ধীমান রক্ষিত ও রামশঙ্কর চক্রবর্তী: তমলুক
দাঙ্গা হওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী আগাম বলেছিলেন। দাঙ্গা হবে যখন জানতেন, ব্যবস্থা কেন নিলেন না? নিজেদের স্বার্থে কী দাঙ্গাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন? এখন বলছেন, পুলিশ এক ঘণ্টা শিথিল ছিল! সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাসকের অফিসের সামনে জেলা বামফ্রন্টের অবস্থান বিক্ষোভ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে এই প্রশ্ন করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, গোটা রাজ্যের মানুষ যখন আপনার দলের নেতা-মন্ত্রীদের চোর বলছেন, পঞ্চায়েত লুটের কথা বলছেন, চাকরি বিক্রির কথা বলছেন, তখন মানুষকে গুলিয়ে দিতে বিভাজনের রাজনীতি করছেন? লাভ হবে না। রাজ্যের মানুষ জাগছে। রাজ্যের মানুষ জেগেছে বলেই আপনাদের চোর বলছে। দুই ফুল মিলে এরাজ্যের মানুষকে এপ্রিল ফুল বানিয়েছিল। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ আর এপ্রিল ফুল হতে চায় না।
স্বচ্ছ পঞ্চায়েত নির্বাচন, রেগা, আবাস, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়িতে জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ অবস্থানের ডাক দেয় জেলা বামফ্রন্ট।
সেই বিক্ষোভ অবস্থানে মহম্মদ সেলিম বলেন, ধর্মের নামে, জাতের নামে এই বিভাজন তো ছিল না রাজ্যে। কারা আমদানি করল? এই তৃণমূল। এখন শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি’তে গিয়েছেন। আগে কোথায় ছিলেন? তৃণমূলেই তো! এই শুভেন্দু, মুকুলকে ‘মুসলিম-দরদি’ সাজিয়েছিলেন মমতা। আসলে আরএসএস’র রাজনীতি করা হয়েছিল। মুকুল, শুভেন্দু তার এজেন্ট ছিল। দেখছেন না, জিএসটি ১৮ শতাংশ! আপনি যা কিনতে যাবেন, তাতেই জিএসটি দিতে হবে। জিএসটি’র ১৮ শতাংশের মধ্যে ৯ শতাংশ রাজ্যের, ৯ শতাংশ কেন্দ্রের। এটাকেই বলে ভাগাভাগি। এই সুন্দর ভাগাভাগি, বোঝাপড়ার পরেও বিজেপি লড়বে তৃণমূলের বিরুদ্ধে?
বিক্ষোভ অবস্থানে সিপিআই (এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেছিল বামফ্রন্ট সরকার, সারা দেশের কাছে তা মর্যাদার মডেল ছিল। এখন সারা দেশের কাছে লুটের মডেলে পরিণত হয়েছে এরাজ্যের পঞ্চায়েত। এরাজ্যের সরকারে বামফ্রন্ট আসার পর রাস্তাঘাট, বিদ্যুতায়ন হয়েছিল। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। দীঘা পর্যটন কেন্দ্র নতুন চেহারায় মানুষের কাছে পৌঁছেছিল। জেলায় নতুন জেলা শাসকের দপ্তর চত্বরে এই কয়েক একর জায়গা বামফ্রন্ট সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। তৃণমূল শুধু নীল-সাদা রং করে তারা নিজেদের উন্নয়ন বলে দাবি করছে।
সুজন চক্রবর্তী আরও বলেন, সিঙ্গুরে কারখানা, নন্দীগ্রাম নয়াচরে কেমিক্যাল হাব হতে পারত। কিন্তু হতে দেয়নি চক্রান্তকারী তৃণমূল বাহিনী। তাদের সঙ্গে ছিল আরএসএস, বিজেপি, মাওবাদী সহ বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি। তৃণমূল এখন রাজ্যটার কী হাল করেছে, তা মানুষ বুঝতে পারছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে। রামনবমীর দিন অশান্তি হতে পারে এ খবর আগাম ছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তা দাবি করেছেন। তাহলে দাঙ্গা আটকাতে পারেননি কেন? এই ব্যর্থতা কার? সেই জবাব সাধারণ মানুষ চাইতে পারে জেনে চার দিন দীঘাতে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনাদি সাহু বলেন, দেশ বিক্রি করছেন নরেন্দ্র মোদী। আর, রাজ্যকে লুট করছেন মমতা ব্যানার্জি। দু’জনেই এক কাজ করছেন। দেশের কৃষকের মতো রাজ্যের কৃষকও ফসলের দাম পাচ্ছেন না। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও কথা নেই। রাজ্যের শূন্যপদে নিয়োগ হচ্ছে না, যোগ্যদের বঞ্চিত করে শাসক দলের নেতারা কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করেছে।
তিনি আরও বলেন, চোর শাসকের বিরুদ্ধে মানুষ জাগছে। রাজ্যের সমবায় নির্বাচন, হলদিয়াতে শ্রমিকদের নির্বাচনে বিকল্প হিসাবে বামপন্থীদের বেছে নিচ্ছেন মানুষ। সারা দেশে লুট চলছে। এরাজ্যে ডিএ’র টাকা, কৃষকের বাড়ি তৈরির টাকা, ১০০ দিনের কাজের টাকা লুট করেছে তৃণমূল নেতারা। ১০০ দিনের কাজের টাকা মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। বিডিও এবং পঞ্চায়েত দপ্তর লুটের সব সাক্ষী। এখন দিল্লি দিল্লি বলে চিৎকার করছে এরাজ্যের সরকার। আগে লুটের সমস্ত টাকা সাধারণ মানুষকে ফেরত দিক তৃণমূলের নেতারা। তারপর বড় বড় কথা শোনাবে।
এদিনের অবস্থান বিক্ষোভের সভাপতি সিপিআই(এম)’র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক এবং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক নিরঞ্জন সিহি বলেছেন, গতবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের অধিকার লুট হয়েছিল। ভোট দিতে দেওয়া হয়নি সাধারণ মানুষকে। নির্বাচনের পরে ব্যালট বাক্স ভেঙে তৃণমূলকে জেতানো হয়েছিল। পুলিশ প্রশাসন যেন এবার সেই ভুল আর না করে। সারা রাজ্যের মতো এই জেলাতেও তৃণমূল, বিজেপি’র বিকল্প হিসাবে বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একে কাজে লাগাতে হবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে, যেভাবে সাগরদিঘিতে তৃণমূল-বিজেপি’র বিকল্প হিসাবে সিপিআই(এম) সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী জিতে বিকল্পের প্রমাণ দিয়েছে।
এদিনের অবস্থানে সিপিআই’র রাজ্য পরিষদের সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, আরএসপি’র সুভাষ নস্কর, ফরওয়ার্ড ব্লকের ডলি রায়, এনসিপি’র হৃষিকেশ পড়িয়া বক্তব্য রেখেছেন।
এই অবস্থান বিক্ষোভ থেকে স্বচ্ছ পঞ্চায়েত নির্বাচন, দুর্নীতির তদন্ত সহ একগুচ্ছ দাবিতে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজী ও পুলিশ সুপার অমরনাথ কে’র কাছে ডেপুটেশন দেয় জেলা বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন নিরঞ্জন সিহি, হিমাংশু দাস, গৌতম পন্ডা, সুবল চন্দ্র সামন্ত, অশ্বিনী সিনহা, হৃষিকেশ পড়িয়া, নির্মলকুমার বেরা।
Comments :0