Md Salim

দুই শাসকের ছক নিয়ে সতর্ক করলেন সেলিম

রাজ্য

রাজ্যের সব অংশের মানুষ যখন আরজি করের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছেন তখন বিজেপি এবং তৃণমূল মিলে আবার মেরুকরণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলে সতর্ক করলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি থেকে দিনবদলের কথা বলতে রাস্তায় নেমেছেন সমাজের সব অংশের মানুষ। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী থেকে নানা পেশার মানুষ নিজের নিজের মতো করে একই কথা বলছেন, ন্যায়বিচার চাইছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে বিজেপি আর তৃণমূল মিলিতভাবে আবার ভেঙে যাওয়া বাইনারি ফিরিয়ে আনতে নবান্নের কর্মসূচি প্রচার করছে। 
তৃণমূলের পক্ষ থেকে ভিডিও প্রচার করে বলা হয়েছে, ‘‘মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানে লাশ চাইছে বিজেপি’’। সেলিমের প্রশ্ন, ‘জাস্টিস’ চাইছেন মানুষ, ‘রাত দখল’ করতে চাইছেন মেয়েরা। গানে কবিতায় স্লোগান পেন্টিং পোস্টারে দাবি তুলছেন মানুষ। এর মধ্যে লাশের কথা কোথা থেকে এল? লাশের রাজনীতি নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী আর তার বাবা শিশির অধিকারী করেছিলেন মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে, লাশের রাজনীতি হলো মমতা ব্যানার্জির চিন্তাধারা (মমতা স্কুল অব থট)। শুভেন্দু এখন বিজেপি’তে বসে সেটা করেই মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছেন।
জনগণের প্রতিবাদী চেতনার অভিনব জাগরণকে ‘নর্দমার রাজনীতি’তে নামিয়ে আনার চেষ্টার জন্য তৃণমূল এবং বিজেপি’র দিকে আঙুল তুলে সেলিম বলেছেন, আমরা যারা খুন-ধর্ষণ-অপরাধের বিরোধী তারা অভিষেক ব্যানার্জির শিশুকন্যাকে ধর্ষণের হুমকিরও তীব্র নিন্দা করি। তৃণমূলের ‘ডার্টি ট্যুইট ডিপার্টমেন্ট’ শুধু ধর্ষণের হুমকির প্রচার করলে হবে না, এফআইআর দায়ের করে দোষীদের ধরতে হবে। কারণ এই ধর্ষণের রাজনীতি চাপিয়ে দিলে ভাইপো এবং তাঁর পরিবার তো নজিরবিহীন পুলিশ পাহারা নিয়ে নিরাপদেই থাকবেন, কিন্তু রাজ্যের সাধারণ পরিবারের মেয়েদের, বিশেষ করে প্রান্তিক পরিবারের মেয়েদের নিরাপত্তা কে দেবে? 
হিংসাত্মক রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে কেন সামনে আনা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় সব অংশের মানুষ প্রতিবাদে নেমেছেন, ঘটনার ধামাচাপা দিতে গিয়ে তৃণমূল মানুষের ঘৃণা কুড়োচ্ছে, আর বিজেপি তাদের জাত ধর্ম ভাষা খাবার পোশাক নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে হালে পানি পাচ্ছে না। আসল কথা হলো, নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দলের নয়, গোটা সমাজের দাবি শোনা যাচ্ছে ‘জাস্টিস’র স্লোগানে। এই দাবিতে স্বাভাবিক বামমনস্কতা আছে, সেই কারণেই ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ রাজনীতি করে আবার রাজনৈতিক বাইনারি চাপাতে নেমেছে বিজেপি আর তৃণমূল। মানুষ প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাইছে, ওরা এখনই ভোট হলে কে কটা সিট জিতবে তার হিসাব কষছে। 
তিনি বলেছেন, বিজেপি সক্রিয় হওয়াতে খুশি হয়েছে তৃণমূল। ওদের আন্দোলন এরা প্রচার করে দিচ্ছে। ‘ছাত্র সমাজ’ নামে কোনও সংগঠনের নাম এরাজ্যে কে কবে শুনেছে? ১৪ তারিখ মেয়েরা রাতের দখল নেওয়ার সময় কোথায় ছিল এরা? ছদ্মবেশী বিজেপি’র সংগঠন এখন তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতে নেমেছে। রাজ্যের সর্বত্র ব্লকে ব্লকে পাড়ায় পাড়ায় প্রতিবাদ চলছে, সেইসব থেকে নজর ঘোরাতে তৃণমূলই বিজেপি’র নবান্ন কর্মসূচির প্রচার ও স্পনসর করে দিচ্ছে। পুলিশের অফিসারদের দিয়ে এমন বিবৃতি দেওয়াচ্ছে যাতে বিজেপি’র কর্মসূচি প্রচার পায়। অপরাধীদের ধরার বদলে পুলিশের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রচার করা।
বিজেপি’র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেলিম বলেছেন, হাসপাতালে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় সারা দেশের ডাক্তার নার্সরা প্রতিবাদ করেছেন। কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোন কথা বলেছেন? মোদী মণিপুর নিয়েও চুপ ছিলেন, এখনও চুপ। মুখ্যমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রীর চিঠি চালাচালি, ফোনালাপ, একান্ত বৈঠক এসব অনেক হয়েছে। ধর্ষণ রুখতে, মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য কোনও নতুন আইনের দরকার নেই, যে আইন আছে সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সবার আগে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। 
আইনের শাসন যে পশ্চিমবঙ্গে নেই আর জি কর হাসপাতালের ধর্ষণ করে খুন এবং তারপরে ধামাচাপা দেওয়ার একের পর এক ঘটনাবলিকে তারই প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরে সেলিম বলেছেন, ক্রমশ প্রকাশ্যে আসা ভিডিও’তে দেখা যাচ্ছে সেমিনার রুমে প্রভাবশালী সন্দীপ ঘোষ, তাঁর বাউন্সার উকিল এবং বিশাল সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে হাজির রয়েছেন। যে ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গে কর্ডন করে ফরেনসিক টিমের কাজ করার কথা ছিল, কুকুর নিয়ে তদন্ত করার কথা ছিল, সেখানে বাবা-মা’কে মেয়ের মরদেহ না দেখিয়ে অপেক্ষায় রেখে ওঁরা ঘটনাস্থলে কী করছিলেন?
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের সেমিনার রুম ভাঙচুরের টেন্ডার কে কাকে দিয়েছিল? ভাঙার চেষ্টা রোখার পরেই ওয়েবসাইটের টেন্ডার লিস্ট যাতে দেখা না যায় তার জন্য কার নির্দেশে লক করে দেওয়া হয়েছিল? যে ডাক্তার আর জি করে অনিয়ম নিয়ে একবছর আগেই অভিযোগ করেছিলেন, অভিযোগের তদন্ত না করে কেন তাঁকেই বদলি করা হয়েছিল? আসলে আরজি করে দুষ্কৃতী দুর্নীতির চক্র চালানো হচ্ছিল তৃণমূলের ডাক্তারদের প্রভাবশালী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র মাধ্যমে।

Comments :0

Login to leave a comment