CPIM on Uniform Civil Code

বিভাজনের লক্ষ্যেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল, রাজ্যসভায় সিপিআই(এম)

জাতীয়

CPIM on Uniform Civil Code

বিভাজন আমাদের এগতে দেবে না। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ভারতের দর্শন। বৈচিত্র্য ধ্বংস করবেন না। বিভাজন আরও গভীর করবেন না। রাজ্যসভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল বিতর্কে এই বক্তব্যে সরব হয়েছেন সিপিআই(এম) সাংসদরা। 

শুক্রবার বিজেপি সাংসদ কিরোরী লাল মীনা এই ব্যক্তিগত বিল পেশ করেন রাজ্যসভায়। সিপিআই(এম)’র পক্ষে বিলের বিরোধিতায় বক্তব্য রাখেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং জন ব্রিটাস। ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিবেচনা করুন দেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের পরম্পরা রক্ষা করবেন না ধ্বংস করবেন। শতকের পর শতক বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ধারণা লালিত হয়েছে এই ভারতে। তাকে ধ্বংস করবেন না। বিভাজন আরও গভীর করবেন না। বিভাজন আমাদের এগতে দেবে না।’’ 

বাধা দেয় বিরোধী একাধিক দল। সরকারপক্ষের সাংসদরা তো বটেই, মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বিল পেশের পক্ষে সরব হন। এর আগে ছ’বার এই বিল পেশের চেষ্টা হলেও প্রতিবাদে তা হয়নি। শুক্রবার বিল পেশ হয়েছে। যার মূল বক্তব্য, সারা দেশে সব সম্প্রদায় এবং অংশের জন্য একই ব্যক্তিগত আইন থাকতে হবে। জোর করে ব্যক্তিগত আইন চাপিয়ে দেওয়ার এই বক্তব্য আরএসএস এবং বিজেপি’র অন্যতম মৌলিক প্রচার। মুখ্যত সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বার্তায় রাজনৈতিক স্তরে তা প্রচার করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বাহিনী। মেরুকরণে তীব্রতা আনতে সদ্য শেষ দু’রাজ্যের নির্বাচনেও ইশ্‌তেহারে এই প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। 

ব্রিটাস বলেছেন, ‘‘দেশের আইন মন্ত্রীর জানা উচিত ২১ তম আইন কমিশন কী বলেছিল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রসঙ্গে। কমিশন বলেছিল এই বিল প্রয়োজনীয় তো নয়ই, কাঙ্ক্ষিতও নয়। আইন মন্ত্রী কেবল সুপ্রিম কোর্টকে আক্রমণে ব্যস্ত সময় পেলে আইন কমিশনের বক্তব্য ঝালিয়ে নেবেন।’’ ব্রিটাস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রচারিত শব্দবন্ধ সামনে আনেন। তিনি বলেন, ‘‘একদিকে বলবেন ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ।’ আবার এমন বিল পেশ করবেন?’’

রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকর নিজে বিল পেশের পক্ষে সওয়াল করেন। বিরোধীরা তিনটি লিখিত বিরোধিতা প্রস্তাব পেশ করেন চেয়ারম্যানের কাছে। ধ্বনি ভোটে তা পরাস্ত হলেও বিরোধীদের, রাজ্যসভায় বামপন্থীদের বক্তব্য পৌঁছেছে সারা দেশে। 

কেন্দ্রে আসীন বিজেপি’র উদ্দেশ্যে ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্বাধীনতার আগে সংবিধান প্রণয়নের গণপরিষদে বিতর্ক বিবেচনায় রাখুন। সেখানে এমন বিভিন্ন প্রসঙ্গই আলোচনায় এসেছিল। শেষ পর্যন্ত সংবিধানের গোড়াতেই বলা হলো ‘‘আমরা, ভারতের জনগণ...’’। এই আহ্বান ঐক্যের পক্ষে। ঐক্যের সেই বার্তাকে ফের প্রতিষ্ঠা করা জরুরি আজ। জরুরি নাগরিক মর্যাদা ফিরিয়ে আনা।’’ তিনি বলেন, ‘‘অপেক্ষা করুন। সমাজে আলোচনা হতে দিন। জোর করে এমন আইন চাপালে দেশের কাঠামো ধ্বংস হবে। আপনারা দেশের কাঠামো ধ্বংস করতে চাইছেন।’’  

সদ্য শেষ হিমাচল প্রদেশ এবং গুজরাটে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে নেমেছে বিজেপি। গুজরাটে সম্ভব হলেও বিভাজনের বার্তা প্রতিহত হয়েছে হিমাচল প্রদেশে। রাজ্যসভায় গোয়েল যদিও বলেছেন, ‘‘বিল পেশ হতে দেওয়া হোক। সরকারকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণ বন্ধ হোক। এই বিল সরকার পেশ করছে না। এটি ব্যক্তিগত বিল।’’  ব্রিটাস বলেছেন, ‘‘একেক রাজ্যে একেক বয়ানে  এমন বিধি জারি হচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। তা’হলে ‘অভিন্ন’ বলা হচ্ছে কিসের ভিত্তিতে!’’

মীনার বিল ব্যক্তিগত, সরকারি নয়। কিন্তু সংসদে এই আলোচনা পেশ করে দেশজুড়ে বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিজেপি। বিরোধী সাংসদরাই কেবল নন, রাজনৈতিক মহলের বিভিন্ন অংশই এই বক্তব্যে একমত। তাঁরা বলছেন, বিভাজনের প্রচার গভীর করেই ২০২৪’র লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিতে বড় ধাপ রাজ্যসভায় পেশ এই বিল। 

Comments :0

Login to leave a comment