‘‘অমিত শাহের সঙ্গে আমাদের কোনও ‘সেটিং’ হয়নি। আন্দোলন থেমেও যায়নি। ওইদিনের বৈঠকের কথা বাইরে জানাতে না করা হয়েছিল’’, মঙ্গলবার ফের সোচ্চার হলেন কুস্তিগির বজরঙ পুনিয়া। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের সঙ্গে কথা বলে কুস্তিগিররা কেউ সন্তুষ্ট হননি। আর সরকারও আমাদের দাবি মেনে নেয়নি। ফলে আন্দোলন জারি আছে। কীভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।’’
যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের গ্রেপ্তারির দাবিতে আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে সোমবার থেকে গোদী মিডিয়া উঠে পড়ে লাগে, অমিত শাহের হস্তক্ষেপে প্রতিবাদ স্তব্ধ হয়েছে প্রমাণ করতে। সাক্ষী মালিকদের কাজে যোগ দেওয়া, নাবালিকার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া, এমনই হাজারো মিথ্যা রটানো হয়। বজরঙ পুনিয়া, বীনেশ ফোগট, সাক্ষী মালিকরা যেমন স্পষ্ট জানিয়েছেন, কাজে যোগ দেওয়া মানে আন্দোলন থেকে সরে আসা নয়। তেমনই ওই নাবালিকার বাবাও বলেছেন, ‘‘অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়নি। লড়াই হবে শেষ তক।’’ পকসো আইনে অভিযোগ সরে গেলে ব্রিজভূষণকে বাঁচানো আরও সহজ হয়ে যাবে মোদী-শাহের। তাই বারবার চাপ দেওয়া হয় নির্যাতিতাকে। কিন্তু অভিযোগ প্রত্যাহারে রাজি করানো যায়নি। তাই মিথ্যা খবর রটানোর ঘৃণ্য প্রচেষ্টা শুরু করে গোদী মিডিয়া।
বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতেই যখন নজর ছিল সকলের, তখন বেশি রাতে কুস্তিগিরদের ডেকে বৈঠক সেরে ফেলার কৌশল নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের খবর, শনিবার রাত ১১টায় ডেকে পাঠানো হয় তাঁদের। গিয়েছিলেন বজরঙ পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বীনেশ ফোগট এবং সত্যবর্ত কাদিয়ান। কথাবার্তা চলে প্রায় এক ঘণ্টা মতো। বজরঙ জানালেন, শাহের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা সন্তুষ্ট হননি। সরকার তাঁদের দাবিও মেনে নেননি। ব্রিজভূষণকে গ্রেপ্তার না করে কেন আড়াল করা হচ্ছে, শাহকে সরাসরি এই প্রশ্নও করেছেন সাক্ষীরা। জবাবে শাহ বলেন, ‘‘আইন প্রত্যেকের জন্যই সমান। আইনকে আইনের পথে চলতে দিন।’’ কিন্তু মুখের কথায় যে আর কোনও ভরসা নেই, সেকথা জানিয়ে এসেছেন বজরঙ পুনিয়ারা। এদিনও ফের জোরের সঙ্গেই তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের উপর বেশি চাপ দেওয়া হলে আমরা চাকরি ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’’ নাবালিকার অভিযোগ প্রত্যাহারের গুজন নিয়ে বজরঙ বলেন, ‘‘দেশবাসীর উচিত অন্তত ওই নাবালিকার বাবার কথায় বিশ্বাস করা। ভুয়ো খবরে নয়। তথাকথিত সূত্রের খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা।’’
কুস্তিগিররা রাজনৈতিক দলগুলিকে কেন আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের এই অভিযোগের প্রত্যুত্তরে বজরঙ পুনিয়া বিরক্তির সঙ্গে বলেন, ‘‘মন্ত্রীর উচিত মুখ বন্ধ রাখা। ১২-১৩ জন নির্যাতিতা পুরো বিষয়টি ওঁকে বলেছিলেন। উনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করাবেন। আমাদের সম্মতিতে তদন্ত কমিটি গড়ে তোলার আশ্বাসও দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’ প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারিতে কুস্তিগিররা একই অভিযোগে যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ দেখাতে এলে তাঁদের ভুল বুঝিয়ে হঠিয়ে দিয়েছিলেন এই মন্ত্রীই।
এদিকে, রেসলিং ফেডারেশনের তিন-চার জন সদস্যের জবানবন্দি এদিন রেকর্ড করেছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লিতে ব্রিজভূষণের বাড়ির কয়েকজন কর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, কুস্তিগিরদের সমর্থনে শুক্রবার যন্তরমন্তরে ফের বিক্ষোভ-সমাবেশের ডাক দিয়েছিল ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন (বিকেইউ)। সাময়িকভাবে তা স্থগিত রাখা হচ্ছে বলে এদিন জানান কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের সঙ্গে কথা চলছে। কুস্তিগিররা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছেন। আমরা কুস্তিগিরদের পাশে আছি। আপাতত এই বিক্ষোভ স্থগিত রাখা হচ্ছে।’’
Comments :0