Anil Kapoor

‘বামফ্রন্ট সরকার সাহায্য না করলে আমার অভিনেতা হওয়া হতো না’

রাজ্য

 নিজের অজান্তেই কলকাতা চলচিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে এরাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগের প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা অনিল কাপুর। 
কলকাতার সঙ্গে অনিল কাপুর তাঁর সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে এদিন ৪৩ বছর আগে নির্মিত একটি ছবির প্রসঙ্গ আনেন। সেই ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অনিল কাপুর। বিশিষ্ট চলচিত্র পরিচালক এমএস সথ্যুর নির্দেশনায় ছবির নাম ছিল, ‘কাঁহা, কাঁহা সে গুজর গ্যায়া’। এরাজ্যে তখন সদ্য তৈরি হয়েছে বামফ্রন্ট সরকার। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে গঠিত সেই সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এমএস সথ্যুর নির্মিত এই ছবির প্রযোজনা করেছিল রাজ্য সরকার। ৪৩ বছর আগের এই ঘটনার কথা এদিন উল্লেখ করে অনিল কাপুর বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ছবির জন্য অর্থ দিয়েছিল। আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই, সরকারি অর্থ সাহায্যের এই ছবি তৈরি না হলে আমার ফিলম ক্যারিয়ার তৈরি হতো কি না সন্দেহ।’’ কলকাতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কীভাবে তা ব্যাখ্যা করে সরকারি সাহায্যে নির্মিত ছবির কথা যখন বলছেন, মঞ্চে বসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সহ প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি সহ চলচিত্র জগতের বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা। 
রাজ্যের চলচিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন অবশ্য জানাচ্ছেন, বামফ্রন্ট সরকারের ওই পর্বে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আর্থিক সাহায্যে বহু ছবি নির্মিত হয়েছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে বসা পরিচালক গৌতম ঘোষের পরিচালনায় রাজ্য সরকারের অর্থ সাহায্যে তৈরি হয়েছিল ‘দখল’ ছবি। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত’র পরিচালনায় ‘দূরত্ব’, পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর ছবি ‘ময়না তদন্ত’ ও ‘চোখ’, বিপ্লব রায়চৌধুরির পরিচালনায় ‘গরম ভাত’ ও ‘ভূতের গল্প’ নির্মিত হয়েছিল রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিরও প্রযোজক রাজ্য সরকার। এদিন কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবের মঞ্চে অতীতের রাজ্য সরকারের এই ভূমিকার কথা স্মরণ করাতে গিয়ে অনিল কাপুর জানান,‘‘আমি মুম্বাই’র ভিটি থেকে ট্রেনে চড়ে হাওড়া স্টেশনে নামি। তারপর বাসে চড়ে বালিগঞ্জের একটা গেস্ট হাউসে উঠেছিলাম। তারপর থেকে টানা ৪৫দিন আমি কলকাতাকে বাড়িঘর বানিয়ে ফেলেছিলাম। ৪৩বছর আগের এই স্মৃতিই আমার সঙ্গে কলকাতার তৈরি হয়েছিল। রাজ্য সরকার যদি অর্থ না দিত তাহলে আমার সিনেমার অভিনেতা হওয়া হতো না।’’ 
রাজ্যে সুস্থ সংস্কৃতি প্রসারে সরকার ঠিক কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে, এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা অনিল কাপুর। তবে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এসবের ধারপাশ দিয়ে যেতে নারাজ। তাঁর হাতে থাকা রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের সাফল্য বলতে সরকারি টাকা খরচ করে নানান পুরস্কার চালু করা। সরকারি টাকায় সম্মান দেওয়া। সেই পুরস্কার প্রাপ্তির মাপকাঠি কী তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী এদিনও চলচিত্র উৎসবের উদ্বোধনে বলেছেন,‘‘ মজা করুন। আনন্দ করুন। দেহটাকে সুস্থ রাখুন। ডোন্ট ওরি। সব সময় উৎফুল্ল থাকুন। আপনার জয় হবেই।’’ 
গত ১২ বছরে রাজ্য সরকার উৎসব মানে দেদার টাকা খরচ করে মজায় মাতানোকেই সংস্কৃতির তকমা দিয়ে এসেছে। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অনিল কাপুরকেই মমতা ব্যানার্জি তাঁর ‘এক, দুই তিন’ গানের কথা যেমন বলেছেন। আবার সলমান খানকে এরাজ্যে এসে শুটিং করার আরজি জানিয়েছেন। গানের তালে সলমান খান, সোনাক্ষী সিনহাদের সঙ্গে নাচের তালেও পা মিলিয়েছেন। 
২৯ তম কলকাতা চলচিত্র উৎসবে এবারে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন বলিউড তারকা সলমন খান, মহেশ ভাট, অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিনহা, সৌরভ গাঙ্গুলি সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ। এবারের চলচিত্র উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি হিসাবে ঠিক করা হয়েছে স্পেনকে। ৩৯ টি দেশ থেকে ছবি এসেছে উৎসবে। প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান পেয়েছে ৭২টি ছবি। প্রতিযোগিতার বাইরে দেখানো হবে ৯৭টি সিনেমা। এছাড়াও শর্ট ফিল্ম ও ডকুমেন্টারি ছবিও থাকছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment