STORY | SOURISH MISHRA | MONEY PLANT | NATUNPATA | 2025 MARCH 6

গল্প | সৌরীশ মিশ্র | বিরাটের অটোগ্রাফ | নতুনপাতা | ২০২৫ এপ্রিল ৬

ছোটদের বিভাগ

STORY  SOURISH MISHRA  MONEY PLANT  NATUNPATA  2025 MARCH 6

গল্প | নতুনপাতা

মানি প্ল্যান্ট

সৌরীশ মিশ্র


"এটা আবার কোথা থেকে নিয়ে এলি রে?"
সদর দরজাটা খুলেই ছেলের হাতে একটা মানি প্ল্যান্টের ডাল দেখে কথাটা বললেন সন্তুর মা সন্তুকে। সন্তু স্কুল থেকে ফিরল।
"মোড়ের মাথায় হলুদ বাড়িটা আছে না, সেটার তো বিশাল বাগান, তুমি দেখেছো তো, আজ বোধহয় বাগান পরিস্কার করেছে, একগাদা ডালপালা কেটে রাস্তায় ফেলেছে বাড়িটার সামনে, তারই মধ্যে ছিল এটা, আমি নিয়ে এলাম, আমার ঘরে রাখব।" গাছের ডালটা মেঝেতে রেখে জুতো খুলতে খুলতেই টানা কথাগুলো বলে যায় মা-কে সন্তু।
সন্তুর মা মেঝে থেকে ডালটা তোলেন। বেশ সতেজ ডালটা। বেশ কয়েকটা পাতাও আছে ডালটায়। ক'দিন ধরেই নিজের ঘরে একটা ইন্ডোর প্ল্যান্ট রাখবে-রাখবে বলছিল ছেলে। সন্তুর মা-ও ঠিক করেছিলেন একদিন নার্সারি গিয়ে সন্তুর ঘরের জন্য একটা ইন্ডোর প্ল্যান্ট কিনে এনে দেবেন ছেলেকে। কিন্তু, নানান কাজের চাপে যাওয়া হয়ে উঠছিল না তাঁর। আর তারই মধ্যে আজ ছেলে মানি প্ল্যান্টটা নিয়ে এল। সন্তুর মা খুশিই হলেন এই দেখে যে ছেলে ইন্ডোর প্ল্যান্ট রাখার ব্যাপারটায় সিরিয়াস। যার অর্থ, গাছের প্রতি একটা ভালবাসা তৈরী হয়েছে ছেলের মধ্যে।
"মা, তুমি একটা কাঁচের শিশি বের করে রেখো তো। ওটাতে জল ভরে তাতে রাখব মানি প্ল্যান্টটা। ভাল হবে না, মা?" জুতোগুলো পা দিয়ে সাইড করে রাখতে রাখতে ফের বলে সন্তু।
"হ্যাঁ, ভাল হবে। তবে এখন তুই যা। হাত-মুখ ধো। খেয়ে নে। তারপর যা করার করিস।"

সন্তুর খাওয়া হলে সন্তুর মা আর সন্তু পড়ল মানি প্ল্যান্টটা নিয়ে। প্রথমেই সন্তুর মা টেনে বের করলেন একটা পুরোনো রঙিন মাছ রাখার কাঁচের বোল। সন্তু যখন রঙিন মাছ পুষতে শুরু করে প্রথম, তখন এটাতেই মাছ রাখত ও। এখন ওর বাবা-মা ওকে একটা বড়সড় অ্যাকোয়ারিয়াম কিনে দিয়েছেন। ওতেই এখন মাছ পোষে সন্তু। বাড়িতে অ্যাকোয়ারিয়াম আসার পর থেকেই, এই কাঁচের বোলটা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। সন্তুর মা ওটাকে ধুয়ে ভাল করে পরিস্কার করে নিলেন। অন্যদিকে, সন্তুও মানি প্ল্যান্টটা পরিস্কার করল। অনেক ধুলো-বালি লেগেছিল ওটাতে। রাস্তায় পড়ে ছিল না ওটা! তারপর সন্তুর মা আর সন্তু সন্তুর ঘরে এল বোলটা আর মানি প্ল্যান্টটা নিয়ে। বোলটাকে রাখল ওরা সন্তুর পড়ার টেবিলের উপর। পড়ার টেবিলের পাশেই একটা জানলা। জানলা দিয়ে নরম রোদ ঢুকছে। সন্তু মগে করে জল এনে ভরে দিল বোলটা। তারপর, মানি প্ল্যান্টের ডালটা রাখল তাতে সযত্নে। জানলা দিয়ে ঢোকা আলতো রোদ পড়েছে এখন মানি প্ল্যান্ট রাখা কাঁচের বোলটার উপর।
"মানি প্ল্যান্টটা কি সুন্দর লাগছে!" স্বগতোক্তি করে সন্তু।
সত্যিই তাই। মানি প্ল্যান্টটা রাখায় পড়ার টেবিলের চেহারাটাই যেন বদলে গিয়েছে মুহূর্তের মধ্যে। সন্তুর মা কথাগুলো ভাবেন। তিনি তাই ঠিক করে ফেললেন, ক'দিন এই বোলের জলে রাখলে যখন ডালটায় শিকড় বেরোবে, তখন একটা সুন্দর দেখতে ছোটো টব নিয়ে এসে ওতে মাটি ভরে সেটাতে লাগিয়ে দেবেন তিনি ডালটা। তাহলে একদিকে গাছটা যেমন আরো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে, আরো ডালপালায়, পাতায়-পাতায় ভরে যাবে, অন্যদিকে গাছটার সবুজে এই ঘরটাও আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।
এইসব ভাবছেন যখন সন্তুর মা, সন্তু ততক্ষণে ফের পায়ে-পায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে পড়ার টেবিলের কাছে। আলতো করে হাত বোলাচ্ছে সে এখন মানি প্ল্যান্টটার একটা ছোট্ট পাতায়, যেন আদর করছে সে পাতাটাকে।

Comments :0

Login to leave a comment