Jyotipriyo Mallick

রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক

রাজ্য

 

গ্রেপ্তার রাজ্যের আরো এক মন্ত্রী। এবার রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হল রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। প্রায় ২১ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার রাত ৩ টে ২০ মিনিট নাগাদ রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। তাঁকে তাঁর বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা।

বৃহস্পতিবার খুব সকালে সল্টলেকের বিসি ব্লকে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে ইডি'র হানা। রেশন দুর্নীতি তদন্তে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বনমন্ত্রী বাড়িতে তল্লাশি। রেশন দুর্নীতির তদন্তে ৫৫ ঘণ্টা তল্লাশি ও জেরা শেষে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট গত ১০ অক্টোবর গ্রেপ্তার করেছে তৃণমূলের এক দাপুটে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চালকলের মালিক বাকিবুর রহমানকে। জেরার পরেই উঠে এসেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। উঠে এসেছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম।
বৃহস্পতিবার সাত সকালে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সল্টলেকের বিসি ২৪৪ ও বিসি ২৪৫ নম্বর বাড়িতে হানা দেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। ইডি'র একটি সূত্রে জানা গেছে রেশন দুর্নীতির উৎস খুঁজে পেতেই  বিভিন্ন জায়গায় বৃহস্পতিবার সকাল তল্লাশি অভিযান।

এদিন শুধু রাজ্যের বনমন্ত্রী বাড়ি নয় ও তাঁর আপ্তসহায়ক অমিত দের দুটি ফ্লাটে হানা দেয় ইডি'র আধিকারিকরা। নাগেরবাজারের ভগবতী পার্ক এলাকায় এবং স্বামী বিবেকানন্দ রোড এলাকায় ফ্ল্যাটে এদিন হানা দেয় ইডি। 
রেশন দুর্নীতির তদন্তে এদিন সকাল থেকেই আটটি জায়গায় তল্লাশি অভিযানে নেমেছেন ইডির আধিকারিকেরা।


এর আগে বনমন্ত্রী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বাকিবুর রহমানের কৈখালির বাড়িতে লাগাতার তল্লাশি চালাচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। প্রায় ৫৫ ঘণ্টা তল্লাশি ও জেরা শেষে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা গ্রেপ্তার করেন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ চালকলের মালিককে। কৈখালিতে এক অভিজাত আবাসনে বাকিবুরের ফ্ল্যাট। একাধিক চালকলের মালিক। আছে হোটেলও। চালকলের মাধ্যমে বিপুল টাকা অন্যত্র সরানোর অভিযোগও রয়েছে। 
বাকিবুরের গ্রেপ্তারের পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যদিও দাবি করেন , ‘‘কে বাকিবুর, আমি চিনিই না। অনেক লোকই তো আমার ঘনিষ্ঠ। রথীন ঘোষও তো আমার ঘনিষ্ঠ।’’ 
২০১১ থেকে ২০২১— রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ২০২১-এ জ্যোতিপ্রিয়কে অন্য দপ্তরে পাঠিয়ে রথীন ঘোষকে খাদ্যমন্ত্রী করেন মমতা ব্যানার্জি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে ‘পিডিএস অডিট’ হয়নি বলেই অভিযোগ ওঠে। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছর থেকে রাজ্যের রেশন নিয়ে কোনও হিসাবই হয়নি। খতিয়ে দেখা হয়নি সব লেনদেন, টাকার আদান প্রদান আদৌ নিয়মমাফিক ছিল কিনা। একে বলা হয় ‘পিডিএস অডিট।’ 
পরপর ৬ বছর রাজ্যে রেশন ব্যবস্থা সংক্রান্ত ওই অডিট না হওয়ার অভিযোগ ওঠে। রেশন দোকানগুলিতে চাল, আটা সহ নানা পণ্য প্রতি সপ্তাহে সরবরাহের দায়িত্ব রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের। এছাড়া এই দপ্তরের মাধ্যমে ধান, চাল সংগ্রহের কাজও হয়। 
জানা গিয়েছে লকডাউন পর্বেই এই দুর্নীতি সামনে আসে। নদীয়া জেলার একাধিক রেশন দোকানে নিম্নমানের চাল, গম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে অভিযোগও দায়ের হয় লকডাউন পর্বে। পরে এই তদন্ত যায় ইডি’র হাতে। যদিও সেই তদন্তও থমকে ছিল। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে চলতি সপ্তাহেই একাধিক পৌরসভার পাশাপাশি নদীয়ার বেশ কিছু রেশন দোকান ও চালকলে হানা দিয়েছিল ইডি। সেখান থেকেই মেলে নতুন তথ্য। তার ভিত্তিতেই  বাকিবুর রহমানের ফ্ল্যাটে চলে ম্যারাথন তল্লাশি।  
তদন্তকারী সংস্থার দাবি রেশন দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, বাকিবুর রহমান তাতে অন্যতম অভিযুক্ত। এই ব্যক্তিকে শিখণ্ডী করেই দুর্নীতির জাল ছড়ানো হয়েছিল। তাতে শাসক তৃণমূলের শীর্ষ মহলের মদত ছিল।

প্রায় ২১ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর রেশ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় রাজ্যের বনমন্ত্রীকে।

Comments :0

Login to leave a comment