Alipuduar

পাওনা থেকে বঞ্চিত, তাই হাসুয়া মার্তুনে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার এবার কোহিনুরে

রাজ্য পঞ্চায়েত ২০২৩

অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়: আলিপুরদুয়ার 
 

অভিষেক ব্যানার্জির ‘নবজোয়ার’ অভিযানকে সফল করতে জোর করে খোলা হয়েছিল কোহিনুর চা বাগান। কোচবিহারের দিনহাটায় গত ১৮ মে শুরু হয় ভাইপোর নবজোয়ার। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর আসার কথা ছিল আলিপুরদুয়ারে। তাই চা বাগানের শ্রমিকদের দাবি না মেনে লেবার অফিসারকে দিয়ে জোর করেই ৭ মে খুলে দেওয়া হয় চার মাস বন্ধ থাকা ওই বাগান। 
চা বাগান শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৩২ টাকা না দিয়ে ১৫ দিনে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তিতে খুলেছিল কোহিনুর। মজুরি ছাড়া শ্রমিকদের আর কিছু দেওয়া হবে না এই শর্তে খোলা হয় বাগান। চা বাগানের এখন নয়া মালিক। কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়েছেন শাসক ঘনিষ্ঠ সুজিত বক্সি। 
কোম্পানি আইনে এখনও তা হস্তান্তর হয়নি। কিন্তু আলিপুরদুয়ারে অভিষেক ব্যানার্জি যাতে বলতে পারেন যে তার জন্যই চা পাতার তৈরির কারখানা বন্ধ রেখে শুধু বাগানের কাজ চালু হয়। দেওয়া হলো না চা শ্রমিকদের পাওনা। কোহিনুর চা বাগানের ভিতরেই রয়েছে কোহিনুর গ্রাম পঞ্চায়েত। 
চার মাস মজুরি না পাওয়ায় অনেক শ্রমিক ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। বাগানের আগে ৮৮৮ স্থায়ী শ্রমিকের মধ্যে ২০০ জন এখন পরিযায়ী। বাগান খুললেও তাঁরা আর ফেরেননি। তাই কম শ্রমিক দিয়েই বাগানের কাজ করাচ্ছে নয়া মালিক। 
শামুকতলা পেরিয়ে একটু গেলেই ৭০০ একর জমির ওপর ওই বাগান। আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের মধ্যে পড়ে কোহিনুর গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই পঞ্চায়েতে এবারে সিপিআই(এম) প্রার্থী বাগান শ্রমিক প্রেমিকা চিকবড়াই (কুজুর)। পঞ্চায়েতের অপর প্রার্থী সুজিত দে। পঞ্চায়েত সমিতিতে দাঁড়িয়েছেন হরিয়া ওঁরাও। এই এলাকার জেলা পরিষদ প্রার্থী অলোক মোহালি। 
সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চা বাগানের অমানুষিক পরিশ্রম। মাঝে ১ ঘণ্টা টিফিন। প্রতি ঘরেই রয়েছেন বাগান শ্রমিক। তাই ৪টের পর এখানে প্রচার করতে হয়। ‘মা, বহিন লোক ভোট দেগা কিস মে? হাসুয়া মার্তুন বিচ মে’ স্লোগান নজর কেড়েছে শ্রমিক বস্তির। 
সিপিআই(এম) প্রার্থীরা সব চা বাগানের শ্রমিকদের ছোট ছোট টিনের বাড়িতে ঢুকে প্রচার করছেন। কখনও সাদ্রি ভাষায়, কখনও ক্রুক তো কখনও খড়িয়া ভাষায় চলছে নানা রকমের স্লোগান। নানা জনজাতির মানুষ ওই চা বাগানে কাজ করেন বলেই নানা ভাষাতেই চালাতে হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার। ২০০৩ সালে রাজ্যসভার সাংসদ চিত্তব্রত মজুমদারের ৫ লক্ষ টাকা অনুদানে ওই চা বাগানের ভিতর বামপন্থী শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল কোহিনুর মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র। 
পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পড়ার সুযোগ পায় শ্রমিক পরিবারের পড়ুয়ারা। এরপরে পড়তে চা বাগানের বাইরে যেতে হয়। চার মাসের বন্ধের জন্য চা গাছের যত্ন নেওয়া হয়নি। বাগানের চা পাতা তৈরির কারখানাও বন্ধ। তাই মালিকপক্ষের একতরফা চুক্তির বিরুদ্ধেই এবারে প্রচারে সরব পঞ্চায়েত প্রার্থী প্রেমিকা চিকবড়াই (কুজুর)। শ্রমিকের দাবি আদায়ে লাল ঝান্ডার এই প্রার্থীর জেতা খুব জরুরি, তা মানছেন এলাকার মানুষ। সর্বত্র যেখানে অবসরের বয়স ৬০ বছর, সেখানে বাগানে অবসর ৫৮বছরে। 
অবসর নিলে ওই পরিবারের একজন বাগানের শ্রমিকের কাজ পান, এইটুকুই যা সুবিধা। এবছর আবার বোনাসও মিলবে না। বাগানের এই পরিস্থিতির জন্য শ্রমিক পরিবারের অন্য সদস্যরা বাগানের কাজ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। 
চা বাগানের সামান্য কাজ জানলে কেরালা কিংবা কর্ণাটকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মেলে ৫০০ টাকা। দিনভর কঠিন পরিশ্রমের পর দৈনিক ২০০ টাকা মজুরিতে গুজরান করা কঠিন। কোম্পানি তা বোঝে না। বাগানের দাবি আদায়ের লড়াইয়ের সঙ্গে এবার জুড়ে গিয়েছে ক্ষমতায়নের ভোট।

Comments :0

Login to leave a comment