একবুক আশা নিয়ে ভুবনেশ্বর গিয়েছিলেন লাল হলুদ সমর্থকরা। সার্থকতা পেল তাঁদের স্বপ্ন। এতগুলো বছর ধরে তাঁরা অপেক্ষা করেছেন শুধু আজকের দিনটার জন্যই। দীর্ঘ একটা সময়, তবু আশায় বুক বেঁধেছেন লাল হলুদ সমর্থকরা। হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো তাঁদের সবার মুখে হাসি ফোটালেন সেই কার্লেস কুয়াদ্রাত। অদম্য জেদ এবং লক্ষ্যে অবিচল একটা দলের ঐতিহাসিক জয়। মনোবল বৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার এবং দেওয়ালে পিঠ থেকে যাওয়ার পর লড়াই করে ফিরে আসার এক কাহিনী। রবিবার কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে, সুপার কাপের ফাইনালে ওড়িশা এফসিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল ইস্টবেঙ্গল।
এদিনের ফাইনালকে বলাই যায়-‘ফাইনালের মত ফাইনাল।’ নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ম্যাচের ফলাফল ২-২। ২দলই পেয়েছে ১টি করে পেনাল্টি। দুই দলের একজন করে খেলোয়াড় দেখেছেন লাল কার্ড। সেই সমানে সমানে টক্কর শেষে টুর্নামেন্ট জিতল ইস্টবেঙ্গল। একইসঙ্গে মিলল আগামী মরশুমে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার ছাড়পত্র।
ম্যাচের শুরু থেকেই ছিল তুল্যমূল্য লড়াই। দুই দলই জয়ের জন্য মুখিয়ে ছিল। আক্রমণ এবং প্রতি আক্রমণে খেলা বেশ জমে ওঠে। যদিও ম্যাচের প্রথম কোয়ার্টারে কোনও গোল হয়নি। তবে ওড়িশার হয়ে প্রথম থেকেই দিয়েগো, জাহু, জেরি এবং রয় কৃষ্ণ বেশ সচল ছিলেন। বলা ভালো ব্যস্ত রেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণভাগকে।
অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে হিজাজি মাহের, শৌভিক চক্রবর্তী, বোরহা, ক্লেইটন সিলভা, নন্দকুমার এবং সিভেরিও যথেষ্ট ভালো ফুটবল উপহার দেন। মাঝমাঠের দখল নেওয়ার চেষ্টা করে দুই দলই। কিন্তু ম্যাচের প্রথম ডেডলক ভাঙে ওড়িশা। খেলার ৩৮ মিনিটে, দিয়েগোর গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় তাঁরা। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ ফলাফল নিয়েই।
বিরতিতে ড্রেসিংরুমে কার্লোস কুয়াদ্রাতের পেপটক কাজে আসে। দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ মিনিটে, নন্দকুমারের গোলে সমতা ফেরায় লাল হলুদ ব্রিগেড। তবে সেখানেই শেষ নয়। ম্যাচের ৬২ মিনিটে, পেনাল্টি পায় ইস্টবেঙ্গল। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে লাল হলুদকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন সল ক্রেসপো। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি পায় ওড়িশা এফসি। সেইখান থেকে গোল করে ওড়িশার হয়ে সমতা ফেরান জাহু। ম্যাচের ফলাফল গিয়ে দাঁড়ায় ২-২।
এই ম্যাচে রেফারি দুবার লাল কার্ড বের করেন। ওড়িশার হয়ে লাল কার্ড দেখেন মৌরতাদা ফল এবং ইস্টবেঙ্গলের হয়ে লাল কার্ড দেখেন শৌভিক চক্রবর্তী। শেষপর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তবে দুটি দলের গোলরক্ষকদের প্রশংসা না করলেই নয়। ওড়িশা এফসির গোলকিপার রালতে এবং ইস্টবেঙ্গলের প্রভসুখান সিং গিল, দুজনই দুর্দান্ত কিছু সেভ করেন।
তবে নাটকীয়তার তখনও হয়ত কিছু বাকি ছিল। বলা যেতে পারে, অদম্য জেদে ইস্টবেঙ্গলের ফিরে আসা। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে লাল হলুদ অধিনায়ক ক্লেইটন সিলভার দুরন্ত শটে ৩-২ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। সঙ্গে সঙ্গে কলিঙ্গ স্টেডিয়ামের গ্যালারি জুড়ে শুরু গর্জন। কারণ, মাঠের পাশাপাশি গ্যালারিরও দখল নিয়েছে লাল হলুদ ব্রিগেড।
এদিন ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন লাল হলুদের সল ক্রেসপো। টুর্নামেন্টের ৫ ম্যাচে ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার শিরোপা জিতলেন ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক ক্লেইটন সিলভা।
Comments :0