আদালত যখন নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন রাস্তায় নেমে বাংলার মানুষও চোদ্দতলা থেকে লুটেরাদের টেনে নামাতে তৈরি হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার নদীয়ার তেহট্ট ও চাপড়ায় দু’টি জনসমাবেশে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই মন্তব্য করে বলেছেন, এতদিন মানুষকে হামলা, মামলা, জরিমানার ভয় দেখিয়ে রাখতো তৃণমূল। এখন মানুষ জাগতে শুরু করেছে দেখে তৃণমূলই মানুষকে ভয় পাচ্ছে। মানুষকে আর চুপ করিয়ে রাখা যাবে না, বুথ স্তর থেকে নবান্নের চোদ্দতলা পর্যন্ত দুর্নীতির আখড়া ভাঙবে মানুষ।
শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিকে প্রকাশ্যে এনে আইনের হাতুড়ির ঘা মারছে আদালত। সেলিম তার উল্লেখ করে বলেছেন শুধু লুট নয়, শিক্ষাব্যবস্থাকে এভাবে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়ে ধ্বংস করতে চাইছে তৃণমূল। শিক্ষায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালত তার আইনি প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। কিন্তু লুটেরাদের তাড়াতে মানুষকে এককাট্টা হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আগে গ্রাম থেকে লুটেরাদের তাড়িয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গড়তে হবে, তার পরে নবান্ন থেকেও লুটেরাদের তাড়াতে হবে। গুন্ডা মস্তান দুষ্কৃতীদের জড়ো করে মুখ্যমন্ত্রী আর রেহাই পাবেন না।
বৃহস্পতিবার নদীয়া জেলার চাপড়া ও তেহট্টে দুটি সমাবেশে ভাষণ দেন মহম্মদ সেলিম। এদিন তেহট্ট ও চাপড়ার দুই সমাবেশকে সামনে রেখে ব্যাপক সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করেছিল প্রশাসন। সেলিম প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, লাল ঝান্ডার মিছিল সমাবেশে এত ভয় ? এখানে পুলিশের প্রয়োজন নেই। যখন খুন ধর্ষণ জোচ্চুরি লুট হয়েছে পুলিশ কোথায় ছিল ? এই পলাশীপাড়া কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক টেট দুর্নীতির অন্যতম নায়ক এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আরেক মানিক জেলের ভাত খাচ্ছে। তৃণমূলের এরকম অনেক মণিমুক্তো মানিক গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। লুটের জন্য তাদের আশ্রিত গুন্ডা মস্তানরা যখন গুন্ডামি করছিল, এই পুলিশই তাদের পাহারা দিয়েছে। সেলিম পুলিশ প্রশাসনকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, আপনাদের যারা অন্যায়ের শরিক তারাও পার পাবেন না। যে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় গুন্ডামি মস্তানির সময় সহযোগিতা করেছেন, তিনি আপনাদের রক্ষা করবেন না।
বুধবার সিপিআই(এম)’র চাপড়া এরিয়া কমিটির ডাকে চাপড়া ভিলেজ হল ময়দানে কয়েক হাজার মানুষের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম) নেতা হেকমত আলি মণ্ডল। শুরুতে বক্তব্য রাখেন পার্টিনেতা শামসুল ইসলাম মোল্লা। মহম্মদ সেলিম ছাড়াও দুটি সমাবেশেই বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা সম্পাদক সুমিত দে। অন্যদিকে তেহট্ট উত্তর, দক্ষিণ ও পলাশীপাড়া এরিয়া কমিটির যৌথ উদ্যোগে ৫ হাজারের বেশি মানুষের অংশগ্রহণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে তেহট্ট হাউলিয়া মোড়ে। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টিনেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক রঞ্জিত মণ্ডল।
এই সমাবেশের আগে জিতপুর পিডব্লিউ মোড় থেকে এক মহামিছিল বের হয়। মিছিল ৮কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে সমাবেশে এসে মেশে। জিতপুর মোড় থেকে মিছিলে পা মেলান সেলিমও। সমাবেশে তিনি বলেন, দেশ ও রাজ্যের শাসক বিজেপি এবং তৃণমূল আলাদা কিছু নয়। বাংলাতে দিদির লুট চলছে। আর দেশকে লুট করছেন মোদী। পেট্রোল ডিজেল গ্যাসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মোদীজীর জমানা শুরুর সময় গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪২০ টাকা। আর এখন? প্রায় ৩ গুন বেড়ে গেছে। জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের কেনার ক্ষমতার বাইরে। কোনও তাপ উত্তাপ আছে? দুর্নীতিগ্রস্ত দল তৃণমূল নিজেদের বাঁচাতেই মরিয়া। কালীঘাটের টালির নিচে কতটাকা লোকানো আছে খোঁজায় আগ্রহ নেই, বিজেপি কেবল কুতুবমিনারের নিচে, তাজমহলের নিচে কী আছে সেই প্রশ্ন তুলে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। দুই শাসকের হাতে মানুষের জীবন নিরাপদ নয়। দেশকে বাঁচাতে, রাজ্যকে বাঁচাতে হলে লাল ঝান্ডাই একমাত্র ভরসা।
তিনি বলেন, এই রাজ্যে বিজেপি’কে এনেছে তৃণমুল। আরএসএস’র গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া তৃণমূল রাজ্যকে এলোমেলো করে দিয়ে লুটেপুটে খাওয়ার পাশাপাশি বিজেপি’র প্রবেশের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। আরএসএস তাই মমতা ব্যানার্জিকে দুর্গা বলে প্রচার করেছিল। এরা সবাই জোট বেঁধেছিল লাল ঝান্ডাকে হটাতে। মমতা ব্যানার্জিও নিদান দিয়েছিলেন মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখতে। কিন্তু এখন মানুষ লাল ঝান্ডা হাতে জাগতে শুরু করেছেন, মানুষের কথাকে তিনি ভয় পাচ্ছেন।
সেলিম আরও জানান, মমতা ব্যানার্জি ফেঁসে গেলে কোনও পুলিশ অফিসার, কোনও বিডিও অথবা ডিএম কাউকে চিনবে না। হিঙ্গলগঞ্জে মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ দেখেছেন! মুখ্যমন্ত্রীকে কেন কম্বল বিলি করতে হবে? ওটা তো পঞ্চায়েতের কাজ!
সমাবেশ ও মিছিলে বিরোধী শিবির ছেড়ে পুনরায় লাল ঝান্ডা হাতে তুলে নেওয়া ব্যাপক অংশের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষদের লাল সেলাম জানিয়েছেন তিনি। সমাবেশ দু’টিতে উপস্থিত ছিলেন অলকেশ দাস, এস এম সাদী, সুকুমার চক্রবর্তী সহ সিপিআই(এম)’র নেতৃবৃন্দ।
Comments :0