আমেরিকায় নতুন এক ‘বিন তুঘলকের’ আবির্ভাব ঘটেছে। তিনি শুধু হোয়াইট হাউজের সিংহাসনেই বসেননি, একই সঙ্গে গোটা আমেরিকাকেই তাঁর জমিদারি বলে ভাবতে শুরু করেছেন, মার্কিন আমজনতাকে গণ্য করতে শুরু করেছেন তাঁর খাস তালুকের প্রজা হিসাবে। দক্ষিণ পন্থার স্বৈরাচারী মানসিকতা কতটা বেপরোয়া হলে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম গণতন্ত্র ও সভ্য-মানবিক দেশ বলে দাবি করা একটা দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মরজিমাফিক যখন যা খুশি বিবৃতি দিতে পারেন, যেমন খুশি হুকুম জারি করতে পারেন। বলা যায় একবিংশ শতাব্দীর সভ্য মানব সমাজকে তিনি মধ্যযুগের তুঘলকি শাসনের বর্বতায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন।
ক্ষমতায় এসেই নব্য তুঘলকি শাসনের অবতার ঘোষণা করে দিয়েছেন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানত্ন তিনি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর প্রতিটি নীতি ও পদক্ষেপের অভিমুখ হবে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ অর্থাৎ সবার আগে আমেরিকার স্বার্থ। আমেরিকার স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে তাঁর সরকার দুনিয়ার অন্য কোনও কিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন। মার্কিন স্বার্থে যদি অন্য সব দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হয় তবে সেটাই তিনি করবেন। আমেরিকার জমিদারি পেয়ে তিনি গোটা বিশ্বকেই তার জমিদারি হিসাবে গণ্য করতে শুরু করেছেন।
তিনি ঘোষণা করে দিয়েছেন মেক্সিকো উপসাগর বা গাল্ফ অব মেক্সিকো নাম বদলে গাল্ফ অব আমেরিকা করবেন। যেন সেটা তাঁর জমিদারির মধ্যে পড়ে। যে কোনও সাগর, মহাসাগর, উপসাগর কোনও একটি বা দু’টি দেশের সম্পত্তি নয়। সেটা আন্তর্জাতিক। আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম অনুযায়ী সেখানে সব দেশেরই সমানাধিকার আছে। নাম বদলাতে হলে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী আন্তর্জাতিকভাবেই হবে। তুঘলকি দাদাগিরিতে হবে না। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পানামার মধ্যে থাকা পানামা খাল গায়ের জোরে আমেরিকার দখলে নিয়ে আসার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই খাল দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজ যাতায়াতের মাশুল নাকি বেশি। এই খাল দিয়ে যেহেতু সবচেয়ে বেশি মার্কিন পণ্য ও পণ্যবাহী জাহাজ যাতায়াত করে তাই আমেরিকার বাণিজ্যে খরচা বাড়ছে। তাই আমেরিকার স্বার্থে পানামাকে মাশুল কমাতে হবে। নাহলে গোটা খালটাই আমেরিকা দখল করে নেবে। বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ কানাডা আমেরিকার উত্তরের প্রতিবেশী। তুঘলক সাহেব চান এবং প্রকাশ্যে জানিয়েও দিয়েছেন স্বাধীন-সার্বভৌম কানাডার অস্তিত্ব নির্মূল করে আমেরিকার একটি প্রদেশে পরিণত করবেন। তেমনি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ ডেনমার্কের অধীন স্বশাসিত গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নেবার, নাহলে দখল করার কথা বলেছেন। গোটা বিশ্বকে নিজের জমিদারি মনে না করলেও কোনও দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যে কোনও দেশ বা ভূখণ্ড দখল করার হুমকি দিতে পারেন না। সর্বশেষ তিনি প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড গাজা দখল করে ধনকুবেরদের জন্য অত্যুচ্চ বিলাসবহুল সৈকত নগর বানাতে চান বলে জানিয়েছেন। তারজন্য গাজার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে তাদের পিতৃভূমি ছেড়ে জর্ডন, মিশর সহ অন্যান্য দেশে চলে যেতে বলেছেন। অর্থাৎ প্যালেস্তাইনবাসীরা তাদের নিজেদের ভূমি ছেড়ে অন্য দেশে শরণার্থী হয়ে চলে যাবেন। সেখানে তুঘলক সাহেব তাঁর স্বপ্নের নগর গড়ে তুলবেন আমেরিকা ও ইজরায়েলের যৌথ উদ্যোগে। ঔপনিবেশিক যুগে সাম্রাজ্যবাদীরা যেমন একটার পর একটা দেশ দখল করে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে, নব্য মার্কিন তুঘলকি শাসনও সেই উপনিবেশ যুগে ফিরে গিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্য বিস্তারে নামতে চাইছেন। অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতি এভাবেই সভ্য সমাজকে বর্বরতার দিকে টেনে নামাতে চায়।
US TRUMP
নব্য মার্কিন তুঘলক
![](https://ganashakti-new-website.s3.ap-south-1.amazonaws.com/23958/67a668e21a16b_1000082654.jpg)
×
Comments :0