Threat Call

টাকা চেয়ে হুমকি, আতঙ্কে ব্যারাকপুরের বিরিয়ানি ব্যবসায়ী

রাজ্য

কুড়ি লক্ষ টাকা দাবি করে বারাকপুরের এক নামকরা বিরিয়ানি ব্যাবসায়ীর মালিকের ছেলে অনির্বাণ দাসকে হুমকি দিয়ে দুষ্কৃতীরা ফোন করে। জানানো হয় টাকা না দিলে বারাকপুরে এর আগে যে গুলি চালানোর  ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। বিভিন্ন ফোন থেকে ফোন করে টাকা দাবি করছে। আতঙ্কে ব্যাবসায়ীর পুত্র অনির্বাণ দাস দোকানে যেতে ভয় পাচ্ছেন। গত দুই বছর আগে এই ব্যাবসায়ীর ওয়ারলেস মোড়ে বিরিয়ানির দোকান লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। দোকানে তখন অনির্বাণ দাসের বাবা বসেছিলেন। তখন অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তাদের বাড়ির সামনে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মধ্যমগ্রামে বিরিয়ানির দোকান বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। সেই দোকানে মহিলা সংক্রান্ত একটি ঘটনা ঘটে। এখন গত কয়েক মাস ধরে টাকা দাবি করে হুমকি ফোন আসছে বলে জানালেন অনির্বাণ দাস। এই ঘটনায় পুরো পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। 
যদিও এই বিরিয়ানি ব্যাবসায়ীর পুত্র অনির্বাণ দাস তৃণমূলের মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। বারাকপুরের বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর অনুগামী হিসাবে পরিচিত। এই ঘটনা তৃণমূলের নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে কোনো সুরাহা মেলে নি বলে দাবি করেছেন। আতঙ্কে তিনি এখন নিজে গৃহবন্দী অবস্থায় থাকছেন। রাস্তায় বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন। ব্যাবসার জায়গায় যেতে পারছে না। বাড়ি পাল্টে পাল্টে তিনি থাকছে। এছাড়াও বিভিন্ন গাড়ি পাল্টে পাল্টে ব্যাবহার করছেন। এক বাড়িতে ভয়ে রোজ থাকছে না। এক গাড়ি প্রতিদিন ব্যাবহার করছে না। গত চার মাস ধরেই টাকা দাবি করে এই হুমকি ফোন আসছে। বারাকপুরের ব্যাবসায়ী অজয় মন্ডলের গাড়ির ওপর গুলি চালানোর ঘটনার এগারো দিন কেটে গেছে। এখনও একজনকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে নি। ঘটনার মূল অভিযুক্ত শাহজাদাকে পুলিশ এখনও ধরতে পারে নি। এই ঘটনায় বিহারের বেউর জেলে বন্দি সুবোধ সিং এর যোগ আছে তাকে এখানে আনার জন্য পুলিশ বিহারে গেছে। কিন্তু এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শাহজাদা ও তার সাগরেদদের এখনও পুলিশ ধরতে পারে নি। গত এগারো দিনে বারাকপুর এলাকার তিনজন ব্যাবসায়ী অজয় মন্ডল,তাপস ভগত ও অনির্বাণ দাসের কাছে টাকা দাবি করে হুমকি ফোন আসছে। এর মধ্যে অজয় মন্ডলেরর গাড়ি লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। বারাকপুর শিল্পাঞ্চল দুস্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিনত হয়েছে। এই দুষ্কৃতীরা তৃণমূল ও বিজেপি’র ছাতার তলায় অবস্থান করছে। পুলিশ নীরব দর্শক।
বারাকপুর ওয়ারলেস মোড়ের নামকরা বিরিয়ানি ব্যাবসায়ীর মালিকের পুত্র অনির্বাণ দাস জানিয়েছেন, কুড়ি লক্ষ টাকা দাবি করে বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর কাছে ফোন আসছিল। সোমবার বিরিয়ানির সোদপুর সহ বিভিন্ন দোকানগুলো বন্ধ করে রাত দেড়টার সময় তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। মুরাগাছা সিগন্যালের কাছের থেকে দুটো বাইকে করে চারজন তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে এগোতে থাকে। এরমধ্যে একটি বাইক তার গাড়িকে ওভারটেক করে এগিয়ে যায়। অন্য বাইকটি তার গাড়ির পেছনে পেছনে আসতে থাকে। এই বাইকের কোনো নম্বর প্লেট নেই। দুটো বাইকে চারজন ছিল। ব্যাবসায়ী অনির্বাণ দাস বারাকপুর ওয়ারলেস মোড় থেকে একটু এগোলেই পেছনের বাইকটি ডানদিকে নীলগঞ্জের দিকে যায়। কিন্তু গাড়ি নিয়ে সোজা বারাকপুর -কল্যানী এক্সপ্রেসওয়ের দিকে এগিয়ে যান অনির্বাণ। সামনের বাইকটি তার গাড়ি লক্ষ্য করে এগোতে থাকে। আতঙ্কে ব্যাবসায়ী গাড়ি ঘুরিয়ে ওয়ারলেস মোড়ে পুলিশের সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। আতঙ্কে তিনি গাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছিলেন। সেই সময় তার মাথা ঠিকমতো কাজ করছিল না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর তিনি পাশেই তার নিজের একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন। ব্যাবসায়ী অনির্বাণ দাস সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘‘আমরা একেবারে রাস্তার ফুটপাতে ব্যাবসা করে আজকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। এখন আমাদের ব্যাবসা অনেক বড় হয়েছে। এই ব্যাবসা বড় করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। রক্ত জল করে এই পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করার পর এইভাবে তোলা দিতে হয় সেটা কি সম্ভব? এর আগেও কুড়ি লাখ টাকা দাবি করে ফোন করে। এইভাবে টাকা চাইলে কি দেওয়া সম্ভব? মাঝে মধ্যেই এরা টাকা দাবি করে ফোন করে। টাকা না দিলে বারাকপুরের মতো ঘটনা ঘটবে বলে হুমকি দেয়। এইভাবে ব্যাবসা করতে পারছি না। কি ভাবে ব্যাবসা করবো? মনের মধ্যে সবসময় একটা আতঙ্ক। ভালো শার্ট প্যান্ট পরে এসে গুলি করে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বাবার বয়স হয়েছে। বাবা আর টেনশন নিতে পারছে না। আমি রাতে ঘুমাতে পারছি না। বাড়ির লোক কান্নাকাটি করছে। প্রচন্ড চাপের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। বারাকপুরের সিপি কে সব জানিয়েছি। তিনি সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। এর আগেও হুমকি ফোন এর ঘটনা জানিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই সুরাহা হয় নি। বাড়ির থেকে বেরিয়ে মোহনপুর থানায় যাচ্ছি। অথবা সিপি অফিসে যাচ্ছি। সেটাও গাড়ি বদলে বদলে যাচ্ছি। আমাদের যা ব্যাবসা সেটা বাড়িতে এইভাবে বসে সম্ভব নয়।’’

Comments :0

Login to leave a comment