বাংলায় একটা প্রবাদ আছে কচু গাছ কাটতে কাটতে এক সময় মানুষের গলা কাটতেও পোক্ত হয়ে ওঠে অপরাধীরা। অর্থাৎ সংযমবোধ ও বিবেচনাবোধ না থাকলে এবং সঠিক পরামর্শ না পেলে অতি সাধারণ অপরাধ করতে করতে ধাপে ধাপে বড়সড় অপরাধী হয়ে ওঠে। উগ্র ও হিংস্র হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে ইদানীং এমন প্রবণতাই প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। আরএসএস’র ছত্রছায়ায় বাড়বাড়ন্ত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ দলের আগমার্কা কর্মীরা শুরু করেছিল মুসলিমদের মসজিদ, মাজার, দরগার নিচে শিব লিঙ্গ খোঁজা দিয়ে। আর সেটা গোড়ায় সীমাবদ্ধ অযোধ্যার বাবরি মসজিদে। পরবর্তীকালে ভিন্ন ধর্মবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক জিগির তোলা হিন্দুত্ববাদীরা কাশী মথুরা, আজমের, সম্ভল সহ শুধু উত্তর প্রদেশেই বেশ কয়েক ডজন মুসলিম উপাসনালয়ের নিচে শিবলিঙ্গ খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সারা দেশের কথা ধরলে এই বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক জিগির ছড়ানো হিন্দুত্ববাদীরা কয়েক হাজার মুসলিম ধর্মস্থান চিহ্নিত করে ফেলেছে যেখানে তারা দলবল নিয়ে হামলা চালিয়ে শিবলিঙ্গ খুঁজবে। এমন আচরণ বা পদক্ষেপ দেশের সংবিধান অনুমোদন করে না জেনেও এবং উপাসনাস্থল আইন লঙ্ঘন হচ্ছে জেনেও তারা নিরস্ত হচ্ছে না। আসলে এই ধর্মান্ধ অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনাবোধহীন লোকগুলোর একটা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধান এবং আইন সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। আধুনিক সভ্যতায় সম্প্রীতি, সহাবস্থান সম্পর্কেও বোধহীন। তাই অনায়াসে রে রে করে অন্য ধর্মের উপাসনাস্থলে গিয়ে হামলা চালিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধিয়ে দিতে পারে। তার জেরে মানুষে মানুষে বিশ্বাস-আস্থা নষ্ট হলে, হানাহানি হলে, দাঙ্গা হলে তাদের কিছু যায় আসে না। বরং তারা সেটাই চায়। তাতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও মেরুকরণ হবে। হিন্দুত্ববাদীরা ভোট রাজনীতির সুবিধা পাবে।
সংখ্যাগুরু হিন্দুত্ববাদ তাদের শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে সংখ্যালঘুদের দেশে সংখ্যালঘু ধর্মের মধ্যে মুসলিমরা তুনলায় বেশি। খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈনরা অনেক কম। হিন্দুত্ববাদীদের প্রথম টার্গেট মুসলিমরা। মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক জিগির তুলেই তারা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জমি শক্ত করতে চায়। তার জন্যই ভাঙা হয়েছে বাবরি মসজিদ। খোঁড়াখুঁড়ি চলছে কাশী, মথুরা, সম্ভল প্রভৃতি এলাকায়। এক সময় হিড়িক উঠেছিল গির্জায় হামলার। ইদানীং সেটা একটু কম হচ্ছে। তবে নতুন করে হামলা শুরু হয়েছে বৌদ্ধদের উপাসনাস্থানে। কয়েকদিন আগেই যোগী রাজ্যের বদায়ুঁতে সম্রাট অশোক বিহারে হামলা চালিয়ে বৌদ্ধ মূর্তি, শিলালিপি ভাঙা হয়েছে। ভিক্ষুকদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। বজরঙ দলের আগ্রাসী কর্মীরা সেখানে শিবলিঙ্গ আবিষ্কার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আসলে এই সবটাই পরিকল্পিত। আরএসএস-বিজেপি’র ক্ষমতার রাজনীতির জমি তৈরি করতেই এই বিভাজনের পরিকল্পনা। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই তারা একাজ চালিয়ে যাবে ধর্মান্ধ ভক্তদের দিয়ে। থামাতে হবে আদালতকে, সর্বোপরি দেশের গণতান্ত্রিক মানুষকে।
EDITORIAL
কি করছে নিজেরাই জানে না
×
Comments :0