Cooch Behar

পুলিশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোচবিহারে সোচ্চার সিভিক ভলান্টিয়াররা

জেলা

কোচবিহার পুন্ডিবাড়ি থানার সামনে বিক্ষোভ অবস্থান সিভিক ভলান্টিয়ারদের। ছবি- অমিত কুমার দেব।

কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি থানার পুলিশ আধিকারিকদের ‘দাদাগিরি। কর্মরত এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে মারধর করার অভিযোগ উঠল সেই থানারই কর্তব্যরত এক পুলিশ আধিকারিক চন্দ্রনাথ বটব্যাল সহ দুজনের বিরুদ্ধে। ওই পুলিশ আধিকারিক থানার মেজবাবুর দায়িত্বে রয়েছেন। ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে থানার সামনে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। হামলার প্রতিবাদে অন্যান্য সিভিকররা আক্রান্ত সহকর্মীর সঙ্গে প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হন। কোচবিহার পুন্ডিবাড়ি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার সন্তোষ দাসের অভিযোগ, একাধিকবার এই থানার মেজবাবুর আদেশে বেশ কিছু আইন বিরুদ্ধে কাজে তার সঙ্গ দিতে অস্বীকার করায় বিনা দোষে তাকে বেপরোয়া ভাবে মারধর করেছেন এই পুলিশ আধিকারিক। আর এই ঘটনার প্রতিবাদে অন্যান্য সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের সাথে নিয়ে মঙ্গলবার পুন্ডিবাড়ি থানার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে বসলেন নির্মম পুলিশি আক্রমণের শিকার হওয়া এই সিভিক ভলান্টিয়ার। 
কোচবিহার জেলার পুন্ডিবাড়ি থানার মেজবাবু চন্দ্রনাথ বটব্যাল এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর শরিফুল হকের বিরুদ্ধে বিনা কারণে তাকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ আনেন সন্তোষ দাস নামের এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তার আরও অভিযোগ, এই অন্যায় অত্যাচার চোখের সামনে দেখেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন এই থানার বড়বাবু হিমাদ্রি ঘোষ। 
আক্রান্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সন্তোষ দাসের অভিযোগ, সোমবার গভীর রাতে এই পুন্ডিবাড়ি থানার সাব ইন্সপেক্টর কৃষ্ণ বর্মনের সাথে কর্মরত অবস্থায় ছিলেন তিনি। এই সময় এই সাব ইন্সপেক্টরের কাছে মোবাইলে ফোন আসে যে কিছুক্ষণের মধ্যেই এই পুন্ডিবাড়ি থানার অন্তর্গত খাগড়াবাড়ি এলাকায় অভিযান হবে এবং তাকে তার টিমসহ উপস্থিত থাকতে হবে। এই মেসেজ পাওয়ার পরই তারা সকলে এই সাব ইন্সপেক্টরের গাড়িতে চলে আসেন পুন্ডিবাড়ি থানার সামনে। এই থানার লকআপে থাকা এক আসামি এই অভিযানের এলাকা চিনিয়ে দেবেন বলে কর্তব্যরত মেজবাবু চন্দ্রনাথ বটব্যাল তাদের গাড়িতেই আসামিকে তুলতে বলেন। কিন্তু যেহেতু মেজবাবু নিজে এই অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন এবং তাকেই এই অভিযানের স্থান চিনিয়ে দেবেন সংশ্লিষ্ট এই আসামি। তাই মেজবাবুর গাড়িতেই এই আসামিকে তোলার কথা বলা হয় এবং তিনি তাকে মেজবাবুর গাড়িতে তুলতে গেলেই অতর্কিত ভাবে মেজবাবু তার দিকে তেড়ে গিয়ে তাকে মারতে মারতে নিয়ে যান থানার বড়বাবুর ঘরে এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনেন যে, তিনি নাকি বেআইনি অস্ত্র দিয়ে আসামিকে মারতে মারতে গাড়িতে তুলছিলেন। এই সময় মেজ বাবুর সাথে তাকে মারধর করতে থাকেন এসআই শরিফুল হকও।  কিন্তু সবকিছু দেখেও চুপ করে থাকেন বড় বাবু। এরপর আশ্চর্যজনক ভাবে তাকে মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয় এই থানার পার্শ্ববর্তী পুন্ডিবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসককে তারা বলেন, এমন মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করতে হবে, যে মেডিকেল রিপোর্টে বলা হবে যে কর্তব্যরত এই সিভিক ভলান্টিয়ার মদ্যপ অবস্থায় রয়েছেন। কিন্তু পুলিশ আধিকারিকদের এই অন্যায় আবদার মানতে অস্বীকার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন একজন সুস্থ মানুষকে মদ্যপ প্রমাণ করার কোন অধিকার তার নেই। এরপরই আশাহত হয়ে এই পুলিশ আধিকারিকরা আবারও তাকে মারতে মারতে পুন্ডিবাড়ি থানার সামনে নিয়ে এসে বড় বাবুর ঘরে চলে যান। এরপর বড় বাবুর ঘরে যুক্তি পরামর্শ করে তারা তাকে আদেশ করেন পুন্ডিবাড়ি থানা ছেড়ে চলে যেতে।
এই ঘটনায় রীতিমতো ভেঙে পড়েন এই সিভিক ভলান্টিয়ার থানার ভেতরে তার সাথে পুলিশ আধিকারিকরা এধরনের আচরণ করবেন, তা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।  এই দুই পুলিশ আধিকারিক হাত এবং লাঠি দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করায় তার বুক এবং ঘাড়ে প্রচন্ড যন্ত্রণা হওয়ায় তিনি পুন্ডিবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেলে, দ্রুততার সাথে তার বুকের এক্সরে করতে বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু সব যন্ত্রণা সহ্য করে এই পুলিশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এদিন অন্যান্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের সাথে নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ সামিল হন তিনি।

Comments :0

Login to leave a comment