ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক ঐক্য-সংহতি অটুট রেখে যদি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি ও বিকাশের ধারা অব্যাহত রাখতে হয় তাহলে অবিলম্বে উপাসনাস্থল আইনকে প্রহসনে পরিণত করার যে ষড়যন্ত্র হিন্দু্ত্ববাদীরা আঁটঘাট বেঁধে করে চলেছে তা প্রতিহত করতে হবে। আর সেটা করতে হবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকেই। বলতে হবে যথেষ্ট হয়েছে আর নয়। কোনও অবস্থাতেই মন্দির-মসজিদ জিগির তুলে দেশে হিংসার আগুন জ্বালাতে দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে উপাসনাস্থল আইন। কোনও অবস্থাতেই কোনও মসজিদ-দরগা-ইদগাকে বিতর্কের বিতর্কের অজুহাতে সমীক্ষার অনুমতি দেওয়া যাবে না। যে কোনও ধর্মবিশ্বাসীর যে কোনও ধর্মস্থান বা উপাসনাস্থল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই থাকবে, তাদের চরিত্রের কোনোরকম অদল বদল করা যাবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে সুপ্রিম কোর্টকেই।
যদি তা না হয় তাহলে অচিরেই দেশজুড়ে সম্ভালের মতো সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুন জ্বলবে। গোলাগুলি চলবে। রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হবে। নিরীহ মানুষের লাশ পড়বে। যদি উপাসনা আইনকে মান্যতা দিয়ে স্থানীয় আদালত সমীক্ষার নির্দেশ না দিত, আগাম কথাবার্তা না বলে যদি বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে সমীক্ষক দল ভোরবেলায় হাজির না হতো, যদি মসজিদের ভেতর ভাঙচুর না হতো, যদি পুলিশ কর্তারা মুসলিমদের উদ্দেশে অকথা-কুকথা বলে উত্তেজনা না ছড়াতো তাহলে সম্ভালে এমন বীভৎস হিংসার ঘটনা ঘটত না। পুলিশের গুলিতে চারজনের মৃত্যুও হতো না।
সম্ভলের ঘটনা পরম্পরা থেকে এটা স্পষ্ট যে নিম্ন আদালতের রায়, হিন্দুত্ববাদীদের উসকানি ও প্ররোচনা, পুলিশও সমীক্ষক দলের আচরণ, সর্বোপরি যোগী সরকারের ভূমিকার মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে। বিভিন্ন সময় নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় এই পরিস্থিতির পেছনে ইন্ধনের কাজ করেছে। বিতর্কের অজুহাতে সমীক্ষার রাস্তা খুলে দিয়েছে নিম্নআদালত। তাতে সায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। সর্বোচ্চ আদালত তাকে না আটকিয়ে এমন অবস্থান নিয়েছে তাতে দ্বিগুণ উৎসাহিত হয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা। তারা একে জয় মনে করে ঘৃণা ও বিদ্বেষের রাজনীতির পরিসরকে ব্যাপ্ত করেছে। একে হাতিয়ার করে নতুন নতুন জায়গায় সমীক্ষার হিড়িক তুলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আরএসএস’র ছত্রছায়ায় সক্রিয় অজস্র সংগঠন এবং তাদের হোয়াটস অ্যাপ ইউনিভার্সিটি ইতিমধ্যেই সারাদেশে ৩০ হাজার মুসলিম উপাসনালয়কে চিহ্নিত করে সেগুলি মন্দির বানানোর জোরালো সওয়াল শুরু করেছে। এইভাবে যদি চলতে দেওয়া হয় তাহলে গোটা দেশে হিংসার আগুন জ্বলবে। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও ঘৃণার জেরে সামাজিক সুস্থিতি নিবষ্ট হবে। কোনও সভ্য দেশে তা হতে দেওয়া যায় না। সারা বিশ্বে এমন কোনও গণতান্ত্রিক দেশ নেই যেখানে কয়েকশত বর্ষ পুরানো ধর্মস্থান নিয়ে ধর্মান্ধরা উন্মাদনা তৈরি করে গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিটাকেই হাস্যকর করে তোলে। দুর্ভাগ্যের হলেও এটা সত্য মোদী জমানায় পশ্চাৎমুখী হিন্দুত্ববাদ ভারতকে সেই মধ্যযুগীয় অসত্যতার স্তরে টেনে নামাতে চাইছে। এমন ধর্মান্ধ অগণতান্ত্রিক মধ্যযুগীয় চেতনা আধুনিক উন্নত ভারতের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক। একে আটকাতেই হবে। সেকাজ করতে হবে সুপ্রিম কোর্টকেই।
Supreme Court's responsibility
দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের
×
Comments :0