নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাশ হয়েছে বহু দেরিতে। প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে একগুচ্ছ দেশ। বাধ্য হয়ে সম্মত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে তাদের সহযোগীরা। প্রশ্ন উঠেছে, গাজায় গণহত্যা বন্ধে ইজরায়েল কে কি থামানো যাবে?
রাষ্ট্রসঙ্ঘে প্যালেস্তাইনের প্রশ্নে ভারতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের ভূমিকাও ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছে বারবার। যু্ধবিরতির জন্য ইজরায়েলকে চাপ দেওয়ার দাবি তুলেছে ভারতের বিরোধী একাধিক দল। তার মধ্যে এগিয়ে বামপন্থীরা।
সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত পাশ হলো। কিন্তু তার জন্য কত জীবন কেড়ে নেওয়া হলো। ইজরায়েল অপরাধীর মতো গণহত্যা চালাচ্ছে গাজায়। অন্তত ১৫ হাজার শিশুকে হত্যা করেছে ইজরায়েলের সেনা। তারপর নিরাপত্তা পষিদে বাধাদানে বিরত হলো সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা।’’
ইয়েচুরির দাবি, ‘‘প্রস্তাব এখনই কার্যকর করতে হবে। কোনও অজুহাত চলবে না। কোনওভাবেই দেরি করা যাবে না।’’
সোমবার রাতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হয়েছে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব। যদিও তা স্থায়ী নয়। রমজান মাসের বাকি দু’সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে বলা হয়েছে। ইজরায়েল মঙ্গলবারও হামলা থেকে বিরত হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখাচ্ছে না। বরং একের পর এক অঞ্চল গুঁড়িয়ে দিতে নেমেছে।’’
ইজরায়েলকে গণহত্যায় দায়ী করে এর আগে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের বিদেশমন্ত্রী নালেদি পান্ডোর বলেছেন, ‘‘এখন বল নিরাপত্তা পরিষদের কোর্টে। কী ব্যবস্থা নেয় দেখার অপেক্ষা রয়েছে।’’ রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘‘এই প্রস্তাব কার্যকর করতে হবে। ব্যর্থতা ক্ষমার অযোগ্য হবে।’’
রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার পরিষদ নিযুক্ত বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ তাঁর প্রতিবেদনে সরাসরি গণহত্যায় দায়ী করেছেন ইজরায়েলকে। রাষ্ট্রসঙ্ঘে পেশ প্রতিবেদনে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘যে মাত্রায় এবং যেভাবে অবিরাম হানা চলছে তাতে উদ্দেশ্য স্পষ্ট। একটি অংশকে মুছে দেওয়া হচ্ছে।’’
রাষ্ট্রসঙ্ঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাঙ জুন বলেছেন, ‘‘বারবার ভেটো দিয়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আটকে দিয়েছে আমেরিকা। তবু আমেরিকা অজুহাত খোঁজার চেষ্টা, চীনের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’”
গত বছরের অক্টোবরে ইজরায়েলের যুদ্ধঘোষণাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন মোদী। এরপর গাজায় ইজরায়েলের অবিরত হামলার নিন্দা করা থেকে বিরত ছিল সরকার। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে অক্টোবরে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসে। ভারত সে সময় ভোটদানে বিরত ছিল। ডিসেম্বরে অবস্থান বদলে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয়। ফেব্রুয়ারিতে বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গাজায় সাধারণ মানুষের বসতিতে হামলায় উদ্বেগ জানালেও নিন্দা করেননি। আন্তর্জাতিক স্তরে সাম্প্রতিক হামলা বন্ধ করার জন্য ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সরবও হয়নি। অথচ, বিকাশমান বিশ্বের দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলের মতো দেশগুলি সরব হয়েছে।
Comments :0