ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ হিসাবে স্বতন্ত্র প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষেই দশকের পর দশক ধরে বিশ্ব জনমত উচ্চারিত ও ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছে। রাষ্ট্র সঙ্ঘের অধিবেশনেও বারবার এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে প্রায় সব দেশ। ইজরায়েলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়েও আমেরিকা কখনো সরাসরি পৃথক রাষ্ট্রের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেনি। তবে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে সক্রিয়ভাবে ঝুলিয়ে রাখার সব রকমের চেষ্টা করেছে। আসলে বিশ্ব জনমতের চাপে আমেরিকা প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবে সায় দিলেও বাস্তবে প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র হোক এটা আমেরিকা মেনে নিতে রাজি ছিল না। তাই ছলেবলে কৌশলে বরাবর চেষ্টা করে গেছে পৃথক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। বিপরীতে আমেরিকা সামরিক, আর্থিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে সব রকমের সাহায্য দিয়ে গেছে ইজরায়েলকে। পশ্চিম এশিয়া তথা আরব দুনিয়ায় মার্কিন প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ইজরায়েলই আমেরিকার শক্ত খুঁটি। তাই ইজরায়েল যত বর্বর ও হিংস্র আচরণই করুক না কেন মার্কিন মদত পেতে অসুবিধা হয়নি। আমেরিকা মনে করে পৃথক প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র হলেও সেটা পশ্চিম এশিয়ার বুকে ইজরায়েল-মার্কিন জুটির চির শত্রুর হয়ে যাবে। ফলে পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যাবে। সেটা আমেরিকা কোনও মতেই হতে দিতে চায় না। তাই প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের স্বপ্ন চিরতরে মুছে দিতে সমগ্র প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড দখল করা ইজরায়েলি পরিকল্পনায় সহায়তা দিয়ে গেছে। বিগত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে একটু একটু করে জমি দখল করে প্যালেস্তাইনকে সঙ্কুচিত ও ইজরায়েলকে প্রসারিত করা হয়েছে।
ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা এখন অবস্থান বদলে পৃথক প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের ভাবনাকে মুছে দিতে চাইছেন। বিগত ছ’মাস ধরে বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র, কামানের গোলা চালিয়ে গাজা ভূখণ্ড থেকে ২০ লক্ষ প্যালেস্তাইনবাসীকে তাড়িয়ে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। এখন সেই জনহীন প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড গাজা দখল করার কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। তিনি আরও ফতোয়া জারি করেছেন এই ২০ লক্ষ মানুষ শরণার্থী বা উদ্বাস্তু হয়ে অন্য দেশে স্থায়ীভাবে আশ্রয় নিক। বিশেষ করে তিনি বলে দিয়েছেন এই শরণার্থীদের স্থায়ী বসবাসের জায়গা করে দিতে হবে জর্ডন ও মিশরকে। যদি তারা সম্মত না হয় তাহলে দুই দেশে মার্কিন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ট্রাম্প এটাও জানিয়েছেন ২০ লক্ষ মানুষকে তাদের পিতৃভূমি থেকে তাড়িয়ে কার্যত ভিখারি বানিয়ে গাজায় বিত্তবানদের প্রমোদের জন্য বিলাসী সৈকত নগর বানাবেন। তাঁর সাম্রাজ্যবাদী ঔদ্ধত্য এতটাই সীমাহীন যে তিনি অন্য দেশের সমগ্র জনগণকে দেশ ছাড়া করে সেই জায়গায় নিজের দখলে আনতে চান এবং প্রকাশ্যে সেটা ঘোষণাও করেন। নিজের দেশে থাকা ভিনদেশিদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাড়ানোর অভিযান চালাচ্ছেন যে ট্রাম্প তিনি অন্য দেশকে ফতোয়া দিচ্ছেন তারা যেন ২০ লক্ষ প্যালেস্তাইনবাসীকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়। নিজের দেশের এক ইঞ্চি জমি যিনি ছাড়বেন না তিনি সমগ্র গাজা ভূখণ্ড দখলের হুমকি দিচ্ছেন। হামাসের হাতে কয়েকজন পণবন্দির শারীরিক অবস্থা দেখে যার প্রাণ কাঁদে, ইজরায়েলি বর্বরতায় ৫০ হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যুতে তাঁর কিছু যায় আসে না। মানবাধিকারের নামে সারা দুনিয়ায় দাদাগিরি করেন। অথচ নিজেরা সবচেয়ে অমানবিক কাজ করেন এবং সমর্থন করেন। এটাই সাম্রাজ্যবাদ। দুনিয়াদারির উগ্র কামনায় এরা মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না।
Editorial
পশ্চিম এশিয়ায় নব্য হিটলার
![](https://ganashakti-new-website.s3.ap-south-1.amazonaws.com/24099/67acf6ba2d87f_Editorial.jpg)
×
Comments :0