Coromandel Express Accident

নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের টাকায় দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সহায়তা!

রাজ্য

Coromandel Express Accident

নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের টাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা করবে রাজ্য সরকার!
করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার রেশের মধ্যেই বুধবার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারগুলিকে ডেকেছে রাজ্য সরকার। সরকারি ওই অনুষ্ঠান থেকেই মমতা ব্যানার্জি দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারগুলির হাতে আর্থিক সহায়তা দেবেন। কিন্তু রেল দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তার এই কর্মসূচির জন্য টাকা খরচ করা হবে নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে।
রেলের গাফিলতিতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর এরাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির হাল কতটা নিম্নগামী সেই তথ্য সামনে আসার পর থেকেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য সরকার। রাজ্যে কাজ না পেয়ে ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু ও আহত হওয়ার মিছিল দেখে তড়িঘড়ি আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করে দেন মমতা ব্যানার্জি। দুর্ঘটনার পর এক দফা ঘুরে আসার পর এদিন আবার ভুবনেশ্বর ও কটকের হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন মমতা ব্যানার্জি। বুধবার আবার ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তাঁর দুর্ঘটনার হতাহতদের পরিবারকে নিয়ে কর্মসূচি রেখেছেন। 
সেই ঘোষণার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় ছিল, দুর্ঘটনায় আহত না হলেও আতঙ্কগ্রস্ত যাত্রীদের ১০ হাজার টাকা এককালীন অর্থ সাহায্যের পাশপাশি আগামী তিন মাস ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এখন সরকার ঠিক করছে, যাত্রীদের মধ্যে যাঁরা কাজের সন্ধানে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্রান্ট লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ড আলাদাভাবে এই খরচ বহন করবে বলে ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু বিপুল এই আর্থিক বোঝা শেষ পর্যন্ত চাপতে চলেছে নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ওপরই।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’র পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি দেবাঞ্জন চক্রবর্তী জানান, ‘‘নির্মাণকর্মী কল্যাণ তহবিলের টাকা সরকার কোনোভাবেই অন্য খাতে খরচ করতে পারে না। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করছি। প্রয়োজন হলে আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে আদালতে যাবো।’’ সরকারের এই সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার পর মুখরক্ষার জন্য নবান্নের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘আপাতত নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের টাকা থেকে খরচ হলেও পরে অর্থ দপ্তর টাকা মিটিয়ে দেবে।’’ 
আসলে সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তাই গ্রামের কর্মসংস্থানের হাল কী, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ট্রেন দুর্ঘটনায় এরাজ্যের হতাহতের সংখ্যাকে। গ্রামে কাজ না পেয়ে ভিনরাজ্যে কাজের সন্ধানে চলে যাওয়ার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলার মানুষই বেশি। গরিব সংখ্যালঘু পরিবার থেকেও ভিনরাজ্যে চলে যাওয়ার এই স্রোত সরকার টের পেয়েছিল কোভিড পর্বে আকস্মিক লকডাউনের সময়। গত বিধানসভা ভোটের আগে ‘স্নেহের পরশ’ নাম দিয়ে এক প্রকল্প এনে পরিযায়ী শ্রমিকদের মন জয় করতে নেমেছিল রাজ্য সরকার। এখন রেল দুর্ঘটনার পর সেই পথেই নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের টাকা খরচ করে গ্রামের কাজ না পাওয়া মানুষের কাছে বার্তা দিতে চলেছেন মমতা ব্যানার্জি।

নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য শ্রম দপ্তরের অধীন একটি ওয়েলফেয়ার বোর্ড আছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল বিল্ডিং অ্যান্ড আদার কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডে শ্রম দপ্তরের আধিকারিকদের পাশপাশি এরাজ্যের ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও আছেন। সূত্রের খবর, নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই রাজ্য সরকার বিপুল টাকা নিয়ে নিচ্ছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সরকারি কোনও সহায়তা প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ করার দায়িত্ব অর্থ দপ্তর। কিন্তু এরাজ্যে আর্থিক সঙ্কট এমনই যে অর্থ দপ্তর কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা খরচ করার মতো অবস্থা নেই। তাই বেআইনিভাবেই নির্মাণ শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের টাকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুধবার ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে সাহায্যের চেক তুলে দিতে চলেছেন।
১০ লক্ষ টাকার অধিক কোনো আবাসন নির্মাণ হলেও সরকার সেখান থেকে ১ শতাংশ হারে সেস আদায় করে। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প থেকে প্রোমোটারদের কাছ থেকে আদায় হয় সেস জমা পড়ে নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে। নবান্ন সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকার বিপুল অর্থ সঞ্চিত আছে।

সরকারের নজর পড়েছে নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণে গচ্ছিত এই বিপুল অর্থের দিকে। বছর তিনেক আগে এই নির্মাণ শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল থেকে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা রাজ্য সরকার কার্যত হাতিয়ে নিয়েছিল। আবার সেই টাকার দিকেই নজর পড়েছে নবান্নের। 
এরাজ্যে নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে নথিভুক্ত নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩১ লক্ষ ৯৭ হাজার। নথিভুক্ত এই নির্মাণ শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য সরকারের বেশ কিছু সহায়তা প্রকল্প আছে। নথিভুক্ত নির্মাণ শ্রমিক পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনা, দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হলে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, মাতৃত্বকালীন আর্থিক সহায়তা করার ব্যবস্থা আছে তহবিলের টাকায়। সেস মারফত আদায় হওয়া তহবিলের টাকায় অন্য খাতে খরচ করার আইনি কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এরাজ্যে এই বেআইনি কাজটাই হতে চলেছে। নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের টাকা দিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। 
রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রেল দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে এককালীন ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার। একইসঙ্গে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম যাত্রীকে এককালীন ১ লক্ষ টাকা, স্বল্প আহতদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা। করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত এরাজ্যের ১০ ৩জনের মৃতদেহ শনাক্ত হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২০৬ জন। রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দুর্ঘটনায় আহত না হলেও আতঙ্কিত যাত্রীদেরও এককালীন ১০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে। পাশপাশি আগামী তিন মাস পরিবারগুলিকে ২ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

Comments :0

Login to leave a comment