leaps and bounds corruption

ইডি’র তদন্তকারীকে সরানোর নির্দেশ হাইকোর্টের

রাজ্য

leaps and bounds corruption scam ed abhishek banerjee bengali news

৮ মাস ধরে চলা তদন্তের ‘নিট ফল’ শূন্য। তদন্তকারী অফিসারের আত্মবিশ্বাসের অভাব। এই জোড়া কারণ দেখিয়ে শুক্রবার অভিষেক ব্যানার্জির লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো ইডি’র ইনভেসটিগেটিং অফিসার বা আইও’কে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। 

বিচারপতি সিনহা এদিন নির্দেশে জানিয়েছেন, আইও মিথিলেশ কুমার মিশ্রকে সরাতে হবে। তাঁকে বাংলার কোনও মামলার সঙ্গেও যুক্ত রাখা যাবে না। ইডি’র ডিরেক্টরকে যত দ্রুত সম্ভব তাঁর বদলি পাঠাতে হবে। অমৃতা সিনহার যুক্তি, মিশ্র’র সঙ্গে কথা বলে তাঁর মনে হয়েছে, ওই আধিকারিকের আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। 

এদিন বিচারপতি সিনহা জানিয়েছেন, ৩ অক্টোবরের তদন্ত বা অনুসন্ধান যাতে কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা দেখতে হবে তদন্তকারীদের। তদন্তের স্বার্থে যা যা করণীয়, সব করতে পারবে ইডি। 

প্রসঙ্গত, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার নাম জড়িয়েছে স্কুল নিয়োগ দুর্নীতিতে। সংস্থার অন্যতম সিইও, তথা তৃণমূলের শীর্ষনেতা অভিষেক ব্যানার্জিকে ৩ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। যদিও অভিষেক জানিয়েছেন, অক্টোবরের ২ এবং ৩ তারিখ তিনি দিল্লিতে থাকবেন। সেখানে ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকানোর প্রতিবাদে ধর্ণায় বসবেন। তাই তাঁর পক্ষে হাজিরা দেওয়া সম্ভব নয়। 

এদিন সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ একটি পোস্ট করে ইডি’র উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেছেন, ‘‘কোনও শক্তি আমায় বাংলার মানুষ এবং তাঁদের অধিকারের জন্য লড়াই করা থেকে আটকাতে পারবে না। আমি ২ এবং ৩ অক্টোবর দিল্লির আন্দোলনে যোগ দেব। আমাকে পারলে আটকে দেখাও।’’

এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন,  ‘‘তৃণমূলের কর্মসূচির দিন অভিষেককে ডেকে তাঁর গুরুত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। তৃণমূলের এই কর্মসূচি আগে থেকেই ঘোষিত ছিল। তারপরেও সেই দিন অভিষেক ব্যানার্জিকে ডাক পাঠানো হল। তারফলে গোটা দেশের মিডিয়ার নজর এই ঘটনার উপর থাকবে। অভিষেকের সুবিধা হবে তাতে। তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে যে বোঝাপড়া রয়েছে, তা এই ধরণের ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হচ্ছে।’’

গত সোমবার অভিষেকের সম্পত্তির একটি খতিয়ান আদালতে জমা দেন ইডি’র আইও মিথিলেশ কুমার মিশ্র। সেই খতিয়ান দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি মিশ্র। সেই তালিকা অনুযায়ী, অভিষেক ব্যানার্জির নামে রয়েছে মাত্র তিনটি জীবনবীমা। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্যও খুব কম ছিল। 

ইডি’র তরফে বলার চেষ্টা হয়েছিল, অভিষেক যা জানিয়েছেন, তাঁর ভিত্তিতেই এই তালিকা তৈরি হয়েছে। তার জবাবে বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘‘ আপনি কি তদন্ত থেকে সরে যেতে চান? আপনারা কী পোস্ট অফিস খুলে বসেছেন? কেউ একজন এসে কিছু একটা দিয়ে গেল, আর আপনারা সেটাই প্রকাশ করে দিলেন? খতিয়ে দেখলেন না?’’

অমৃতা সিনহার বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট ছিল, তিনি ইডি’র তদন্তের উপর সন্তুষ্ট নন। তিনি মিথিলেশ কুমার মিশ্রকে সরাসরি প্রশ্ন করেন,‘‘দুর্নীতির সুরঙ্গের শেষে কবে পৌঁছনো যাবে?’’

গত সোমবার আদালত ইডি’কে একটা বড় তালিকা দেয়। সেই তালিকা অনুযায়ী, অভিষেকের পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙ্ক বিবরণ, তাঁর মা এবং বাবার সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার সিইও কারা, তাঁরা কবে কাজে যোগ দিয়েছেন, তাঁদেরও সম্পত্তির বিবরণ, সংস্থার গ্রাহক বা ক্লায়েন্ট কারা ইত্যাদি প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ জবাব আদালতে জমা দিতে হবে ইডি’কে। 

এরপর শুক্রবার সরাসরি মিথিলেশ কুমার মিশ্র’র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করেন বিচারপতি সিনহা। যদিও ইডি’র আইনজীবীর তরফে বলা হয়, তাঁদের মোট ১৩১টি মামলা সামলাতে হচ্ছে। প্রত্যেক আধিকারিককে গড়ে ২২টি করে মামলা সামলাতে হচ্ছে। তাই আরও সময় প্রয়োজন। আদালত এই যুক্তি মানেনি। যদিও আদালত জানিয়েছে, ইডি’র যদি বাড়তি সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা জানাতে হবে। 

ইডি’র আইনজীবী সেই প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের লোক কম। ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে। ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment