায় যদি প্রচারে পৌঁছে যায়, মানুষের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস যদি বাড়িয়ে দেয় তাহলে নিশ্চিতভাবে গণনা কেন্দ্র থেকে মাথা নিচু করে ফিরতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment