প্রয়াত সুব্রত মুখার্জি তখন জীবিত। রাজ্যে তখন বামফ্রন্ট সরকার। মমতা ব্যানার্জি তাঁকে বলেছিলেন ‘তরমুজ।’ অভিযোগ ছিল, সুব্রত মুখার্জি ভিতরে ভিতরে ‘সিপিএম’র দালাল’। আর বাইরে কংগ্রেস। আজকের মুখ্যমন্ত্রীকে পালটা দিয়েছিলেন তাঁর ‘সুব্রতদা’। বলেছিলেন, ‘‘মমতা বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না। ও নতুন শাড়ি কিনে কেন যে ছিঁড়ে পরে, আমি সেটা বুঝতে পারি না!’’ শনিবার সেই সুব্রত মুখার্জির অন্য কথা মনে পড়েছে মমতার। তবে গ্রামে গ্রামে তৃণমূলের চোরদের বিরুদ্ধে প্রচারে তুফান তোলা সিপিআই(এম)-কে ভয় দেখাতে। শালবনিতে দলীয় কর্মীদের সভায় এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘সিপিএম মাঝে মাঝে বলে আমাদের গ্রেপ্তার করুন। আরে, আমি দয়া করে গ্রেপ্তার করিনি। সুব্রতদা আমাকে বলেছিল, মমতা তুই সিপিএম-কে ক্ষমা করে দিলি? ওদের রেশনের মতো সপ্তাহে একবার পেটাই দেওয়া উচিত। সুব্রতদা মারা গেছে। কিন্তু কথাটি আমার মাঝেমাঝে মনে পড়ে।’’
তবে তাঁর হুমকির জবাব কিছুক্ষণের মধ্যেই দিয়েছেন সিপিআই(এম)-র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। স্পষ্টতই এই মন্তব্য আসলে মুখ্যমন্ত্রীর প্ররোচনা, হুমকি। মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) মন্ত্রীও। তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘উনি এখন মহান সাজার চেষ্টা করছেন। প্রথমত, ২০১১-র পর থেকে আমাদের পার্টির নেতা, কর্মী, সমর্থকদের নামে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তাঁদের সেই সব মামলায় জেল পর্যন্ত হয়েছে। অনেককে জরিমানা করেছে মুখ্যমন্ত্রীর দল। ঘরছাড়া হয়েছেন অনেকে। শহীদ হয়েছেন অনেক পার্টির নেতা, কর্মী। আক্রমণ হয়েছে লাগাতার। মহিলারাও আক্রমণ থেকে বাদ যাননি। এসবের কোনও ইয়ত্তা নেই। এই মহিলা কত মিথ্যাবাদী তাঁর এই কথার মধ্যে দিয়ে তা স্পষ্ট।’’
সেলিম এদিন আরও বলেছেন, ‘‘দ্বিতীয়ত, আজকে যেমন উনি তাঁর ভাইপোর শাস্তি মকুবের জন্য দিল্লি যান, বামপন্থীরা কোনোদিন বিধানসভার ভিতরে বা বিধানসভার বাইরে কোনও রেয়াত চায়নি। আদালতে গিয়েও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়ানোর চেষ্টা করেনি। মিথ্যা মামলা হলেও তা এড়ানোর চেষ্টা করেনি। ২০১২-র ১১ ডিসেম্বর বিধানসভায় চিট ফান্ডের বিষয় নিয়ে আলোচনা করায় দেবলীনা হেমব্রম, গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি, সুশান্ত বেসরা, শেখ আমজাদ হোসেন, নাজমুল হককে বিধানসভার মধ্যেই তৃণমূলের গুন্ডা বিধায়করা আক্রমণ করেন। আহত, রক্তাক্ত হয়েছিলেন বামফ্রন্টের ওই বিধায়করা। তাঁরা যাতে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পান, তারও বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেই দলের নেত্রীর মুখে এসব কথা মানায় না। তিনি এখন মহান সাজার চেষ্টা করছেন। আর যে নেতার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বলেছিলেন ‘গুন্ডা কন্ট্রোল করি’। তিনি ১২ বছর ধরে কন্ট্রোল গুন্ডামি চালিয়েছেন। এখন সেই গুন্ডারা তাঁর কন্ট্রোলে নেই। বগটুইয়ে যা হয়েছে, তেমনই রাজ্যে প্রতিদিন তৃণমূল তৃণমূলকে খুন করছে। আমার প্রশ্ন, এটাও কী উনি পরিকল্পনা করে রেশনিং করে চালাচ্ছেন? তিনি নিজেই বলেছেন, তিনিই দণ্ডমূর্তের কর্তা। এমনি এমনি কিছুই হয় না।’’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সিপিআই(এম) সম্পর্কে সেই পুরানো গুজব আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। তিনি সিপিআই(এম) সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘চমকাইতলা, গড়বেতা, লালগ্রাম (লালগড় বলতে চেয়েছিলেন), কেশপুর সবের নাম আসবে। কী করেনি? হাত, মুণ্ডু কেটে হলদি নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছিল।’’ শেষ প্রসঙ্গটি নন্দীগ্রামের ২০০৭-র ঘটনার কথা বোঝাতে চেয়েছেন। তিনিই বলেছিলেন যে, সিপিআই(এম) কর্মীরা মহিলাদের স্তন কেটে, শিশুদের পা চিরে হলদি নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই তদন্তও হয়েছিল। কিন্তু নন্দীগ্রামে হাত কাটা পুরুষ, স্তন কাটা মহিলা মেলেনি কোনও।
আজও নয়। কোনও শিশুর নিখোঁজ হওয়ারও কোনও অভিযোগ কোনদিন জমা পড়েনি। পুরোটাই ছিল মিথ্যা, পরিকল্পিত গুজব মাওবাদী এবং তৃণমূলের। এমনকি গত ১২ বছরে চমকাইতলা, গড়বেতা, কেশপুরের এমন কোনও ঘটনা সামনে আনতে পারেনি তৃণমূলও, যা বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে হয়েছিল এবং মমতা ব্যানার্জির সরকার সেই ঘটনার তদন্ত করেছে। এমনকি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, পার্টি নেতা সুশান্ত ঘোষকে যে অভিযোগে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি, তা প্রমাণ করতে পারেননি।
Comments :0