Bengal Financial Crisis

আর্থিক অবস্থা বেহাল, রাজ্যে শুধু জরুরি খরচ

রাজ্য

Bengal Financial Crisis

 

সরকারি কোষাগারের সম্ভাব্য আয়ের নজিরবিহীন সঙ্কটে এখন আন্দাজে ভর করে শুধুমাত্র জরুরি খরচ করার নির্দেশ জারি করতে বাধ্য হলো অর্থ দপ্তর!
আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ব্যবস্থা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে অর্থ দপ্তর। সরকারের এই নির্দেশিকা প্রকাশ্যে আসায় রাজ্যের আর্থিক ক্ষেত্রের বেআব্রু চেহারা সামনে চলে এসেছে। গত ১এপ্রিল থেকে ৩০জুন পর্যন্ত এই ব্যবস্থা বহাল ছিল। তাকে বাড়িয়ে ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত করায় রাজ্য সরকারের আয়ের সঙ্কট বলে মানছেন অর্থ দপ্তরের আধিকারিকরাই। 
গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন। সেই নির্দেশিকাতেই রাজ্য সরকারের আর্থিক সঙ্কটের বিপজ্জনক ছবি ফের একবার সামনে এসেছে। রাজ্যের সরকারি ক্ষেত্রে আর্থিক বরাদ্দ এখনই না থাকার জন্য কেবলমাত্র আন্দাজের ভিত্তিতে টাকা খরচ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সেই খরচ শুধুমাত্র কয়েকটি ক্ষেত্রের জন্য, তার মধ্যে আছে সরকারি কোষাগার থেকে বেতনও। তারসঙ্গে হাসপাতাল পরিষেবার কাজকে টিকিয়ে রাখার জন্যও আপাতত অর্থ দপ্তরের বরাদ্দ ছাড়াই খরচ করার আপাত অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

 


দুদিন পরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। পঞ্চায়েত ভোটে ভোটকর্মীর দায়িত্ব পালন করতে যাবেন লক্ষাধিক সরকারি কর্মচারী সহ শিক্ষক সমাজের একটা বড় অংশ। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এমনিতেই ডিএ বঞ্চনা নিয়ে রাজ্যের কর্মচারী আন্দোলনের তেজ সরকার টের পেয়েছে। তাই ভোটের আগে কর্মচারীদের বেতন প্রাপ্তি নিয়ে যাতে অনিশ্চয়তা তৈরি না হয়, সেদিকে নজর দিয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে বেতন খাতের খরচে। কিন্তু কোষাগারের বেহাল দশা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আগামীদিনে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন প্রাপ্তিও অনিশ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এমনিতেই গোটা দেশের মধ্যে কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বঞ্চনায় শীর্ষে এরাজ্য। ডিএ নিয়ে তুমুল ক্ষোভের মধ্যেই ভোটের ডিউটি করতে যাবেন সরকারি কোষাগার থেকে বেতন প্রাপ্ত কর্মচারীরা। এরপর যদি বেতন প্রাপ্তি নিয়ে যাতে আশঙ্কা না তৈরি হয় তাই জরুরি খরচে যুক্ত করা হয়েছে বেতনকে।  এরআগে গত ২৭ এপ্রিল রাজ্যের অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিবের তরফ থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। ওই সময়ও কর্মচারীদের বেতন সহ জরুরি প্রয়োজনের টাকা বরাদ্দ না হওয়ার কারণে আন্দাজ করে খরচ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অর্থ দপ্তর সূত্রের খবর, বাজেট পেশ ও অনুমোদন হওয়ার পর বিভিন্ন দপ্তরওয়াড়ি বাজেট বরাদ্দের টাকা আর্থিক বছরের শুরুতে আসার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কিছু অসুবিধা থাকে। ফি বছরই এই সমস্যার জন্য অর্থ দপ্তরের আর্থিক বরাদ্দের অনুমোদন ছাড়া কর্মচারীদের বেতন ও জরুরি খরচের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। গত ২৭এপ্রিলের নির্দেশিকাতে এই দপ্তরগুলিকে ছাড় দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সময়সীমা ১এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক সময়কালে এই ছাড়কে স্বাভাবিক বলেও মনে করে প্রশাসন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের অর্থ দপ্তর ফের এই ছাড়ের সময়সীমাকে বাড়িয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করে দেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনিক মহলে তুমুল আলোড়ন পড়ে যায়। 

 


গত বৃহস্পতিবারের অর্থ দপ্তরের নির্দেশিকাতে দপ্তরের অনুমোদন ছাড়া জরুরি খরচ করার সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থ দপ্তরে আধিকারিকদের বক্তব্য,‘‘ প্রথম তিন মাসের জন্য অনুমোদন ছাড়া জরুরি কাজে খরচের ছাড়পত্র দেওয়া ঠিক আছে। কিন্তু টানা ছয় মাস অর্থাৎ পরপর দুটি কোয়ার্টারের অনুমোদনহীন খরচের নির্দশিকা আসলে রাজ্যের আর্থিক ক্ষেত্রে বেসামাল চেহারাকেই সামনে এনে দিচ্ছে।’’ 
বাজটে পেশ করার সময় সরকার তার সম্ভাব্য আয়ের সঙ্গে সম্ভাব্য খরচের হিসাব তৈরি করে। কিন্তু অর্থ দপ্তরের নির্দেশিকা বুঝিয়ে দিচ্ছে, সরকার যে পরিমাণ অর্থ আয় করার জন্য ভেবেছিল সেই পরিমাণ টানা কোষাগারে জমা পড়ছে না। আয়ের সঙ্কট হচ্ছে দেখেই এখন স্রেফ জরুরি খাতের খরচকেই বরাদ্দের অনুমোদন ছাড়াই খরচ করার অনুমতির সময়সীমা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে নবান্ন। 

 


আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মচারীদের বেতন, মজুরির সঙ্গে হাসপাতালের ভর্তি রোগীদের রান্না করা খাবার, অক্সিজেন সরবরাহ খাতে খরচে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার ছাড় দেওয়া হয়েছে। অশনাক্ত মৃতদেহের শেষকৃত্যের খরচ থেকে হাসপাতালের জঞ্জাল অপসারণকেও এই তালিকার মধ্যে রাখা হয়েছে। কোন কোন খাতে আগাম আন্দাজ করে খরচ করা যাবে তার তালিকা প্রস্তুত করে নির্দেশিকাতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ এখন অর্থ দপ্তরের অনুমতি ছাড়াই জরুরি কাজে টাকা খরচের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। আগামীদিনে বরাদ্দের অনুমোদন পাওয়ার পর তা মিলিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু রাজ্যের পরিকাঠামো সহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দের সঙ্কট বহাল থাকছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment