State Elections Commission

মনোনয়ন কেন্দ্রের ১ কিমি পরিধিতে ১৪৪ ধারা

রাজ্য

State Elections Commission

সোমবার থেকে মনোনয়ন কেন্দ্রের ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জারি হচ্ছে ১৪৪ ধারা। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপর্ব পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। 
৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ইতিমধ্যে দু’দিন পার হয়ে গেছে। এখন চাপে পড়ে মনোনয়ন কেন্দ্রের ১৪৪ ধারা জারি করার পথে হাঁটতে বাধ্য হলো কমিশন। কিন্তু মনোনয়ন কেন্দ্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এক কিলোমিটার আগে যদি কোনও ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে অবশ্য আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

কমিশন সূত্রের খবর, গোলমাল এড়াতে এক কিমি আগেই রাজনৈতিক দলকে আটকে দেবে প্রশাসন। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রার্থীর সঙ্গে একজনকেই মনোনয়ন জমা দেওয়ার কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের কাছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিবের পাঠানো নির্দেশিকাতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর প্রস্তাবক কিংবা অন্য একজনকে মনোনয়ন কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে, দু’জনের বেশি কাউকে মনোনয়ন কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। 
রবিবার সরকারি ছুটির দিন। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়া এদিন বন্ধ ছিল। সোমবার থেকে ফের পুরোদমে চালু হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটের মনোননয়ন দাখিল পর্ব। তার আগেই এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশন এই পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে রবিবারই রাজ্যের সব জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে মনোনয়ন কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বেশ কয়েকজন জেলাশাসক উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ওই সময় জেলাশাসকদের উদ্বেগকে পাত্তা দিতে চাননি নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। এখন সেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনই মনোনয়ন কেন্দ্রের নিরাপত্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে জেলাশাসকদের কাছে বিজ্ঞপ্তি জারি করছে।

রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি প্রার্থীপদের জন্য ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের প্রার্থীরা মহকুমা শাসকের দপ্তরের গিয়ে মনোনয়ন জমা দেন। এখন দুই মনোনয়ন জমা দেওয়ার কেন্দ্রের এক কিমি এলাকাজুড়ে সোমবার থেকে বহাল হচ্ছে ১৪৪ ধারা। একসঙ্গে পাঁচজনের অধিক ব্যক্তিকে এক কিমি এলাকার মধ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেতা অমিয় পাত্র জানান, ‘‘ এই সিদ্ধান্ত তো প্রথম দিন থেকেই নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করতে পারতো। এখনও পর্যন্ত বামপন্থীরা ভালো সংখ্যায় মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছে। আগামীকালও ভালো সংখ্যায় মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই যাবে। এখন কি শাসকদলের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? তবে ১কিমি এলাকার আগে কোনও ঘটনা ঘটে তার দায়িত্ব কিন্তু প্রশাসনকেই নিতে হবে।’’ 
মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা নিয়ে দু’দিন আগেই কলকাতা হাইকোর্ট তাদের পর্যবেক্ষণে নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছিল। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ সময়সীমা পুনর্বিবেচনার করার কথা বলেছিল। সোমবার ফের প্রধান বিচারপতির এজলাসে উঠছে পঞ্চায়েত ভোটের মামলা। সূত্রের খবর, তার আগেই কমিশন মনোনয়ন পর্বকে শান্তিপূর্ণ করার জন্য উৎসাহী সেই ছবি যাতে সামনে আসে তাই ১৪৪ ধারা জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার সকাল থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কমিশন যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে চাইছে তা তুলে ধরার চেষ্টায় এই নির্দেশিকা।


গত শনিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও কমিশনের কাছে ভোটকে হিংসামুক্ত করতে আরও পদক্ষেপ গ্রহণের বার্তা দিয়েছিলেন। আদালত ও রাজভবন দুই চাপের কাছে কিছুটা নত হয়ে ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করার বিজ্ঞপ্তি জারি করার দিকে যেতে বাধ্য হলো কমিশন। 
গত দু’দিন ধরে মনোনয়ন পর্বে রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় গোলমালের ছবি সামনে এসেছে। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে এক কংগ্রেস কর্মী খুন পর্যন্ত হয়ে গেছেন। সোমবার থেকে বিরোধীদের পাশাপাশি শাসকদলের তরফেও মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে মাত্র ৬৩৩টি মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী চারদিন রাজ্যের প্রতিটি মনোনয়ন কেন্দ্রে প্রার্থীদের ভিড় উপচে পড়তে চলেছে। 
কমিশন জানিয়েছে, মনোনয়ন পর্বকে মসৃণভাবে সম্পন্ন করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সোমবার এই মনোনয়ন পর্ব রাজ্য প্রশাসন কমিশনের দাবি মেনে কতটা মসৃণভাবে করতে পারে সেটাই দেখার।


 

Comments :0

Login to leave a comment