যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরে নতুন করে গাজা ভূখণ্ডে তাণ্ডব চালাচ্ছে ইজরায়েলের যুদ্ধবিমান। হাসপাতাল উপচে পড়ছে মৃতদেহের ভিড়ে। গাজা প্রশাসন জানাচ্ছে, অবস্থা ভয়াবহ। ইজরায়েলী বাহিনী বিমান হানার পাশাপাশি হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ধ্বংস করে দিয়ে যাচ্ছে। অকেজো করে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে চিকিৎসক কিংবা চিকিৎসাকর্মী- দেখতে পেলেই ছুটে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ৮০০’র বেশি সাধারণ মানুষ।
গাজা’র স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখনও অবধি ১৫ হাজার ৮৯৯ জন প্যালেস্তিনীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। ইজরায়েলের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, হামাসের হামলায় প্রাণ গিয়েছে ১২০০ ইজরায়েলীর।
অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদ্রা আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘‘ইজরায়েলী দখলদার বাহিনী ইচ্ছাকৃত ভাবে হাসপাতালে আক্রমণ করছে। ইজরায়েল সর্বত ভাবে চেষ্টা করছে, যাতে গাজায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলে কিছু না থাকে।’’
আল-কুদ্রার কথায়, ‘‘ইজরায়েলের এই নীতির ফলে গাজায় এক অন্তহীন মৃত্যুর আবর্ত তৈরি হয়েছে।’’
গাজা প্রশাসন জানাচ্ছে, ভূখণ্ডের ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৯টি এখনও পরিষেবা চালু রাখতে সফল হয়েছে। সেই ৯টির মধ্যে একটি, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল জ্বালানীর অভাবে আর কয়েক ঘন্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে।
গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুনীর আল-বুর্শ জানিয়েছেন, ‘‘হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালে এখনও পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু মৃতদেহের বিপুল চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীরা।’’
মুনীর আল-বুর্শ আরও জানাচ্ছেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালগুলো চাইলেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছে না। বোমা ছোঁড়ার পাশাপাশি ইজরায়েলী সেনা হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপতি নষ্ট করে দিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্সকে নিশানা করে গুলি চালাচ্ছে ইজরায়েলী বাহিনী।’’
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের কাছে একাধিক ত্রাণ শিবিরে ইজরায়েল বিমান হানা চালিয়েছে। আল-আহলি আরব হাসপাতালের কাছে সালাহ আদ-দিন স্কুলে বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেও হামলা চালানো হয়েছে।
আল-জাজিরা জানাচ্ছে, গাজায় আহতের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। কিন্তু তারমধ্যে মাত্র ৪০০ জনকে চিকিৎসার জন্য রাফা সীমান্ত পেরিয়ে মিশরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকিরা ভূখণ্ডের মধ্যে চিকিৎসাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।
আল-জাজিরা একটি ভিডিও শেয়ার করে জানিয়েছে, গাজার হাইকোর্ট ভবনকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েলী বাহিনী। একইসঙ্গে গাজা শহরের পূর্বদিকে, সুজাইয়া অঞ্চলে ৫০টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। একাধিক প্যালেস্তিনীয় সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, সুজাইয়া গণহত্যায় কয়েক’শো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজা প্রশাসনের তরফে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজা ভূখণ্ডে ৬০ শতাংশ বাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। সংখ্যার হিসেবে ৩ লক্ষেরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে ৭ অক্টোবর থেকে চলা হামলায়। এর পাশাপাশি ১৬৭টি ধর্মীয় স্থান, ১১টি বেকারি, স্কুল-কলেজ মিলিয়ে ৩৩৯টি শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে ইজরায়েলের হামলায়। গাজা ভূখণ্ডের মোট জনসংখ্যা ২৩ লক্ষ। এর ৪৭ শতাংশ শিশু। সেই বিপুল জনসংখ্যার ১৭ লক্ষ মানুষ এই মুহূর্তে ত্রাণ শিবিরে বাস করছেন।
গাজা’র পাশাপাশি ওয়েস্ট ব্যাঙ্কেও ইজরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের কালান্দিয়া ত্রাণ শিবিরে ৪০টি সাঁজোয়া গাড়ি এবং ৪টি বুলডোজার নিয়ে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। গুলিও চালিয়েছে তারা। এই ঘটনায় এক যুবক নিহত, এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন।
Comments :0